তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শিশু অপহরণের ১৯ ঘন্টার মধ্যেই অপহৃত তিন বছরের শিশু মাহবুব ইসলাম মাহিনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত বুধবার সাড়ে ৯ টার দিকে জুড়ি উপজেলার কাপনা পাহাড় এলাকায় একটি দোকান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। অপহরণকারীরা ওই দোকানেই তাকে কৌশলে রেখে সটকে পড়ে। ওইদিন রাত ১১টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায়।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানার ওসি তদন্ত আমিনুল ইসলাম পুলিশ ফোর্স নিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। রাতেই উদ্ধার হওয়া শিশুকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
ওসি বলেন, এ ঘটনায় বুধবার শিশু মাহিনের চাচা টিলাগাঁও ইউনিয়নের সন্ধ্যাবাগ গ্রামের মৃত ছইদ উল্যার ছেলে লোকমান মিয়া বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।ওই মামলায় জুড়ি উপজেলার সাগরনাল গ্রামের রইছ মিয়ার ছেলে মাজেদ আহমদ মজনুর নামোল্লেখ করে আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের কৌলা গ্রামে টিনের ঘরের সিঁধ কেটে মায়ের পাশ থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় শিশু মাহবুব ইসলাম মাহিন অপহৃত হয়। ওই শিশু মাহিন তার মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে ছিল। সে উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী মর্তুজ আলীর ছেলে।
সিঁধ কেটে ঘর থেকে শিশু অপহরণের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শিশুটির মাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেইসঙ্গে শিশুটিকে উদ্ধারে দ্রুত অভিযানে নামে পুলিশ।
পুলিশ ও অপহৃত শিশুর পরিবার বলছে, শিশু মাহিনের বাবা মর্তুজ আলী আরব আমিরাত প্রবাসী। মাহিন তার মা লিজা বেগমের সঙ্গে উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের কৌলা গ্রামে নানা আকবর মিয়ার বাড়িতে থাকে। মঙ্গলবার রাতে মা লিজার সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল সে। এ সময় ঘরের অন্য সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ঘরের পেছনে টিনের বেড়ার নিচের মাটি খুঁড়ে কে বা কারা পাশের ঘরে খাটের নিচ দিয়ে প্রবেশ করে। এ সময় মাহিনকে ঘুমন্ত অবস্থায় খাট থেকে তুলে নিয়ে চলে যায়।
নিখোঁজ মাহিনের নানি রোসনা বেগম বলেন, জন্মের পর থেকে আমার নাতিসহ মেয়ে আমাদের বাড়িতে থাকে। আমার মেয়েজামাই দুবাইপ্রবাসী। আমরা সবাই রাতে ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ আমার মেয়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার নাতি মাহিন নেই। তখন আমার স্বামী-সন্তানসহ ঘর থেকে বের হয়ে দেখি দুজন লোক কোলে করে মাহিনকে নিয়ে দৌড়ে সিএনজি অটোরিকশায় উঠছে। তখন আমাদের চিৎকারে আশপাশের বাড়ির লোকজন বের হয়ে ওই গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু দ্রুত গাড়িটি চলে যায়।
ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন জানান, ঘটনাটি তাদের নিজেদের আত্মীয়ের মধ্যে কেউ ঘটিয়েছে। বিষয়টি তাদের পারিবারিক হতে পারে।
যদিও রোসনা বেগম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের বিরোধ ছিল। তাঁর ছেলে মজনু সোমবার আমার বাড়িতে আসে। আমাদের ধারণা মজনু এ ঘটনা ঘটিয়েছে। মজনুর বাড়ি জুড়ী উপজেলার সাগরনালে।
নিখোঁজ মাহিনের নানা আকবর মিয়া বলেন, ঘটনার পর পুলিশকে খবর দিলে তারা আমার বাড়িতে গিয়ে দেখেছে। আমার মেয়ে লিজাসহ থানায় গিয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের আত্মীয় মজনু ঘটনাটি ঘটিয়েছে।