ক্রমেই বাড়ছে থ্যালাসেমিয়ার ঝুঁকি। বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতির তথ্য মতে দেশে প্রতিবছর ৬০ হাজার শিশু এই রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। আরো ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে এ দেশে প্রায় দশ শতাংশ মানুষ এই রোগের বাহক। তাই এ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে এ রোগ মোকাবিলায় অনেকটাই এগিয়ে গেছেন তারা।নোয়াখালীর হাতিয়ার এই দম্পতির পঞ্চম সন্তান হামিদার থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা চলছে, অথচ এখনো তারা জানেন না তাদের সন্তানের এমন পরিণতির কারণ। হামিদার বাবা বলেন, ‘বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া রোগ। বাচ্চার ৯ মাসের সময় জানছি। কেন হয়েছে তা জানিনা।’ রক্তস্বল্পতা জনিত মারাত্মক এই রোগে সংক্রামক নয়, বংশগত। কেবলমাত্র থ্যালাসেমিয়ার বাহক দম্পতির সন্তানেরই আশঙ্কা থাকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার। থ্যালাসেমিয়া বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. সেলিমুজ্জামান বলেন, বাবা-মার যদি এই রোগ থাকে, তবে পরবর্তীতে প্রেগনেন্সিতে ২৫ শতাংশ চান্স থাকে বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া হবে, ২৫ শতাংশ চান্স থাকে একেবারে ভাল হবে, আর ৫০ শতাংশ চান্স থাকে বাচ্চাটা এর বাহক হবে।’ যেহেতু পিতা-মাতার মধ্যে একজন বাহক হলে এর ঝুঁকি থাকে না তাই বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে পরের প্রজন্মের রোগ এড়ানোর সহজ উপায়। বাহক দম্পতি চাইলে গর্ভধারণের পরেও নিশ্চিত হতে পারেন গর্ভের সন্তানের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কিনা। ঢাকা শিশু হাসপাতাল থ্যালাসেমিয়া বিভাগ অধ্যাপক ওয়াকার আহমেদ বলেন, ‘বাহক হওয়ার পর আমরা তাদের ১১ সপ্তাহের মধ্যে আবার আসতে বলি। পরীক্ষা করার পর আমরা তাদের জানাবো বাচ্চা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কিনা।’ দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হাসপাতালের তথ্য মতে দেশে প্রায় এক কোটি দশ লাখ রয়েছে এই রোগের বাহক। তাছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নয়। দরকার পর্যাপ্ত গবেষণার। অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ‘কিছু কর্মকৌশল থাকা উচিত সরকারের। জনসচেতনতা তৈরি করা। দরকার পর্যাপ্ত গবেষণার। দরকার উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাও। এছাড়া বোনম্যারো প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করলেও একজন রোগী ভাল হয়ে যেতে পারে।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে চিকিৎসার ব্যবস্থার উন্নতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম বলেন, ‘প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। গণমাধ্যমে এর প্রচার চালানো হবে। এছাড়া সকল থ্যালাসেমিয়া রোগীদের লিস্ট তৈরি করা হবে। তাদের সবাইকে নিবন্ধন করা হবে।’ তবে এই রোগ থেকে মুক্তি লাভের একমাত্র উপায় বোনম্যারো প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি বাংলাদেশ।