২৮ সেপ্টেম্বর, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন আজ। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হতো না- তেমনি শেখ হাসিনার জন্ম না হলে আধুনিক বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পাইতো না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এনেছিলেন বাংলার স্বাধীনতা, শেখ হাসিনা আনলেন বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়েছে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা।
উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের এখন অপ্রতিরোধ্য বিচরণ। বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে দেখছে শেখ হাসিনার উন্নয়ন কার্যক্রম। শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় তিনি যখন বিরোধীদলের নেত্রী ছিলেন তখনও বিশ্ব দেখেছে তাঁর আপোষহীন নেতৃত্ব, সংগ্রাম আর আন্দোলনে অসীম তেজ, ক্ষিপ্রতা এবং দূরদর্শীতা।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান সেসময় খুবই ব্যস্ত সময় কাটাতেন কলকাতায়, ভারত ভাগের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। দাদা এবং দাদির স্নেহ মমতা নিয়ে শেখ হাসিনার বড় হওয়া। মা আর দাদা-দাদির সাহচর্যে প্রকৃতির অপার মমতার মাঝেই তার বেড়ে ওঠা এবং শিক্ষা জীবনের শুরু হয়। একসময়ে গ্রামের জীবন ছেড়ে ঢাকায় এসে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেকে তিলে তিলে গড়ে তোলেন। ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির মাঠের সক্রীয় কর্মী ছিলেন। কলেজ জীবনে ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত সময় ছিল ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল। নির্যাতন, নিষ্পেষণ আর দমন পীড়নে দিশেহারা বাঙালি জাতি মুক্তির পথ খুঁজছে। সেই সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে প্রবাসে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। ১৭ই মে ১৯৮১ শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন সময়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পেছনে শুধুমাত্র দলীয় নেতাকর্মী নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বাহক সমগ্র দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ।
আওয়ামীলীগকে সংগঠিত করে পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে জীবন বাজি রেখে পথচলা শুরু হয় তাঁর। লক্ষণীয় যে, তখন থেকেই তিনি জাতীয় রাজনীতিতে মানসম্মত নেতৃত্ব গড়ে তুলতে মেধাবী নেতাকর্মীদের জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে শুরু করেন।
১৯৯৭ সালের জুলাই মাস, আমি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে জাপানে Nagya University তে অধ্যয়নরত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরকালে হোটেল নিউ ওতানীতে আমাকে বললেন, ‘শুনেছি জাপান থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে অনেকেই দেশে ফিরে যায় না। জাপানেই চাকুরী করে বা আমেরিকাতে চলে যায়। তুমি দেশে ফিরে এসো। কারণ ছাত্রলীগের মেধাবী নেতাকর্মীরা জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হলে, দুর্বৃত্তরা রাজনীতি দখল করে নিবে’।
