বাসায় ফিরছিলাম, একজনকে সালাম দিয়ে কেমন আছেন জিগ্যেস করতেই বললো, কি ব্যপার! আপনাদের আওয়ামী লীগের সবাই দেখি মরে যাচ্ছে। আমি বললাম, শুধু আওয়ামী লীগের নয় অনেকেই মারা যাচ্ছে। তিনি আবার বললেন, সাঈদি সাহেবের বড়দোয়া লেগেছে মনেহয়। আমি বললাম, সাঈদি কি এমন মানুষ হলো যার দোয়ায় অন্যরা মারা যাবে! এতদিন দেখা হলেই আওয়ামী লোগের প্রশংসা করতো, নানা কাজের ফিরিস্থি দিত। এখন আসল রূপটি প্রকাশ করে ফেলেছে। এমন অনেকেই আছে যারা সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগের দোষ খুঁজে, সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখি অনেকেই করোনাকে আওয়ামী লীগের অপরাধ বলে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন। “সাঈদি সাব “ বলায় তার রাজনৈতিক বিশ্বাসটিও পরিস্কার বুঝেছি। এটা শুধু বিদেশে নয় দেশের অভ্যান্তরেও অনেকেই এখন এভাবেই বলার চেষ্টা করছেন। করোনা সংক্রমিত হওয়ার পর থেকেই প্রবাসে চক্রান্ত চলছে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচার করার। মাঝে মাঝে কারো মিথ্যা মৃত্যু সংবাদ প্রচার করতেও ছাড়েনি তারা। জামাত- শিবির আর বি এন পি র কিছু নেতাকর্মী পরিকল্পিতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিত সৃষ্টি করতে চায়। মানূষকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে আন্দোলনের ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে চায়। নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রবাস থেকে দলের নেতারা। অর্থ সংগ্রহ করছে বিভিন্ন দেশথেকে। কোভিড-১৯ কে তাদের মোক্ষম সুযোগ হিসাবে বেছে নিয়েছে।
করোনা কোন স্বাভাবিক ভাইরাস নয়, এর কোন উপসর্গও নেই। সুরক্ষিত ঘরেও করোনা হানা দিয়েছে বিভিন্ন দেশে। মারা গেছেন অনেক গুরত্বপুর্ন ব্যক্তিবর্গ। অনেক দেশের মন্ত্রীরাও মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে, বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। যারা এই অদৃশ্য ভাইরাসকে রাজনৈতিক বলে আখ্যায়িত করতে চান তারা আসলে অসত্য বলে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। একই সংগে তারা নাগরিক দায়িত্বের অবহেলা করছেন।
জুন জুলাই মাসকে আগে থেকেই পিক বলে শতর্ক করা হয়েছিল। বাংলাদেশের সবকটি টেলিভিশন চ্যনেল প্রতিদিন স্বচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করেছে, সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। অনেকেই অগ্রাহ্য করে লুকিয়ে নিষেধ অমান্য করে বেড়িয়ে পরছেন নানা অযুহাতে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ঘরে পৌছে দেওয়ার ঘোষনা দিলেও গল্প সাজিয়ে বেড়িয়ে আসছেন জনসম্মুখে। ভিতি ছড়াচ্ছেন জনমনে, আক্রান্ত হচ্ছে নিত্যনতুন রোগী। করোনার কোন ঔষুধ নেই জেনেও মানূষ জীবনের ঝুকি নিচ্ছে “দেখি কি হয়” ভেবে। ফলে করোনা এখন দেশব্যাপি ছড়িয়ে পরেছে। এখন যতটা সংক্রমিত হয়েছে তা সেরে উঠতে বা চিকিৎসা দিতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। সংখ্যাটি বেড়ে গেলে আর কোন ব্যবস্থাই থাকবেনা। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মানুষের পক্ষে চিকিৎসা নেওয়ার সু্যোগ আরও কম। এখনো যদি দেশের মানূষ সচেতন না হয় তাহলে, আগামী দুই মাসে বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে তিনগুন হবে আর মৃতের সংখ্যাটিও হবে ভয়াবহ। আতঙ্কিত না হয়ে ঘরে বসেই যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তারা আরোগ্য লাভ করেছে অনেকে। হাসপাতালে ভেন্টিলেশনের অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাই গরম পানিতে লেবু আর রশুন মিশিয়ে ভেন্টিলেশন নিলে শঙ্কাটি কম থাকবে। বয়স্কদের নিরাপদ দুরত্বে রাখাই শ্রেয়। কানাডায় কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমুতি পেলেও ক্রেতাদের ভিড় নেই কোথায়ও। সরকার আরও দুমাসের জন্য সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছে। হাসপাতালেও কেবলমাত্র রোগী ছাড়া ইমার্জেন্সিতে ঢোকার অনুমুতি মিলছেনা। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চলছে কিন্তু, দুরত্ব বজায় রেখে এবং সীমিত যাত্রী নিয়ে। নিয়ম মেনে চলার কারনেই এখন সংক্রমনের সংখ্যাটি কিছুটা নিয়ন্ত্রনে।
বাংলাদেশ একটি ঘনবসতির দেশ। যেভাবে মানূষ এখনো নিয়ম অমান্য করে চলাচল করছে তাতে শীঘ্রই এর নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পরবে। নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব না হলে দুঃখজনকভাবে শুধু দুঃসংবাদই শুনতে হবে প্রতিদিন। অনেক স্বেচ্ছাসেবক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে মানূষ বাচাতে। মৃত লাশের সৎকার করার চেয়েও বেশী প্রয়োজন এখন সচেতনতা বৃদ্ধি। জোর করে বা পুলিশিং করে লোক ঘরে রাখার চেয়ে মানূষকে করোনার ভয়াবহতাটি বোঝাতে পারলে বেশী উপকার হবে। শিক্ষিত মানুষেরও উচিৎ হবে নিজ নিজ এলাকায়, মহল্লায় সচেতনতার উদ্দোগ নেওয়া। এই উদ্দোগ মানূষের মনে ভীতির সৃষ্টি হবে এবং মানূষ সচেতন হবে। মানূষ সচেতন হলে সংক্রমনের সাথে সাথে মৃতের সংখ্যাটিও কমে আসবে। তবে করোনা ভাইরাস খুব শীঘ্রই পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে মনে হয়না। আমাদেরকে করোনা মোকাবেলা করার সাহস নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
১৭ই জুন ২০২০