মোঃ সদরুল কাদির (শাওন), সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:: সাতক্ষীরা সদর-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি সাথে আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যে দিয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দের সাথে দ্বন্দ্ব ও ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটেছে। রবিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে শহীদ আলাউদ্দিন মিলনায়তনে জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দের সাথে সদর এমপির দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে। সাথে ‘অতীত পেছনে থাক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাও’ এই প্রত্যাশা নিয়ে শুরু হলো সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নবযাত্রা। নতুন উদ্যম নতুন লক্ষ্য ও নতুন আশা নিয়ে এক মিলন মেলার মধ্য দিয়ে শুরু হলো এই যাত্রা। ২৩ জুন মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিককে স্মারক রেখে শান্তি ও সহাবস্থানের বারতা নিয়ে এই নবযাত্রায় শরিক হলেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতৃবৃন্দ ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব।
পেছনের সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে নতুনের সন্ধানে যাত্রার এই শুভক্ষণে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে বসেছিল এক মিলন মেলা। এই মিলন মেলায় প্রাণ খুলে কথা বললেন অভ্যাগতরা। তারা আপন মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক। আমরা গণতন্ত্র ও উন্নয়নে বিশ্বা করি। আমরা সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে ঘৃণা করি। আমরা দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। আমরা বাংলাদেশের অগ্রগতি ও ভাগ্যোন্নয়নে আরও অবদান রাখতে চাই।
রবিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের শহিদ স.ম আলাউদ্দিন মিলনায়তনে বসেছিল এ মিলন মেলা। তীব্র দাবদাহে ঘর্মক্লান্ত হয়েও অতিথিরা জনগনের অভিনন্দন ও ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ওঠেন। এ সময় তারা আপন মনের কোণে লুকিয়ে থাকা সব কথা জনসমক্ষে তুলে ধরে বলেন আমরা এখন থেকে এক ও অভিন্ন পথের পথিক। আমরা গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য কাজ করি। আমরা উন্নয়ন ধারাকে এগিয়ে নিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই। আমরা কাজ করতে চাই সাতক্ষীরাকে অর্থনৈতিক জোন তৈরি করতে। সাতক্ষীরায় রেল সংযোগ , বেনেরপোতা থেকে আশাশুনি পর্যন্ত দ্বিতীয় বাইপাস সড়ক নির্মান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ভোমরা স্থল বন্দরকে পূর্নাঙ্গ বন্দরে উন্নীতকরণ, অবকাঠামো নির্মান, সুন্দরবনে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনসহ অনেক কাজ এখনও বাকি উল্লেখ করে তারা বলেন আমরা এসব উন্নয়ন দাবি পূরণে কাজ করে যাবো। তারা বলেন আমরা ঐক্যে বিশ্বাস করি, অনৈক্যে নয়। আমরা মৈত্রী ও বন্ধুত্বে বিশ্বাস করি। আমরা উন্নয়নে বিশ্বাস করি। একটি আলোকিত সমাজ গঠনে আমরা এক সাথে কাজ করতে চাই। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাথে সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবির মধ্যে যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আজ তার অবসান ঘটে। পরস্পরের মধ্যে কোলাকুলি ও কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে তাদের মধ্যকার সেতুবন্ধন নতুন করে দৃঢ় হয়ে ওঠে। ভালবাসায় সিক্ত হয়ে তারা বলেন এই বন্ধন যেনো চিরস্থায়ী হয়। সমস্বরে তারা বলেন আমরা প্রীত, আমরা গর্বিত, আমরা সন্তুষ্ট , আমরা আনন্দিত।
মিলনমেলার প্রধান অতিথি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবেক সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা, ন্যায়নিষ্ঠতা, সঠিক দিক নির্দেশনা ও বিচক্ষণতার কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিষ্ময়। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে তিনি বলেন বাংলাদেশে এখন কিছু মানুষ আছে যারা এদেশকে ফের পাকিস্তান বানাতে চায়। তারা ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল, ২০০৪ এর ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যদের হত্যা করতে চেয়েছিল। সেদিন এসব বিষয়ে সংসদে কথা বলতে দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন শেখ হাসিনা বলেছেন তিনি নীল কন্ঠ। কারণ তিনি বিষ খেয়েও বিষ হজম করতে শিখেছেন।