জাপান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণ শেষে দেশে ফিরে আসার পর মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে তাঁর পার্সোনাল এইড এবং পরবর্তীতে সহকারী একান্ত সচিব হিসাবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আমার পরম সৌভাগ্য, দীর্ঘ ৭ বছর খুবই কাছে থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। শেখ হাসিনার কাছে না গেলে বা তাঁর সাথে কথা না বললে তাঁকে বুঝা যায় না। আমি তাঁকে যতটুকু বুঝেছি, বাহির থেকে দেখে শেখ হাসিনাকে যতটা কঠিন মনে হয়, বাস্তবে তাঁর মনটা তার চেয়েও অনেক বেশি কোমল। শেখ হাসিনা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্বদানে কঠোর, মানুষ হিসেবে মমতাময়ী মা, স্নেহময়ী বোন। বছরের ৩৬৫ দিন নিয়মিত দীর্ঘ ৭ বছর একসাথে কাজ করার সুবাদে আমার স্মৃতির ভান্ডারে জমা রয়েছে অসংখ্য ঘটনা, কথোপকথন। স্মৃতিপটের এই সকল ঘটনা লিখলে অনেক বড় কলেবরের একটি প্রকাশনা হয়ে যাবে। এছাড়া ধারাবাহিক বর্ননা করাও সম্ভব নয়। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আজকের জন্মদিনে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা বর্ননার মাধ্যমে আমার দেখা শেখ হাসিনাকে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছি।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন একদিন, দিন-তারিখ ঠিক মনে করতে পারছিনা, মাননীয় নেত্রী দুপুরে কোন এক টিভি চ্যানেলের সংবাদে দেখেছেন, আহসানউল্লাহ মাস্টার সাহেবকে পুলিশ বেদম প্রহার করছে। মাস্টার সাহেব তখন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি সাধারণতঃ হরতালের পিকেটিং বা এধরনের কর্মসুচি চলাকালে টি-শার্ট বা হাতাওয়ালা গেঞ্জি পরিধান করে সাধারণ শ্রমিকের সাথেই রাজপথে থাকতেন। নেত্রী টেলিভিশনে দেখেছেন, পুলিশের লাঠির আঘাতে মাস্টার সাহেবের হাতের বাহুর মাংসপেশি ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। মমতাময়ী মায়ের হৃদয় কেঁদে উঠলো। আমি সুধাসদনের নীচতলায়ই ছিলাম। মাননীয় নেত্রী দোতলা থেকে ইন্টারকমে ফোন করে আমাকে ডেকে নিলেন। সামনে যেতেই আহত সন্তানের মায়ের মতই কাঁদো কাঁদো স্বরে বললেন, ‘ওরাতো আমার মাস্টারকে মেরে ফেলবে। কি নির্দয় নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়েছে পুলিশ’। নেত্রীর চোখ ছলছল করছিল। আমার চোখও ঘোলাটে হয়ে আসছিলো। পাঠক কিভাবে গ্রহণ করবেন জানিনা, এই মুহূর্তে ঐ ঘটনা বর্ণনা করতেই সেদিনের স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো, চোখের কোনায় জমা হওয়া দুফোঁটা পানি টিস্যু পেপার দিয়ে মুছতেই হলো। সেদিন কোন রকমে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে বললাম, ‘আপা, আমি খোঁজ নিচ্ছি’। এমনি পরিস্থিতিতে নেত্রী কঠোরভাবে আমাকে নির্দেশ দিলেন, ‘হ্যাঁ খোঁজ নাও। চিকিৎসার ব্যবস্থা করো। মাস্টারকে আমার সাথে দেখা করতে বলো’। নেত্রীর সাথে দেখা করার জন্য জনাব আহসানউল্লাহ মাস্টার সাহেবকে ফোন করতেই, জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করে বললেন, ‘আপা জানলো কিভাবে? আমি আসছি’। বিকাল ৩-৪ টার দিকে সদাহাস্য জনাব আহসানউল্লাহ মাস্টার সাহেব সুধাসদনে আসলেন। কড়কড়া ইস্ত্রি করা ধবধবে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরিধান করে তিনি এসেছেন নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। পাঞ্জাবির নীচে হাতাওয়ালা সাদা গেঞ্জিও রয়েছে। যেন কিছুই হয়নি। সুধাসদনের দোতলায় আহসানউল্লাহ মাস্টার সাহেবকে দেখেই মাননীয় নেত্রী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মাস্টার, কোথায় লেগেছে দেখি’। উত্তরে মাস্টার সাহেব বললেন, ‘না আপা কিছুই হয়নি। নেতাকর্মীদের পুলিশি নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে, এই আর কিছু না‘। নেত্রী বললেন, ‘মাস্টার, তুমি আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারবা না। তুমি একটি স্ট্রাইপ গেঞ্জি পরে ছিলা। তোমার বাহু থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। আমি নিজ চোখে দেখেছি। কোথায় লেগেছে দেখাও’। মায়ের কাছে যেমন কিছু লুকিয়ে রাখা যায় না, তেমনি মাস্টার সাহেবও লুকিয়ে রাখতে পারলেন না’। তিনি বললেন, ‘আপা, আমি নেতা, আমি শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। আমি আহত হয়েছি, একথা শ্রমিকদের জানানো যাবে না। নেতাকর্মীরা ভয় পেয়ে যাবে‘।