দেশের মানুষকে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা পরিহার করে শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে দেশে ফিরে বৃহস্পতিবার সবার প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেলা পৌনে তিনটার দিকে বক্তব্য রাখেন ড. ইউনূস।
ড. ইউনূস বলেন, এ স্বাধীনতাকে আরও মজবুত করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যে তরুণ সমাজ এটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তারা এ দেশকে নতুনভাবে পুনর্জন্ম দিয়েছে। আমরা এগিয়ে যেতে চাই। এরা এ দেশকে রক্ষা করেছে। এ স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে। এ স্বাধীনতা প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
জনসাধারণকে সংখ্যালঘুদের ওপরসহ প্রতিটি হামলা বন্ধে তৎপর থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যদি আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন, ভরসা রাখেন তাহলে নিশ্চিত থাকুন দেশের মানুষের ওপর কোথাও হামলা হবে না। আমার প্রথম কথা হলো আপনারা বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা থেকে দেশকে রক্ষা করুন।
তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব হলো সরকারের কাঠামোগুলো পরিবর্তন করা, মানুষকে রক্ষা করা। মানুষ যাতে সরকারের ওপর আস্থা রাখে। বাংলাদেশ একটি পরিবার, সম্পদ-জনগণ সবই আমাদের। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মন্তব্য করেন তিনি।
আন্দোলনের সময় রংপুরে নিহত আবু সাঈদের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ড. ইউনূস- আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে আমাদের। যে আবু সাঈদের ছবি মানুষের মনে গেঁথে গেছে। এটা কেউ ভুলতে পারবে না। কি অবিশ্বাস্য এক সাহসী যুবক, বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর থেকে কোনো যুবক-যুবতী আর হার মানেনি। তারা বলেছে যত গুলি মারুক, মারতে পারে, আমরা আছি। যার কারণে সারা বাংলাদেশজুড়ে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করলো। এই স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, মানুষ যেন জানে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অর্থ হলো নিজের পরিবর্তন, ব্যক্তির পরিবর্তন, ছেলেমেয়ের ভবিষৎ পরিবর্তন। এটা যেন প্রত্যেকে বুঝে নেয়। দেশ আজকের তরুণ সমাজের হাতে। তোমরা এটিকে মনের মতো করে গড়ে তুলবে। তোমরা যেমন স্বাধীন করেছ, এটিকে তোমরা গড়তেও পারবা। তোমাদের দেখে সারা দুনিয়া শিখবে। আমি তাদেরকে বারেবারে উপদেশ দিই, পুরনোদের বাদ দাও। তাদের পুরনো চিন্তা দিয়ে আমাদের মুক্তি হবে না। এটা কেবল বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়াতে হবে না। তোমাদের মধ্যে যে শক্তি ও সৃজনশীলতা আছে, তা কাজে লাগাতে হবে। সৃজনশীলতা বই-খাতায় লেখার জিনিস না, এটা প্রকাশ করার জিনিস, স্থাপন করার জিনিস।
সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, সারা বাংলাদেশ একটি বড় পরিবার। আমরা একসঙ্গে চলতে চাই। আমাদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্ধ যা আছে, সরিয়ে ফেলতে চাই। যারা বিপথে গেছে তাদেরকে পথে আনতে চাই। যাতে করে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।
ড. ইউনূস বলেছেন, বিশৃঙ্খলা হলো অগ্রগতির শত্রু। আমাদের যে যাত্রা শুরু হলো, এর শত্রু। কাজেই এই শত্রুকে যাতে রোধ করা যায়, বুঝিয়ে হোক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দিয়ে হোক, এটা বুঝাতে হবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন হতে হবে, তাদের হাতে দায়িত্ব দিলে এর বিহিত হবে। এটা যেন আবার না হয়, দুইটা টাকা দিলাম, আবার ছেড়ে দেয়া হলো।
বাংলাদেশ খুব সম্ভাবনাময় দেশ হতে পারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সুন্দর দেশ হতে পারে। এটাকে আমরা নষ্ট করে দিয়েছি। আবার জেগে উঠতে হবে। আবার বীজতলা তৈরি করতে হবে। তারাই (শিক্ষার্থী-তরুণ সমাজ) এই বীজতলা তৈরি করবে। এখানে সরকারি কর্মকর্তারা আছে। বাংলাদেশ একটি পরিবার। আমাদের মধ্যে যেন কোনো গোলযোগ না হয়। আমরা যেন তড়িৎ গতিতে এগিয়ে যেতে পারি।
এর আগে, দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বিমানটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
তাকে স্বাগত জানান তিন বাহিনীর প্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। এছাড়া সেখানে উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তারা ছিলেন।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম