মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চিঠি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানের এমন চিঠি বিনিময় গনতন্ত্রের শিষ্টাচার। কিন্তু বিশ্বময় দুর্যোগের এই সময় ট্রাম্পের চিঠি গুরত্ব বহন করে ভিন্ন কারনে। কোভিড-১৯ পৃথিবীজুড়ে যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, সেই দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহিত পদক্ষেপের প্রশংসিত হয়েছে বিশ্বজুড়ে। টানা তৃতীয়বার সরকার পরিচালনায় শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই বিশ্বনেতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। ট্রাম্পের চিঠি সেই গুরত্বটি আরেক ধাপ বাড়িয়ে দিল। চিঠিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দুটি বিষয় উল্লেখ করেছেন (এক) করোনা মোকাবেলায় শেখ হাসিনার সরকারের সঠিক এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং ( দুই) বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বের দুর্লভ নেতাদের একজন আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন এমন ক্ষণজন্মা নেতা বিশ্বে খুব বেশী নেই। ট্রাম্পের এই উপলব্ধিটি ৭১ সালে হলে বাংলাদেশের স্বাধিনতা ৯ মাস প্রলম্বিত হত না। মার্কিন জনগন বাংলাদেশের পক্ষে থাকলেও নিক্সন প্রশাসন পাকিস্তানকে শুধু সমর্থনই করেনি, অস্র সরবরাহ করে সহযোগিতা করেছে যূদ্ধ চালাতে। ত্রিশ লক্ষ মানূষ জীবন দিতে হয়েছে মার্কিন সমর্থনের কারনে। আজকের প্রেসিডেন্টের উপলব্ধিটি মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে আগে হলে বঙ্গবন্ধু নবেল পুরস্কারেও বিবেচীত হতে পারতেন। দেরিতে হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই উক্তি ৭১ এর স্বাধিনতা যূদ্ধের যৌক্তিকতার স্বীকৃতি মনে করছি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ট্রাম্পের অনুভুতি বঙ্গবন্ধুকে নুতন করে পরিচিত না করলেও ইতিহাসের সত্যটি বেড়িয়ে এসেছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও ৭৫ এর পরে বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা মূছে ফেলার চেষ্টা চালিয়েছে।বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারন করাও নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রায়। ১৫ ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকীতে মিথ্যা জন্মদিনের উৎসব পালনের ধৃষ্টতাও দেখিয়েছে অনেকে। আমেরিকার মত তাদেরও বোধদয় হবে আশাকরি এবং সত্যটি অনুধাবন করে রাজনীতির নতুন মেরুকরণ হবে আশাকরি। এই উপলব্দি যত আগে হয় ততই মংগল কারন, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা। সত্যকেও চাপিয়ে রাখা যায়না। সত্য আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হবে এটাই ইতিহাসের কঠিন নিয়তি।দেশের নেতাদের মধ্যে এখনো শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কটুক্তি করার প্রবনতাই বেশী। কোথায় কি ভুল হলো সেই চর্চাই তারা বেশি করেন। দেশের কল্যানে, উন্নয়নে কিংবা দুর্যোগে নেতাদের কোন ভূমিকা নেই।পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যখন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে প্রশংসা করেন তখন দেশীয় নেতাদের অনুভুতি কি তা জানার আগ্রহ অন্যদের মত আমারও।
এখন অবশ্য সেল্ফি রাজনীতি দেশে বেশী জনপ্রিয়। নীজের বাবাকে রিলিফ দিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল করার প্রবনতাও দেখতে হচ্ছে। অঠেল সম্পদের মালীকরা নিরবে, ভিক্ষারি হাত বাড়ায় সাহায্যের। ধানকাটার ছবি তুলতে কাঁচাধান কাটার ফটো ভাইরাল হয়েছে নেতাদের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধানকাটতে যাননি, বাবার মত শেখ হাসিনা নিরবে দেশের কল্যানে কাজ করে চলেছেন। দেশের নেতাদের চোখে উন্নয়ন ধরা না পরলেও বিশ্ব নেতাদের চোখ এড়ায়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প চিঠির মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে সম্মান জানিয়েছেন সংগতকারনেই। এই চিঠি নিয়েও হয়ত অন্তরজালা শুরু হবে অনেকের কিন্তু ইতিহাস আপন গতিতেই চলে, ইতিহাস সহজে সৃষ্টি করা যায়না। যেমন করে ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন জাতীরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন চিঠির মাধ্যমে। এটাই ইতিহাসের নির্মমতা। ইতিহাস সত্য এবং সত্য কখোনই ঢেকে রাখা যায়না। ইতিহাস বিকৃত করার ইতিহাসও লেখা হবে, প্রকাশ হবে একদিন স্বাভাবিক নিয়মেই।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
৩০ শে এপ্রিল ২০২০