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিজ সন্তানের মত ভালবাসেন শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে দুস্থ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে নিয়মিত আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ইতিমধ্যে ৩৫০০ জন ছাত্র-ছাত্রী এই প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করেছে এবং বর্তমানে ১৭০০ ছাত্র-ছাত্রী এই আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করছে। এর মধ্যে ৮০-৮৫% আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সন্তান। আমার এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা তৎকালীন ৪৮ নং ওয়ার্ড (বর্তমান ৫৪ নং) আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ মোহাম্মদ মোজাম্মেল ভাই ২৬ আগস্ট (২০০৩ সাল) রাতে, ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে আততায়ীর হাতে নিহত হন। মাননীয় নেত্রী দেশে ছিলেন না। দেশে ফিরেই ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৩, মরহুমের পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জানানোর জন্য মরহুমের পোস্তগোলাস্থ বাসায় যান শেখ হাসিনা। তিনটি সন্তানসহ পুরো পরিবার পৈতৃক বাড়ির একটি কক্ষে বসবাস করতেন মরহুম শরীফ মোহাম্মদ মোজাম্মেল। কক্ষের পরিবেশ দেখে মানসিকভাবে খুবই আহত হন মাননীয় নেত্রী। তিনি বললেন, ‘দেখ, আমার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কত কষ্টকর জীবনযাপন করছে। পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলাম ওরা কিছুই করেনি। তিনটি সন্তান নিয়ে এই ছোট্ট রুমে মানবেতর জীবনযাপন করে। ওদের জন্য কিছু করা দরকার’। পরবর্তিতে তিনি ঐ ছেলেমেয়েদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। মরহুম শরীফ মোহাম্মদ মোজাম্মেল ভাই এর সন্তানেরা নেত্রীর দেওয়া আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করে সকলেই শিক্ষিত হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদনে কর্মরত টাইপিস্ট বিপ্লবের বাবা (বীর মুক্তিযোদ্ধা) ছিলেন কর্মহীন। বিপ্লবের ভাই-বোনেরাও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে শিক্ষিত হয়েছে। তন্মধ্যে একজন এমবিবিএস পাস করেছে।
মাননীয় নেত্রী জেলাসমূহে সাংগঠনিক সফরকালে গন্তব্যে পৌঁছে সর্বপ্রথম নির্দেশ দিতেন গাড়ির ড্রাইভার, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ, এসবি, সাংবাদিকদের খাবার ও আরামদায়ক বিশ্রামের ব্যবস্থা করার জন্য। কারন, সফরকালে সবচেয়ে বেশি কষ্ট যারা করেন, তাদের বিশ্রামের প্রয়োজন সবার আগে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গাড়ি ক্রয়ের টাকা স্বাস্থ্যখাতে প্রদান করেছেন। এমন ঘটনা নতুন নয়। ২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিলো। