পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর যে শূন্যতা তৈরি হয়, তা পূরণ করতে এবং নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে ৮৪ বছর বয়সী নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেই বেছে নেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। গণআন্দোলনে দেশের সব স্তরের জনগণ যোগ দিলেও মূলত এটির সূচনা করেছিল শিক্ষার্থীরা। আর তাই দেশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ড. ইউনূসকে নিয়ে ‘ইউনূস: আই উইল হেল্প মেইক স্টুডেন্টস ড্রিম ফর বাংলাদেশ কাম ট্রু’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। সেখানেই উঠে এসেছে এসব।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নতুন নেতা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু এটি তার স্বপ্ন ছিল না, এটি তার বিপ্লব ছিলো না। তবে যখন ড. ইউনূস যখন গত সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের থেকে ফোন পেয়েছিলেন তখন তিনি দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকার করেন।
শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৮৪ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস। শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৈরি শূন্যতা পূরণে ড. ইউনূসকে দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানায় শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশ সংস্কার ও পুনর্গঠনে এগিয়ে আসেন ড. ইউনূস।
যমুনা স্টেট হাউসের কার্যালয়ে মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, ‘তরুণদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমি এটা করছি কারণ আমি তাদের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম।‘
তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা হওয়া, এটা আমার স্বপ্ন নয়, এটা তাদের স্বপ্ন। তাই আমি তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাহায্য করছি।‘
ড. ইউনূস গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে হাসিনার পতনের পর ইউনূসের সামনে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা নিয়ে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন তিনি।
বিবিসি বলছে, প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূসের সামনে বর্তমানে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আন্দোলনে সহিংসতায় ৪০০ মানুষের মৃত্যুর পরে ৫ আগস্টের পর দেশের সব পুলিশ দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকে। কারণ বিক্ষোভের সময় দেশের বহু থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। যার কারণে সাড়া দেশের সব পুলিশ কর্ম বিরতিতে গেলে কার্যত দেশে অস্থিরতা দেখা দেয়।
সে সময়ে সড়কের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে এগিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “সবার আগে দেশের আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে যাতে মানুষ নিরাপদে কাজ করতে পারে।”
আইনশৃঙ্খলাবাহিনী রাস্তায় ফেরায় সোমবার কিছুটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে দেশের সব স্থানে পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। এক্ষেত্রে বৃহস্পতিবারের মধ্যে কাজে ফেরার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর তার দলের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সবাই পুরো দেশ থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। ১৫ বছরের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর দেশের পরিস্থিতি পুরো জগাখিচুড়ি হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউনূস। বিগত দিনগুলোতে হাসিনা যেভাবে সরকার চালিয়েছে তাতে বোঝা যায় তিনি প্রশাসনের বিষয়ে কোনো জ্ঞান রাখেন না। এরপরেও বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আশাবাদী ইউনূস।
তিনি বলেন, আমরা দেশে আছি, ‘জনগণের জন্য একদমই নতুন মুখ হিসেবে। তবে আমরা শুধুমাত্র দেশের জন্যই আছি। কেননা অবশেষে দেশ থেকে দানব পালিয়েছে।‘
বাক স্বাধীনতার দিকে ইঙ্গিত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি সংস্কারের খুবই প্রয়োজন। শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে দেশে বাক স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে সীমাবদ্ধ ছিল। দেশের কারাগারগুলো এমন লোকে ভরা যারা তার বিরুদ্ধে কথা বলতে চেয়েছিল।
ড. ইউনূস অভিযোগ করেছেন যে তিনি নিজেই শেখ হাসিনার বাকস্বাধীনতা হরণের শিকার হয়েছেন। তাকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের মতে এখন সংস্কারই মুখ্য। তিনি বলেন, ‘কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যার সাথে হয়তো সবাই একমত হবে না। তবে আমি আশা করি, এসব সিদ্ধান্ত আগের তুলনায় ভাল হবে।‘
তিনি বলেন, আমি বলছি না, আমি একটি সরকার চালাতে পারব। আমি বলছি, আমার কিছু প্রতিষ্ঠান চালানোর অল্পবিস্তর অভিজ্ঞতা আছে। আমি সেই অভিজ্ঞতার মধ্য থেকে যতটা পারি কাজে লাগাব। কেউ পছন্দ করবে, কেউ করবে না। তবে কাজটা আমাদের করে যেতে হবে।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম