তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: বকেয়া সন্মানী ভাতার দাবীতে আজ কমলগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস ঘেরাও কর্মসূচী পালন করেছে আর্সেনিক মুক্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প -২০২০ এর মাঠকর্মীরা। তারা তাদের পাওনা সন্মানী ভাতা আদায়ের দাবীতে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি স্বারকলিপিও প্রদান করেছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, মৌলভীবাজার জেলাসহ সারাদেশের ৫৪টি জেলার ৩৩৬টি উপজেলার ৩২০০ টি ইউনিয়নের শতভাগ মানুষের জন্য আর্সেনিক মুক্ত নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে বিগত ২০২০ সালে সরকার আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন” প্রকল্প-২০২০গ্রহণ করে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরাধীন সহায়তাপুষ্ট এই প্রকল্পের আওতায় আর্সেনিক স্ক্রিনিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সারা দেশের ন্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে বিদ্যমান সকল সরকারী ও বেসরকারি নলকূপ সমূহের (existing tubewell) পানির আর্সেনিক পরীক্ষার নিমিত্তে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে ৬ (ছয়) জন করে সারা উপজেলায় মোট ৫৪ জন “নলকূপ পরীক্ষক/তথ্য সংগ্রাহক (Tester)” কে নিয়োগ দেওয়া হয় ১০দফা শর্তের আলোকে এবং নিয়োগকৃত তথ্য সংগ্রাহকেদের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়। নিয়োগকৃত জনবলকে প্রতি ২জনের ১টি টীম করে ১ টি ইউনিয়নে মোট ৩টি গ্রুপকে কাজে লাগানো হয় । এই ৬ জনকে টার্গেট বেঁধে দেওয়া হয় মোট ২৫০০ টি টিউবয়েলের তথ্য সংগ্রহের। এই হিসাবে সারা উপজেলায় মোট ২২হাজার ৫ শত টিউবয়েলের তথ্য সংগ্রহ করেন নিয়োগকৃত মোট ৫৪ জন “নলকূপ পরীক্ষক/তথ্য সংগ্রাহক।করোনা কালীন সমস্যার কারনে নিয়োগের ৩নং শর্তানুযায়ী প্রতিটি নলকূপের পানির আর্সেনিক পরীক্ষা, SMART Phone এর মাধ্যমে GPS রিডিং গ্রহন, নলকূপ রঙকরন (লাল ও সবুজ) এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য টিউবয়েল প্রতি ১০০ টাকা সম্মানি ভাতা প্রদান করার কথা। সেই হিসাবে সর্বমোট ২২হাজার ৫শ টি টিউবয়েলের জন্য সর্বমোট ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সন্মানী ভাতা প্রদান করার কথা ছিল।
চলতি বছরের বিগত ফেব্রুয়ারী মাসে কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বিগত ৬ মার্চ কমলগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর হতে প্রথম দফায় তথ্য সংগ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করা হয় মাত্র আড়াই লক্ষ টাকা সন্মানী ভাঁতা। এরপর থেকে নানা অজুহাতে চলছে বকেয়া ২০ লক্ষ টাকা সন্মানী ভাঁতা প্রদানে দীর্ঘসূত্রীতা। দিনের পর দিন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ সুজন সরকারের অফিসে ধরনা দিয়েও কোন সদুত্তর পাচ্ছেন না তথ্য সংগ্রাহকরা। বরাদ্ধকৃত অর্থ এখনও আসেনি এই অজুহাত দেখিয়ে পাওনা টাকার জন্য তাদেরকে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। বিধি মোতাবেক কোন অর্থ-বছরে যে কটি প্রকল্পে গৃহীত হয় তার জন্য বরাদ্ধকৃত অর্থ সেই অর্থ-বছরেই আসে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (৩০ জুনের মধ্যে) কাজ সম্পন্ন না হলে সেই প্রকপ্লের অর্থ সরকারী কোষাগারে আবার ফেরৎ চলে যায়। ২০২০-২০২১ অর্বছরের প্রকল্পের অর্থ ২০২১-২০২২ অর্থ-বছরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে আসেনি এই অজুহাত মানতে নারাজ তথ্য সংগ্রাহকরা।
তাই তথ্য সংগ্রাহকরা সন্মিলিত হয়ে তাদের বকেয়া পাওনা দাবী আজ ২৬ শে জুন রবিবার কমলগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস ঘেরাও কমর্সূচী পালন করে। তখন উপজেলা প্রকৌশলী তাদেরকে বলেন খালি পেমেন্ট শীটে স্বাক্ষর করে যান আমরা কয়েক দিনের মধ্যেই আপনাদের পাওনা বুঝিয়ে দেবো। যদি টাকা নাই আসে তাহলে সাদা বিল ভাউচারে সই দেওয়ার কথা কেনো বললেন প্রকৌশলী এই প্রশ্ন ভুক্তভোগী তথ্য সংগ্রাহকদের। তাদের দাবী স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ তাদের প্রাপ্য সন্মনীর বকেয়া ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার নানা রকম পাঁয়তারার নানা কৌশলের মাধ্যম উপস্থাপন করে যাচ্ছেন।
এদিকে বিক্ষুব্ধ তথ্য সংগ্রাহকরা তাদের বকেয়া সন্মানী আদায়ের দাবীতে আজ বিকেলে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিনের নিকট একটি স্বারকলিপিও প্রদান করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টির খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ তথ্য সংগ্রাহকরা বাড়ী ফিরে যান ।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ খালেদুজ্জামানের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ সুজন সরকার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জানিয়েছেন, প্রকল্পের সকল অর্থ এখন আমাদের হাতে আসেনি। কিছু অর্থ এসেছে আমরা ইতিমধ্যেই তা বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এমনটাই জানান তিনি।