ইউরোপীয় ফুটবলের একমাত্র ‘সোপ অপেরা’টির অবসান হলেও সন্দেহ নেই লিওনেল মেসির সামনের দিনগুলো হবে কণ্টকাকীর্ণ। কেননা, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মেসি বার্সেলোনায় থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ক্লাবের বর্তমান নেতৃত্বকেও দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা না থাকার জন্য দুষেছেন। এছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সমর্থকেরাও আর আগের মতো তার পেছনে থাকবে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে।
লিওনেল মেসি গত শুক্রবার রাতে গোলডটকমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে নিজের থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি জানান। তিনি একই সঙ্গে চাঁছাছোলাভাবে বার্সেলোনার বর্তমান পরিস্থিতিও তুলে ধরেছেন। তাতে আর্জেন্টাইনটির এক নম্বর শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন ক্লাব সভাপতি হোসে মারিয়া বার্তেম্যু।
অবশ্য আগামী মার্চে কাতালান ক্লাবটিতে সভাপতি পদে নির্বাচন হবে। ইতিমধ্যে বার্তেম্যুর বিপক্ষরা তার জন্য ছুরিতে শাণ দিচ্ছে। মেসি নিজেও পরিষ্কার, তাকে লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘সত্যটা হলো, সেখানে (ক্লাব ব্যবস্থাপনায়) কোনো ভবিষ্যত্ কর্মপন্থা নেই কিংবা এমন কিছু, যা দীর্ঘ মেয়াদের। তারা কিছু একটা হলেই পরিস্থিতি বিচার করে সমাধান করে।’
বার্সেলোনা অধিনায়ক জানিয়েছেন, এ কারণেই তিনি নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে ক্লাব বদল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ক্লাবের পক্ষেই তাকে নেওয়ার জন্য বার্সেলোনার দেওয়া ৭০ কোটি ইউরোর শর্ত মানা ‘অসম্ভব’ ছিল।
যদিও মেসি মনে করেন, তার সঙ্গে যে চুক্তি আছে, সে অনুযায়ী তিনি মুক্ত খেলোয়াড় হিসেবে চলে যেতে পারতেন। কিন্তু ক্লাব তা না মানায় এ বিষয়ের ফয়সালায় মেসিকে আদালতে যেতে হতো। এক্ষেত্রে মেসি সমস্যা নিরসনে তার ‘ভালোবাসার ক্লাব’টিকে আদালতে তুলতে চান না বলে জানিয়ে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণেই অনিচ্ছুক এবং অনেকটা নিরুপায় হয়েই বার্সেলোনায় থেকে যাচ্ছেন বলে গোল ডটকমকে জানান মেসি। এছাড়া ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী ৩৩ বছরের মেসি জানান, ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছা প্রথমে পরিবারকে জানালেও তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল বিরূপ। কাঁদতেই শুরু করেছিল পুরো পরিবার। স্ত্রী শেষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকলেও পুত্র বার্সেলোনা ছেড়ে যেতে চায়নি।
নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে মেসি আরো বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আর নিশ্চিতও ছিলাম যে আমি দল ছাড়তে পারব মুক্ত খেলোয়াড় হিসেবেই। সভাপতি সব সময়ই বলেছেন যে আমি মৌসুম শেষে চাইলেই ক্লাব ছাড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারব। কিন্তু তিনি কথা রাখেননি।’
এরকম পরিস্থিতিতে মেসি কাতালান ক্লাবটিতে থেকে গেলেও সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন যে সমর্থকেরাও আর আগের মতো তার পেছনে হয়তো থাকবে না। গত কিছুদিনে মেসির সমালোচকদের সংখ্যাও বেড়েছে। স্পানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কাডটকম জানায়, সামনের দিনগুলোতে মেসির বাজে পারফর্ম্যান্স খারাপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। তখন আগের মর্যাদা পাবেন না এই সুপারস্টার।
সাজঘরেও বদলে যেতে পারে পরিস্থিতি। কেননা, অধিনায়ক থেকে গেলেও তার দলসঙ্গী ও সেরা বন্ধুদের কেউ কেউ চলে যাবেন বলেই মনে হচ্ছে। এদের মধ্যে সবার আগে নাম আছে লুই সুয়ারেজের। এছাড়া চলে যেতে পারেন আর্তুরো ভিডাল। মেসি ঘনিষ্ঠদের মধ্যে থেকে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে জর্ডি আলবা ও সার্জিও বাসকোয়েটসের নাম।
পরিস্থিতি আরো কঠিন করে তোলার জন্য আছেন স্বয়ং কোচ রোনাল্ড কোম্যান। ডাচ এই কোচ একসময় নিজেও খেলেছেন বার্সেলোনায় এবং কঠিন মানুষ হিসেবে ইতিমধ্যে জানান দিয়েছেন।ইত্তেফাক