শাকিব খান (জন্ম ২৮ মার্চ ১৯৭৯) হলেন একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, গায়ক, চলচ্চিত্র সংগঠক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। তিনি গণমাধ্যমে “সুপারস্টার”, “কিং খান” ও “ঢালিউড কিং” হিসাবে সম্বোধিত হন।
প্রাথমিক জীবন
শাকিব খান ১৯৭৯ সালের ২৮ মার্চ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদীতে মাসুদ রানা হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন। খানের আদি নিবাস গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলায়। তার বাবা আব্দুর রব ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারী এবং মাতা নূরজাহান একজন গৃহিণী। তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা হলেন এক বোন ও এক ভাই। বাবার চাকরির সুবাদে তার শৈশব কৈশোর থেকে বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জ জেলায়।
শাকিব খান তার ইচ্ছে প্রসঙ্গে বলেন,
“ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার (প্রকৌশলী) হব। কারণ আমি সাইন্সের (বিজ্ঞানের) ছাত্র ছিলাম। সবসময় বুকে লালন করতাম ডাক্তার হয়ে দেশের মানুষের সেবা করব। এর বাইরে যে অপশনটি (বিকল্পটি) আমার মধ্যে কাজ করত তা হলো ইঞ্জিনিয়ার (প্রকৌশলী) হওয়া। খুব পছন্দ ছিল এই পেশাটিও। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করার পর হঠাৎ করেই যেন ছোটবেলার স্বপ্নগুলো হারিয়ে যেতে থাকল।
কর্মজীবন
1999-2005
শাকিব খান ১৯৯৯ সালে প্রথম চুক্তিবদ্ধ হন সবাইতো সুখী হতে চায় চলচ্চিত্রে, আফতাব খান টুলু পরিচালিত এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ২০০৫ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত এমএ রহিম পরিচালিত সিটি টেরর। এ চলচ্চিত্রে তিনি অভিনেতা মান্নার সঙ্গে অভিনয় করেন। এছাড়া শাহীন-সুমন পরিচালিত বাধা চলচ্চিত্রে রিয়াজ ও পূর্ণিমার সাথে অভিনয় করেন।
২০০৬ – ২০১০
২০০৬ সালে তার অভিনীত ১৩টি চলচ্চিত্র মুক্তি পায় এবং সেগুলো এই বছরের সেরা ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ছিল। এই সাফল্যের ফলে তার পারিশ্রমিক তিন লাখ থেকে ছয়-সাত লাখে উত্তীর্ণ হয়। এছাড়া ২০১০ সালের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় তার অভিনীত নাম্বার ওয়ান শাকিব খান, চাচ্চু আমার চাচ্চু, ও নিঃশ্বাস আমার তুমি। বদিউল আলম খোকন পরিচালিত নাম্বার ওয়ান শাকিব খান চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িক সফলতা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করে। শাহাদাত হোসেন লিটনের জীবন মরণের সাথী, পিএ কাজলের চাচ্চু আমার চাচ্চু, এবং বদিউল আলম খোকনের নিঃশ্বাস আমার তুমি তিনটি চলচ্চিত্রেই তার বিপরীতে অভিনয় করে অপু বিশ্বাস এবং চলচ্চিত্রগুলো বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।
২০১১ – ২০১৫
২০১১ সালে শাকিব খান অভিনীত সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কোটি টাকার প্রেম ও পরিচালক জুটি শাহীন-সুমন পরিচালিত টাইগার নাম্বার ওয়ান ব্যবসাসফল হয়। মালেক আফসারী পরিচালিত মনের জ্বালা চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন অপু বিশ্বাস, চলচ্চিত্রটিতে প্রথমবারের মতো তিনি নেপথ্য শিল্পী হিসেবে আমি চোখ তুলে তাকালেই সূর্য লুকায় গানে কণ্ঠ দেন। ২০১৫ সালে তিনি এইতো প্রেম, আরো ভালোবাসবো তোমায়, দুই পৃথিবী, লাভ ম্যারেজ ও রাজাবাবু – দ্য পাওয়ার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সোহেল আরমান পরিচালিত এইতো প্রেম তার অভিনীত প্রথম যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। এতে তার বিপরীতে প্রথমবার অভিনয় করেন আফসানা আরা বিন্দু।
এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ২০১৬ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে মনোনীত হন। এস এ হক অলিক পরিচালিত আরো ভালোবাসবো তোমায় চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে প্রথমবারের মত অভিনয় করেন নবাগতা পরীমনি। এই চলচ্চিত্রে শাকিব খান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি তৃতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এই বছর ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত লাভ ম্যারেজ এবং বক্স অফিসেও এটি ব্যবসাসফল হয় এবং ঈদুল আযহায় মুক্তি পায় তার অভিনীত বদিউল আলম খোকন পরিচালিত প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র রাজাবাবু – দ্য পাওয়ার। এতে তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন।
চলচ্চিত্রটি সর্বাধিক ১৫২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়, যা সেই সময় যেকোনো বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের জন্য রেকর্ড সংখ্যক ছিল।
২০১৬ – বর্তমান
২০১৬ সালের শুরুতে মুক্তি পায় তার অভিনীত উত্তম আকাশ পরিচালিত রাজা ৪২০। কৌতুকধর্মী রাজা ৪২০ চলচ্চিত্রে তিনি নাম ভূমিকা অভিনয় করেছেন। যেখানে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন অপু বিশ্বাস ও রাভিনা বৃষ্টি। এরপর এপ্রিলে মুক্তি পায় সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২, যা ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনীর অনুবর্তী পর্ব।
২০২০ সালের শুরুতে তার অভিনীত বীর ও শাহেনশাহ শিরোনামের দুটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। বীর পরিচালনা করেছেন জনপ্রিয় পরিচালক কাজী হায়াৎ, এতে প্রথমবারের মতো কাজী হায়াতের পরিচালনায় অভিনয় করেন তিনি। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছেন খান নিজে। এটি তার তৃতীয় প্রযোজিত চলচ্চিত্র এর আগে ২০১৪ সালে হিরো: দ্যা সুপারস্টার ও ২০১৯ সালে পাসওয়ার্ড শিরোনামের দুটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রটির কাহিনী, সংলাপ ও শাকিব খানের অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে। জাহিদ আকবর লিখেন, “শাকিব খানের অভিনয় দেখার জন্যই ‘বীর’ দেখেছেন দর্শকরা। সিনেমাজুড়েই দাপটে অভিনয় করেছেন।
শাহেনশাহ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন তরুণ পরিচালক শামীম আহমেদ রনি। এতে তার বিপরীতে প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া ও রোদেলা জান্নাত। বেশ কয়েকবার মুক্তি তারিখ ঠিক করেও, পরবর্তীতে মুক্তি না দেয়ায় চলচ্চিত্রটিকে সমালোচনা মুখোমুখি পড়তে হয়।
ব্যক্তিগত জীবন
শাকিব খান ২০০৮ সালে ১৮ এপ্রিল তার গুলশানের বাড়িতে তার সর্বাধিক চলচ্চিত্রের সহশিল্পী অপু বিশ্বাসকে বিয়ে করেন। বিয়ের বিষয়টি গণমাধ্যমে গোপন রাখা হয়। পরে ২০১৭ সালে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে বিয়ের করার কথা অপু বিশ্বাস জানান। বিয়ের পর ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তাদের একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। যার নাম রাখা হয় আব্রাম খান জয়।
২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর শাকিব খান তালাকের জন্য আবেদন করেন এবং ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এই দম্পতির তালাক সম্পন্ন হয়।
শাকিব খান ক্রিকেট খেলার ভক্ত। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের ভক্ত ও বন্ধু।