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে মাননীয় নেত্রী সেদিন প্রানে রক্ষা পেলেন। কিন্তু গ্রেনেডের বিকট আওয়াজে নেত্রীর কানের ভিতরে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে আওয়াজ সহ্য করতে পারতেন না। সুধাসদনে নেত্রীর বেডরুমের অনেক পুরনো window type air conditioner (AC) টি ব্যবহারে বিকট শব্দ হতো। তাই তিনি বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহার করতেন। মাননীয় নেত্রী কানের চিকিৎসা করানোর জন্য আমেরিকা যাবার পূর্বে বলেছিলাম, ‘ আপা, আপনার বেডরুমের Window type AC টি অনেক পুরনো এবং শব্দ হয়। বিকট শব্দে আপনার কানে ব্যথা হয়। আপনি আমেরিকা অবস্থান কালীন সময়ে বেডরুমের AC টি পরিবর্তন করে একটি নতুন Split type AC লাগানো হলে ভালো হয়‘। মাননীয় নেত্রী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কত খরচ হবে’? আমি বললাম, প্রায় চল্লিশ হাজার’ (২০০৪ সালের মূল্য)। কর্মীবান্ধব মাননীয় নেত্রী বললেন, ‘ আমার AC বদলানো লাগবে না, Electric fan দিয়েই চলবে। ৪০ হাজার টাকা আমার গরীব নেতাকর্মীদের ভাগ করে দিলে ১০ টি পরিবার দুমুঠো ভাত খেয়ে প্রায় একমাস চলতে পারবে’। মমতাময়ী মায়ের মত নেত্রী নিজের আরাম বিসর্জন দিলেন দলীয় নেতা কর্মীদের সুখের জন্য।
সুধাসদনে নেত্রীর বেডরুমে রাখা কাঠের আলমারিটি অনেক পুরনো। শুনেছি মাননীয় নেত্রীর বিয়ের সময়ের, সেগুন কাঠের তৈরি আলমারীটির পিছনে লাগানো পাতলা প্লাইউডটির টেম্পার নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বিভিন্ন স্থানে সৃষ্ট ছিদ্র দিয়ে পোকা ঢুকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কাজে অচেনা কাউকে সম্পৃক্ত করা সমীচীন হবেনা বিবেচনা করে আমার এলাকার একজন বিশ্বস্ত কাঠমিস্ত্রিকে দেখালাম, যিনি এখনো জীবিত আছেন। মিস্ত্রী বললেন, ‘আলমারিটি অনেক পুরনো। প্লাইউড দিয়ে তৈরি পেছনের কভারটি পরিবর্তন করে পুরো আলমারীটা বার্নিশ করতে ৪-৫ হাজার টাকা লাগবে। একই সাইজের নতুন একটি আলমারী তৈরি করতে হাজার পনের টাকা খরচ হবে। কোনটি করবো’? মাননীয় নেত্রীকে জানালাম। তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন, নতুন আলমারি তৈরি করতে হবেনা, বার্নিশও করতে হবে না, শুধু পেছনের কভারটি পরিবর্তন করে দাও। পোকামাকড় না ঢুকলেই হলো। আমার অনেক নেতাকর্মী কষ্টে সংসার চালাচ্ছে। তাদের দেখতে হবে’। নির্দেশ মোতাবেক দুই হাজার টাকা ব্যয়ে পেছনে লাগানো প্লাইউডটি পরিবর্তন করা হয়েছিলো।
আমাদের সমাজে সাধারণতঃ পিতা-মাতা সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় সঞ্জয় করেন এবং সম্পদ গড়েন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দুজন সন্তানের ‘মা’। পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও কন্যা সায়মা হোসেন পুতুল। একদিন সুধাসদনের দোতলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে নামতে মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুলের সাথে কথা বলছিলেন। সামনে নেত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল, দুই/তিন ধাপ পেছনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সবার পেছনে আমি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘দেখরে মা, আমারওতো বয়স হয়েছে। মা হিসেবে তোদের জন্য কোন কিছু রেখে যেতে পারলাম না’। জবাবে মা’র উদ্দেশ্যে মেয়ে বললেন, ‘দেখ মা, মা হিসেবে তুমি আমাকে সুশিক্ষা দিয়েছো। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছি। জীবনের জন্য এটাই যথেষ্ট। এছাড়া তুমি পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মানুষের সেবা করেছো, দেশের উন্নয়ন করেছো। কেহ কোন অপবাদ দিতে পারে নাই। এটাই আমার জীবন চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে’।
এমন একজন মমতাময়ী জননেত্রী শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিনে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জানাই অফুরন্ত ভালবাসা। শুভ জন্মদিন। মাননীয় নেত্রী, আপনি বেঁচে থাকুন হাজার বছর বিশ্ব বাঙালির কান্ডারি হয়ে।
ড. মোঃ আওলাদ হোসেন
ভেটেরিনারীয়ান, পরিবেশবিজ্ঞানী, রাজনৈতিক কর্মী ও কলামিস্ট, ঢাকা, বাংলাদেশ।