শেখ হাসিনা ও তার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ তাদের অবস্থান হারিয়েছে। দেশের রাজনীতিতেও বর্তমানে দলটির কোনো স্থান নেই। তারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা রাজনৈতিক মেকানিজম তৈরি করেছে। তারা নিজ স্বার্থে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করেছে। নিশ্চিতভাবেই স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার কোনো জায়গা হবে না। আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা হবে না।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব মন্তব্য করেন। আজ বুধবার পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সম্ভবত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দলটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না। কারণ এটি কোনো রাজনৈতিক সরকার নয়। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতির ভিত্তিতেই নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে নতুন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এবং পুলিশ, বিচার বিভাগ, এবং জনপ্রশাসনসহ প্রতিষ্ঠান সংস্কারের জন্য ১০টি কমিশন গঠন করেছে।
‘আমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বা রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো ইচ্ছা নেই। আমাদের কাজ সবকিছু স্বাভাবিক করা এবং সংস্কার সম্পন্ন করা। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করব।’
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, হাসিনাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর ভারতের কাছে হাসিনাকে ফেরত চাইবে সরকার।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করে বলেন, ‘তাঁর (শেখ হাসিনার) বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আদালতের রায়ের পর আমরা ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির ভিত্তিতে তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। আমি মনে করি না যে রায় হওয়ার আগে এটা করার দরকার আছে।’
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনূস সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে ভারতের যেভাবে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক নৃশংসতার অভিযোগ তুলেছে, সেসবের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস এফটিকে বলেন, ‘হিন্দুদের বিরুদ্ধে কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবং প্রাণহানির সংখ্যা খুবই কম। আর এসব ঘটনা ধর্মের ভিত্তিতে নয়, বরং আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে তাদেরকে টার্গেট করা হয়েছে। আগস্টে হামলার শিকার অধিকাংশ হিন্দু আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। এটাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ, পানি ও বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের চুক্তি রয়েছে। কিন্তু দিল্লির সমর্থনের অভাব তার সরকারকে ‘‘আঘাত’’ করেছে। মোদি যদি বাংলাদেশ সফরে আসতে চান, তাঁকে অবশ্যই স্বাগত জানানো হবে।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘আমরা (বাংলাদেশ ও ভারত) প্রতিবেশী। আমাদের একে অপরের প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক থাকতে হবে, যা দুই প্রতিবেশীর মধ্যে থাকা উচিত।’
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম