তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে উপজেলায় নানা অজুহাতে ঘর থেকে বের হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে কঠোর লকডাউন ভাঙছেন বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ীরা। শহরে পুলিশের চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে চলছে সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। মাস্ক পরার প্রবণতাও খুবই কম। আর এসব ঘটনার বিপরীতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা।
মানুষের মধ্যে অসেচতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারনে গতকাল মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) এই উপজেলায় একদিনেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ এ দাঁড়িয়েছে। যা এই উপজেলার একদিনে সর্ব্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা।
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, শ্রীমঙ্গলে এই পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭৬ জন। এর মধ্যে সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন ৪৭৭জন। এর মধ্যে এই মুহূর্তে ৩২ জন আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বাকিরা বাসা বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই আক্রান্তের মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলা হাসপাতালে নমুনা দিয়ে মারা গেছেন ৭ জন।
গতকাল শ্রীমঙ্গলে একদিনেই ৩০ জন করোনা শনাক্ত হওয়া ছাড়াও গত ১০ দিনে ৮১ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই উপজেলায় গত ২৬ জুলাই ৩ জন, ২৫ জুলাই ৩ জন, ২৪ জুলাই ৩ জন, ২৩ জুলাই ১২জন, ২১ জুলাই ৭ জন, ২০ জুলাই ১ জন, ১৯ জুলাই ৯ জন, ১৮ জুলাই ১৩ জন করোনা পজেটিভ হন।
সরেজমিনে মঙ্গলবার শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় সব দোকানপাটই খোলা রয়েছে। দোকানগুলোর একটি সার্টার খোলা রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। হোটেলে বসে খাওয়া নিষেধ হলেও বিভিন্ন ছোট ছোট হোটেল গুলো সেটি মানছে না। মাস্ক পরিধান করে ঘর থেকে প্রয়োজনে বের হওয়ার কথা থাকলেও বেশীরভাগ লোকই মুখে মাস্ক ছাড়া বের হতে দেখা গেছে। শহরে সিএনজি ও অটোরিকশা চলছে। তবে প্রশাসন যখনই মাঠে নামছে বা যেদিকে যাচ্ছে সেই দিকগুলো পুরো বন্ধ ও মানুষের মুখে মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছে। এভাবেই প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে লকডাউন ভাঙছেন ব্যবসায়ী ও সাধারন মানুষ। এসব ঘটনার মধ্যে প্রশাসনের অভিযান মোবাইলে কোর্টে জরিমানা করছেন নিয়মিত।
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুস ছালিক বলেন, আমরা শহরে প্রবেশমুখে বিভিন্ন স্থানে চেক পোস্ট বসিয়েছি। লোকজন নানা অযুহাতে ঘর থেকে বের হচ্ছে। আমরা তাদের আটকিয়ে জিজ্ঞাসা করলে বেশিরভাগ লোকই আমাদেরকে রোগী পরিচয় দেয়, প্রেসক্রিপশন পকেট থেকে বের করে, ফার্মেসি থেকে ওষুধ আনার কথা বলে, তাছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনার অযুহাত তো থাকছেই। এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমরাও আসলে দ্বিধাদন্দে পরিবেশ হয়ে যায় যে কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যা বলছে। উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি আমরাও শহরে আসা যাত্রীবাহী যানবাহনগুলো আটক করে থানায় নিয়ে যাচ্ছি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, মানুষের নানা অজুহাত, বেশিরভাগ লোকই আমাদেরকে রোগী পরিচয় দেয়, প্রেসক্রিপশন পকেট থেকে বের করে, ফার্মেসি থেকে ওষুধ আনার কথা বলে, তাছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনার অযুহাত তো থাকছেই। সরকার কর্তৃক যে নীতিমালা দেওয়া হয়েছে আমরা সেই নীতিমালা কার্যকরে আমরা মাঠে কাজ করছি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নেছার উদ্দীন বলেন, সরকার কর্তৃক যে নীতিমালা দেওয়া হয়েছে আমরা সেই নীতিমালা কার্যকরে মাঠে রয়েছি। বিনা প্রয়োজনে অকারণে বাসা থেকে বের হওয়া ও দোকানপাট খোলার কারনে আমরা জরিমানা করেছি। এছাড়াও অপ্রয়োজনে বের হওয়া লোকজনকে আটক করে থানায় পাঠানো হচ্ছে। আমরা অভিযান করতে গিয়ে দেখেছি, মানুষ অযথা বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। মানুষের মধ্যে অসচেতনতা দেখা যাচ্ছে। আমরা সবাইকে বলবো সবাই সচেতন হোন। আমাদের দেশে করোনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই করোনাভাইরাসকে ঠেকাতে আমাদের সকলের ভূমিকা, যার যার অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব ততটুকু ভূমিকা নেওয়া উচিত।