ডা. রুহুল হক এমপি আরও বলেন বাংলাদেশ জঙ্গিবাদকে আমরা প্রতিহত করেছি। এখন মাদক ও সন্ত্রাসকে দুর করতে হবে। আমাদের ভুল ত্রুটি শুধরে নিয়ে একাগ্রচিত্তে কাজ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন আমরা সাতক্ষীরায় রেল সংযোগ আনতে চাই। বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চাই। জলাবদ্ধতা দুরীকরণ , সব নদী খাল খনন, ভোমরা বন্দর উন্নয়ন, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন এসবই আমাদের এজেন্ডা। আমরা ধারাবাহিকভাবে সরকারের সাথে আলাপ আলোচনা করে এসব উন্নয়ন কাঠামো বিনির্মান করতে চাই। তিনি বলেন সাতক্ষীরা খাদ্য শস্য ও সবজি উৎপাদন, মৎস্য উৎপাদনে এগিয়ে। জাতীয় উন্নয়নে সাতক্ষীরা অবদান রাখছে তা সত্ত্বেও সাতক্ষীরায় পর্যাপ্ত উন্নয়ন নেই উল্লেখ করে তিনি আমরা সাতক্ষীরার উন্নয়ন চাই। সাংবাদিকদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বিভেদ দুরীকরণে আপনারা প্রতিপক্ষকে ক্ষমা করে দিলে ভালো হয় এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন আমরা কোনো অন্যায়ের প্রশ্রয় দেবো না। আসুন সাতক্ষীরাকে গড়ি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সমাজ বিনির্মানে আসুন সবাই এগিয়ে যাই।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন আসুন অতীত ভুলে যাই। প্রেসক্লাবকে আরও বর্নাঢ্য করে তুলি। তিনি বলেন যা ইচ্ছা তাই রিপোর্ট করলে সমাজের শৃংখলা নষ্ট হয়। কারও ভুল থাকলে তা শুধরে দিতে হবে । এতে অপমানবোধের কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন আপনারা সত্য লিখুন। এক তরফা না লিখে প্রতিপক্ষের বক্তব্য নিন। তিনি বলেন আমার মনে ক্ষোভ দুঃখ আক্রোশ কিছুই নেই । আমি একজন মুক্তমনা মানুষ। মানুষকে ভালবাসি। নিজের ওপর আস্থা রাখি। সাংবাদিকদের সাথে আমার সেতুবন্ধন ছিল। এখন আছে। আগামিতেও থাকবে। সাংবাদিকদের লক্ষ্য এবং আমরা যারা রাজনীতি করি জনপ্রতিনিধিত্ব করি তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। আমরা এই অভিন্ন পথে চলতে চাই। তিনি বলেন মাদক জঙ্গি দমনে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি বলেই আমরা সবাই মিলে এই অপরাধকে চিরদিনের মতো বাংলাদেশ থেকে বিদায় দিতে চাই। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব শুধু সাংবাদিকদেরই বাড়ি নয় এটা আমারও বাড়ি। কারণ এই বাড়ির উন্নয়নে আমারও কম বেশি হাত রয়েছে। সুশীল সমাজের মানুষের যাতায়াত এই প্রেসক্লাবে। এখানে মানুষ আসে তার কথা বলতে । তার অভিযোগ জানাতে। সমস্যার কথা তুলে ধরতে। এজন্য জনগনের জন্য উন্মুক্ত দ্বার প্রেসক্লাবের। এই প্রেসক্লাবের সাথে যারা জড়িয়ে রয়েছেন এবং যারা প্রকৃত অর্থে সাংবাদিকতা করছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন সাতক্ষীরার সাংবাদিকদের অনেক সুনাম রয়েছে। এই সুনাম ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন প্রেসক্লাবের কোনো সদস্য যেনো কোনোভাবেই বঞ্চিত না হন সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রেসক্লাব গৃহীত ব্যবস্থা প্রত্যাহার করার সুপারিশ রেখে বলেন আমাদের সবার কথা শুনতে হয়। সবার জন্য কাজ করতে হয়। প্রেসক্লাবের সাথে যে অনাকাংখিত দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল তা আজ থেকে দুর হয়ে গেলো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন আমরা সাংবাদিকদের নিকটজন। তাদের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব ও নৈকট্য রয়েছে। আমাদের সাথে আপনাদের দ্বন্দ্ব থাকবে না। এক ও অভিন্ন পথে বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু বলেন আমরা সাতক্ষীরায় সাংবাদিকেদর মধ্যে ঐক্য দেখতে চাই। কোনো বিভেদ বিভাজন নয়।
মিলনমেলার সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ বলেন আমাদের কমিটমেন্ট ছিল প্রেস ও পলিটিক্যাল পার্টির মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ন পরিবেশ সৃষ্টির। সাংবাদিকদের সাথে যে অনাকাংখিত দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল তা দুর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আজ সেই শুভক্ষনে আমি গর্ব করে বলতে পারি সাংবাদিকরা সমাজের উন্নয়নে কাজ করছেন, আর আমরা একই কাজ করছি। একটি আলোকিত সমাজ গঠনে আমরা সবাই একই পথের যাত্রী। তিনি বলেন সাংবাদিকদের কিছু সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক সুপারিশ রাখছি। আশা করি এই সুপারিশের পর তাদের নিজেদের মধ্যে আর কোনো দ্বন্দ্ব থাকবে না।
মিলনের জন্য মেলায় আরও বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাধারন সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপী, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যনার্জি, দৈনিক দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নুর ইসলাম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, মানবজমিনের ইয়ারব হোসেন, মোহনা টিভির আবদুল জলিল প্রমূখ ।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ সাহিদউদ্দিন, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু সায়ীদ, সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ নুরুল হক, শেখ শহিদুল ইসলাম, শেখ হারুনার রশীদ, ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম, জেলা যুবলীগ আহবায়ক আব্দুল মান্নান, মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক জোৎস্না আরা, যুগ্ম সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি, জেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান প্রমূখ। মিলন মেলায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।