সদরুল কাদির, সাতক্ষীরাঃ বর্তমান বিশ্বে সোস্যাল মিডিয়া যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে খুব জনপ্রিয়। আর তার মধ্যে ফেসবুক সবার শীর্ষে। বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
একসময় প্রিন্টেড পত্রিকা ছিল মানুষের একমাত্র সংবাদ মাধ্যম। পরে টিভি, স্যাটেলাইট এই মাধ্যমকে পূর্ণতা দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এইসব মাধ্যমগুলো জনপ্রিয়তা কমেই চলছে।
ইন্টারনেট ছাড়া একদিন অতিবাহিত করা অসম্ভব। অনলাইন ব্যাংকিং, ই-কমার্স, ই-পেপার, ই-টেন্ডার, ই-টোকেন ছাড়া অনলাইন রেস্টুরেন্টও খুব জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এই সমস্ত মাধ্যমগুলোর যেমন উপকারিতা আছে তেমন অপকারিতাও আছে।
মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে কখনও কখনও মানুষের টাকা ট্রান্সফার করা নেয়া, সোস্যাল মিডিয়াতে আপত্তিকর ছবি ও তথ্য পোস্ট করা প্রতৃতি নতুন নতুন অপরাধের জন্ম দিচ্ছে।
সোস্যাল মিডিয়ার একটি অন্যতম অপরাধ হলো ফেক আইডি দিয়ে ব্লাক মেইল। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির ছবি এডিট করে এবং তার নাম দিয়ে আইডি খুলে সেইসব ছবি পোস্ট করে তাকে ব্লাক মেইল করে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করা।
এই সমস্ত অপরাধীদের একটি চক্র থাকে যারা বিভিন্ন ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য যোগাড় করে পরে সেই সব তথ্য নিয়ে তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। এবং পরিবারের সদস্যদের মত তাদের সাথে মিলেমিশে চলে। কিন্তু তারা তাদের ঘৃণ্য উদ্দেশ্য কাউকে বুঝাতে দেয় না।
অপরাধীরা ঐসব ব্যক্তিদের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের দূর্বল বিষয় নিয়ে ব্লাক মেইল করে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করতে থাকে।
কেস স্টাডিঃ
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের এক সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাত্রী নাম শম্পা মন্ডল। সে লেখাপড়ার সুবাদে কলেজে ইসলাম ধর্মীয় মোস্তফা ইসলাম রাজু নামের এক ছেলের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। রাজু প্রথম দিকে শম্পার কাছে জায়গা করে নেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে। এবং সফল হয়। এরপর রাজু তার দূর্বলতার সুযোগ নিতে থাকে।
একপর্যায়ে রাজু ও শম্পা একে অপরের অনেক কাছে চলে আসে। তাদের সম্পর্ক শুধুমাত্র ভালোবাসার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এক অপরের শারীরিক সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। রাজু নিয়মিত শম্পাকে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে টাকা নিতে থাকে। কখনও মোবাইল, কখনও দামী ঘড়ি, স্বর্ণের আংটি বা চেইন সুকৌশলে হাতিয়ে নেয়। একপর্যায়ে শম্পা রাজু আসল মতলব বুঝতে পারে।
তখন শম্পা ও রাজুর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। শম্পা একপর্যায়ে রাজুকে ঘৃণা করতে থাকে। আর তখনই রাজু তার চরিত্রের আসল রুপ ধারণ করে। এবং শম্পা ও রাজুর অন্তরঙ্গ ছবি এবং কিছু এডিট করা ছবি দিয়ে Shampa Mondal নামে একটি ফেক আইডি খুলে তাতে সেইসব ছবি পোস্ট করে শম্পাকে ব্লাক মেইল শুরু করে।
প্রথমে বিষয়টি শম্পা গুরুত্ব দেয় নি। কিন্তু পরে সেই ছবিতে যখন আপত্তিকর তথ্য পোস্ট করা হচ্ছে তখন এলাকার অন্যরা শম্পাকে অন্য চোখে দেখতে শুরু করে। রাস্তায় বের হলে এলাকার ছেলেরা ইভটিজিং করে, টোন কাটে ইত্যাদি।
এই বিষয়টি শম্পার পরিবার সয্য করতে না পেরে গত ১০-০৫-২০২০ ইং তারিখে আশাশুনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে। যার নম্বর-৩৬৮। কিন্তু ভুল বশত ডায়েরী করে কোন লাভ হয়নি তাদের। কারণ সাধারণ ডায়েরীতে কারো নাম উল্লেখ করে নি তারা। পরে তারা বুঝতে পারে যে, এটা রাজু’র কাজ। কারণ রাজু তাদেরকে ফোন করে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়।
এই অবস্থায় অসহায় শম্পার পরিবার অনেক ভাবনা চিন্তা করে তথ্য প্রযুক্তি আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ মানহানির মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেয়। এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মামলা দায়ের করে এবং মিডিয়ার মাধ্যমে এই ধরনের অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
পরবর্তীতে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) এর সার্বিক দিক নির্দেশনা অনুযায়ী আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজুকে শম্পা মন্ডলের বাড়ির সামনে থেকে আটক করে। শম্পার পরিবারের দায়ের করা তথ্য প্রযুক্তি আইন মামলা, যার নম্বর-৪/১৪৫, তারিখঃ ০৭-০৬-২০২০ ইং অনুযায়ী বিজ্ঞ আদালতে পাঠায় এবং পরবর্তীতে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
এই পদক্ষেপের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং কথিত সাংবাদিক রাজু’র সবোর্চ্চ শাস্তি দাবি করেন।