মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্রের সোনার বাংলা টি বোর্কাস লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী চা ব্যবসায়ি মো.শহীদ আহমদকে সন্ত্রাসী কায়দায় প্রকাশ্যে দিবালোকে জোরপূর্বক টেনে হিঁচড়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব মো.হেলাল আহমদের বিরুদ্ধে। তিনি শ্রীমঙ্গল ব্রোর্কাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। গত বুধবার সকাল ১১টার দিকে শ্রীমঙ্গল শহরের জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে চা নিলাম কেন্দ্রে চায়ের নিলামের শেষে শ্রীমঙ্গল বোকার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে জোরর্পূব্বক গাড়িতে করে তুলে নিয়ে ব্যক্তিগত অফিসে আটকে রেখে ২৭ লাখ টাকা পাওনা দাবী করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শহীদ আহমদ বাদী হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় দু’জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮/১০ জনকে বিবাদী করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরা হলেন- শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব মো.হেলাল মিয়া (৪০), অপরজন শ্রীমঙ্গল ট্রাক ট্যাংক লরি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মো.শাহজাহান মিয়া (৪৭)।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গাগলাজোর গ্রামে। তিনি শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৩নং পুল সংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘ দুই যুগ থেকে বসবাস করে আসছেন।
শ্রীমঙ্গল থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রের বরাতে জানা যায়, সোনার বাংলা ব্রোকার্স লিমিটেড এর সত্ত্বাধিকারী এবং শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রের ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের সদস্য গত ১৪ ফেব্রুয়ারী সকাল ১১টায় সময় ২২তম চা নিলাম পরিচালনা করার জন্য শ্রীমঙ্গল শহরের জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে গেলে উপজেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব হেলাল আহমদ ও ট্রাক ট্র্যাংক লরি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তার উপর অতর্কিত ভাবে হামলা করে এবং তাকে কিল, ঘুষি, চর থাপ্পর মেরে একটি প্রাইভেটকার গাড়িতে উঠিয়ে শহরের মিশন রোডস্থ তাদের ব্যক্তিগত অফিসে নিয়া যায়। সেখানে নিয়ে তার নিকট হতে ২৭লাখ টাকা দাবি করে যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগি।
সেখানে তিনঘন্টা আটক রাখার পর শর্ত সাপেক্ষে অর্থাৎ ওইদিন রাত ৮টার মধ্যে ২৭ লাখ টাকা প্রদান করা শর্তে ছেড়ে দেয়া হয় তাকে। সেই শর্ত ভঙ্গ করিলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করা হয়। সেখান থেকে ভুক্তভোগি ব্যবসায়ী ছাড়া পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।পরে স্বজনরা তাকে দ্রুত মৌলভীবাজার লাইফ লাইন প্রাইভেট হাসপাতালে কার্ডিওলজি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন,ওইদিন রাতে তাদের কথামতো উল্লেখিত টাকা প্রদান না করায় কৃষকলীগ নেতা হেলাল আহমদ বিভিন্ন মোবাইল নাম্বার হতে ফোন করিয়া টাকা প্রদান করার জন্য হুমকি প্রদান করিতে থাকে। পরে তিনি অসহায় হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। টি বোকার্স এসোসিয়েশন বরাবরে বিচারপ্রার্থী হয়ে অপর একটি আবেদন করেন। এমনকি অবস্থা বেগতিক দেখে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপিকে বিষয়টি মুঠোফোনে অবহিত করেন তিনি।
এ অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব ও শ্রীমঙ্গল বোকার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.হেলাল আহমদ বলেন,‘আমি তার কাছে চা পাতার টাকা পাই। ২৭ লাখ ৩৩ হাজার প্রায়। এটার যথেষ্ট প্রমান আছে। চেক আছে, ডিও আছে, লেজার খাতা আছে, সাক্ষী ও আছে। ঐদিন নিলাম কার্যক্রম পরে তারে আমি আমার অফিসে চা খাওয়ার জন্য নিয়ে আসি। এরপর সে রাত ৮টার সময় আমার পাওনা টাকার বিষয়ে চা ব্যবসায়িদের নিয়ে বসবে বলে চলে যায়। তাকে জিম্মি করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। সেখানে চা ব্যবসায়ী সমিতির সমিতির সভাপতি চেরাগ ভাই ও আকরাম খান, ট্রাক সমিতির শাহজাহান ভাই, রুপসী বাংলা ব্রোর্কাসের পরিচালক মনীর ভাই ছিলো। এটা জিম্মির কোনো ঘটনা না।”
হেলাল আহমদ আমাকে বললেন শহীদের কাছে টাকা পান। তখন আমি বললাম টাকা যদি পাওনা থাকে প্রমাণ ছাড়া তো টাকা পাবেন না। হেলাল বললো চেক আছে। আমি বললাম তাহলে চেক ডিজঅনার মামলা করেন। এখন দেখা গেলো হেলাল আহমদ এর কাছে চেক সেটা টেম্পারিং করা।
শ্রীমঙ্গল চা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো.চেরাগ আলী বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি বিনয় ভুষণ রায় বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি এবং লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তক্রমে আইনানুগভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৪:৩৯ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি