নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে লন্ডন থেকে পুলিশ হত্যা ও টাকা দিয়ে কিনে ফেলার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ৮৮ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাত্মতা জানানো উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। তবে সব বাধা পেরিয়ে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা। ১৩ জন মহাপরিদর্শকসহ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ৮৮ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আসেন গণভবনে। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির সঙ্গে একাত্মতা জানানোই তাদের আসার উদ্দেশ্য বলে জানান সবাই। আগামী নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগের বিজয় এবং চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। তাদের উদ্দেশ্যে রাখা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গেল ১০ বছরে ঠিকঠাক উন্নয়ন করার কারণেই বিশ্বে এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। সেই ধারা বজায় রাখতেই আওয়ামী লীগকে আবারও বিজয়ী করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক এমন চাওয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে অশুভ শক্তি ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সাধারণ মানুষের ওপর আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছিল তারা আবার ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন প্রাক্কালে দেশে সে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, লন্ডনভিত্তিক এক অপরাধীর বুদ্ধি-পরামর্শে এ অশুভ শক্তি দুটি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। একটি হলো পুলিশের একটা অংশকে কিনে নেওয়া এবং অপরটি হলো কিছু সংখ্যক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের হত্যা করে পুলিশ বাহিনীর মনোবল দুর্বল করা।প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর আত্মবিশ্বাস রয়েছে যে আগুন সন্ত্রাসীরা সফল হবে না। কেননা পুলিশ বাহিনী অধিকতর দক্ষতা ও দৃঢ়তা নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যকর সেবা ছাড়া আমরা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমন করতে সক্ষম হতাম না।’ শেখ হাসিনা বলেন, এখন যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের সক্ষমতার ব্যাপারে পুলিশ বাহিনীর ওপর মানুষের অগাধ আস্থা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকার ও দলের প্রতি সমর্থন দেওয়ার জন্য সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এটি চাকরিরত কর্মকর্তাদের দেশ প্রেমের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করে যেতে উৎসাহিত করবে। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের বৈষম্য থেকে মুক্ত করতে আমাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন এ দেশের মানুষের আত্ম নিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কষ্ট করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাঁর সরকার প্রতিশোধ নেওয়ার পরিবর্তে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করে। অন্যায় কখনো মেনে নেননি এবং ভবিষ্যতেও নেবেন না বলে দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা জানান শেখ হাসিনা। দেশের বর্তমান উন্নয়নে সবাই খুশি হলেও যুদ্ধাপরাধীদের কাছের মানুষ ও সুশীল সমাজের কেউ কেউ খুশি হতে পারেননি বলেও এ সময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে পিএসপি কর্মকর্তা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম ও এ কে এম শহীদুল হকসহ চারজন সাবেক আইজিপি অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ কে এম শহীদুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, সাবেক আইজিপি এ টি এম আহমেদুল হক চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ড. আব্দুর রহিম খান, বজলুল করিম, আব্দুল হান্নান ও মো. মতিউর রহমান বক্তব্য দেন। ৮৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ১৫ জন আইজিপি, একজন পাকিস্তান পুলিশ সার্ভিসের (পিএসপি) কর্মকর্তা, ১৯ জন অতিরিক্ত আইজিপি, ২৪ জন ডিআইজি, তিনজন অতিরিক্ত ডিআইজি, ১১ জন এআইজি ও এসপি এবং ১৫ জন অতিরিক্ত এসপি। সাবেক ১৫ আইজিপি হলেন- এ টি আহাম্মেদুল হক চৌধুরী, কুতবুর রহমান, মো. শামসের আলম, এ কে এম এনায়েতউল্লাহ দেওয়ান, মো. আব্দুর রউফ, মো. আওলাদ হোসেন মিয়া, কাজী বজলুর রহমান, আবুল কাশেম হাওলাদার, মো. আব্দুল হান্নান, মো. রুহুল আমিন, এম সানাউল হক, মো. নুরুল আনোয়ার, এ কে এম শহীদুল হক, মো. মমিনউল্লাহ পাটওয়ারী (সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সচিব) এবং মুহ. আব্দুল হান্নান খান (আইজিপির মর্যাদাপ্রাপ্ত সমন্বয়ক)। সাবেক ১৯ অতিরিক্ত আইজিপি হলেন- মো. সরওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার, মোহাম্মদ আবদুর রহিম খান, মো. নুরুল আলম, মো. আলী ইমাম চৌধুরী, মো. ফজলুল হক, মো. আব্দুর রহিম, খন্দকার মোজাম্মেল হক, গোলাম মোস্তফা, মো. লুতফর রহমান মিয়া, মো. মতিউর রহমান, মো. আব্দুল মান্নান, মো. আব্দুল মাবুদ, আমূল্য ভূষণ বড়ুয়া, মো. নাজমুল হক, ফাতেমা বেগম, বিনয় কৃষ্ণ বালা, নওশের আলী ও আবু হানিফ। সাবেক ২৪ ডিআইজি হলেন- দেওয়ান হাবিবুল্লাহ, মো. সফিক উল্লাহ, খন্দকার সাহেব আলী, কাজী নজরুল ইসলাম, মো. মোখলেসুর রহমান, শাহ আলম সিকদার, পি আর বড়ুয়া, মো. তোফাজ্জল হোসেন, মো. ওয়ালিউর রহমান, নিরাবরণ কুমার চন্দ, মোস্তফা জামাল উদ্দিন আল আজাদ, কাজী আনোয়ার হোসেন, মো. আলতাফ হোসেন মোল্লা, চৌধুরী আহসানুল কবীর, মো. সাজ্জাদ হোসেন, মোস্তাক হোসেন খান, সফিকুর রহমান, মকবুল হোসেন ভূঁইয়া, মো. ওবায়দুল্লাহ, ড. মোহাম্মদ আবদুর রহিম, এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান ও মনিরুজ্জামান।