চলতি অর্থবছরের শুরুতেই দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে কমেছে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ ছাড়ের পরিমাণ। ব্যাংক এসোসিয়েশন কর্তৃক সুদ হার নির্ধারণ করে দেয়ার কারণেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, এমনটাই বলছেন অর্থনীতিবিদরা। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কোনভাবেই এমন সিদ্ধান্তের সুফল মিলবে না। উল্টো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা হারিয়ে অর্থ সংকট আরো বাড়বে বলে মনে করেন তারা। বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সহজভাবে একটু ঘুড়িয়ে বললে ভুল হবে না যে, টাকা কেনা-বেচার জন্য বড় মার্কেট দেশের ব্যাংকিং খাত। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ব্যাংক রয়েছে ৪৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মেয়াদে ও সুদহারে নিজেদের অর্থ সাময়িকভাবে বিক্রি বা আমানত জমা রাখেন সাধারণ মানুষ। কিনে নেয়া টাকাগুলোই আবার গ্রাহকদের কাছে নির্দিষ্ট শর্তে বিক্রি বা ঋণ হিসেবে দেয় ব্যাংকগুলো। টাকা কেনা-বেচার এই সমতায় হেরফের হলেই সৃষ্টি হয় উভয় দিকেই সংকট। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, ব্যাংকগুলোতে আমানত সংগ্রহের ধারাবাহিকতা বরাবরই ছিলো উর্ধমূখী। কিন্তু বর্তমানে জুনের চেয়ে জুলাই মাসে তা নিম্নমুখী। একই সময়ে ঋণ ছাড়ের পরিমাণও কমেছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। এজন্য অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের মতামতে ব্যাংক ব্যাংক এসোসিয়েশনের দেয়া সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেল তারা বললো আমানতের হার ৬ শতাংশের বেশি করা যাবে না। সরকারি ভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে সঞ্চয়ে সুদের হার কমে যাবে। আমানত কমবে এটাইতো স্বাভাবিক।’ এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন বেঁধে দেয়া সুদের হার বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন কর্মসূচী নয়। ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকগুলো তারা তাদের চিন্তা চেতনা করে রেখেছে । আমাদের এমন কোন বাধ্য বাধকতা ছিলো না যে তাদের আমরা বলিনি যে তোমাদের এই শতাংশের মধ্যেই দিতে হবে। এটা বহু আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক ছেড়ে দিয়েছে। ‘ এদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো বেধে দেয়া সুদহার না মানায় আমানত বেরিয়ে গেছে সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে। এখন পর্যন্ত সরকারি চারটি ব্যাংক আমানত হারিয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঢালাওভাবে ব্যাংক এসোসিয়েশন ৬-৯ সুদ হারের সিদ্ধান্ত কোনভাবেই দিতে পারে না মন্তব্য করে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ আহমেদ বলছেন, সাধারণ গ্রাহকরা বাধ্য হয়েই ভিন্ন পথ অবলম্বন করছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকও এই রেট নির্ধারণ করতে পারে না। দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত মানুষদের সম্পদ হলো টাকা। তারা ভাবছে আমার টাকা কমে যাচ্ছে। তাহলে কেন রাখবো।’ গত জুন মাসে আমানত সংগ্রহে ৬ ও ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার নির্ধারণ করে বিএবি। এতে ব্যাংকগুলোতে অর্থ মন্দা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা