মোঃ সদরুল কাদির (শাওন):: সাতক্ষীরায় বানিজ্যিক ভাবে কুল চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। অল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে এর আবাদ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সাতক্ষীরার উৎপাদিত কুল যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এসব কুলের মধ্যে বাউকুল, আপেলকুল, নারকেলকুল, বিলাতিকুল, নাইনটি ও মিষ্টিকুল অন্যতম। দেশব্যাপী সাতক্ষীরার উৎপাদিত এসব কুুল ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দক্ষিন সোনাবাড়িয়া গ্রামের কুলচাষী রফিকুল ইসলাম জানান, গত ১০ বছর বছর যাবত তিনি বিভিন্ন প্রকার কুল চাষ করেন। চলতি মৌসুমেও ৩ বিঘা পরিমান জমিতে নারকেল ও আপেল কুল চাষ করেছেন।
তিনি বলেন, জমি নিজের হওয়াতে উৎপাদন খরচ তুলনামুলক অনেক কম। কুল গাছে ভিটামিন স্প্রে, সার ও পোকা দমন ঔষুধ ব্যবহারে তিন বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে কুল বিক্রি শুরু করেছেন।
তিনি আশা করছেন তিন বিঘা জমির কুল এবার কমপক্ষে ৪ লক্ষাধিক টাকা বিক্রি হবে। তিনি বলেন, গত বছর একই পরিমান জমিতে কুল উৎপাদন করে সমস্ত খরচ তুলেও ৩ লাখ টাকা লাভ হয়েছে তার।
একই গ্রামের তাহাজ্জত আলী বলেন, অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি প্রতি বছর কুল চাষ করেন। চলতি মৌসুমে ২ বিঘা ১৬ শতক পরিমান জমিতে নাইন্টি ও মিষ্টি কুল চাষ করেছেন। গত সপ্তাহ থেকে মিষ্টি কুল বিক্রি করছেন। চলতি মৌসুমে এপর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার টাকার কুল বিক্রি করেছেন।
তিনি বলেন, প্রতি মন কুল পাইকারী বিক্রি করছেন ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে। জেলার বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা তার থেকে কুল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় দেখা না দিলে আড়াই বিঘার দুই প্রজাতির কুল অন্তত ২ লাখ ৮০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন এই কুল চাষি। অন্যদিকে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকাতে মিষ্টিকুল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতে ৬২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার কুলের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৩০ হেক্টর, কলারোয়ায় ২১০ হেক্টর, তালায় ২০৫ হেক্টর, দেবহাটায় ১৫ হেক্টর, কালিগঞ্জে ২০ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৫ হেক্টর ও শ্যামনগরে ২৫ হেক্টর।
এসব কুলের মধ্যে রয়েছে বাউকুল, আপেলকুল, নাইন্টিকুল, নারকেলকুল, বিলাতিকুল ও মিষ্টিকুল। প্রতি বিঘায় ৭০ থেকে ৮০ মন উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ।
তবে গত বছরের তুলনায় এবার কুলের আবাদ কিছুটা বেড়েছে বলে জানান সুত্রটি। গেল মৌসুমে জেলায় কুল চাষ হয়েছিলো ৫৫০ হেক্টর জমিতে। সেখানে এবছর ৭০ হেক্টর পরিমান বেড়েছে। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কুল চাষ।
এ জেলার উৎপাদিত কুল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে খুলনা, গোপালগঞ্জ, ঢাকা ও চট্রোগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়ে থাকে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর সাতক্ষীরায় কুলের ভাল ফলন হয়েছে । কৃষকরা দামও পাচ্ছে ভাল । ফলে এবার কুল চাষীরা বেশ লাভবান হবে।
সরকার কুল চাষীদের সব ধরণের সহযোগিতা করেছে । তিনি আরো বলেন, প্রায় গত দুই দশক থেকে সাতক্ষীরা জেলায় বানিজ্যিক ভাবে কুল চাষ শুরু হয়। ফসলটি লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই এর আবাদ বাড়ছে।