চিঠি, ডাকপিয়ন বা পোস্ট অফিস, এ শব্দগুলো পরিচিত হলেও এখন খুব একটা ব্যবহার হয় না। একটা সময় ছিল যখন মানুষ দীর্ঘসময় অপেক্ষার প্রহর গুনত প্রিয়জনের লেখা একটি চিঠির জন্য। মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা আনন্দ বেদনার গল্পগুলো খামে ভোরে পাঠানো হতো দূরদূরান্তে। আর এ চিঠির জন্য অনেকেরই যাতায়াত ছিল পোস্ট অফিসে। চিঠি বিনিময়ের যুগ হারিয়ে গেছে এখন, সে সঙ্গে হারিয়ে গেছে ডাক পিয়নের বাইসাইকেলের শব্দ ও পোস্ট অফিসের আবদারও।
ই-মেইল, ফেইসবুক, হোয়াটঅ্যাপ, ইমো, ব্যাংকিংয়ের যুগে এখন আর কেউ আবেগ নিয়ে চিঠি লেখে না, তাই পোস্ট অফিসেও তেমন যাওয়া হয়না। আগের মতো চিঠি না আসলেও পোস্ট অফিসগুলো এখনও চিঠির অপেক্ষায় থাকে।
উপজেলার ফিনলে টি কোম্পানির কালিঘাট চা বাগানে অবস্থিত কালীঘাট পোস্ট অফিস। শত বছরের অগনিত গল্প নিয়ে চলতি বছর ১০০ বছর পূর্ণ হলো পোস্ট অফিসটির। ১৯২৩ সালে কালীঘাট চা বাগানে পোস্ট অফিসটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। নাম দেয়া হয় কালীঘাট পোস্ট অফিস। শতবর্ষ পূর্ণ করে এখনও সেবার মান অক্ষত রেখেছে অফিসটি।
পোস্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, তিনজন কর্মী নিয়ে চলছে তাদের কার্যক্রম। তবে সেটা চা বাগান দ্বারা পরিচালিত।
উপমহাদেশে প্রথম ডাক সার্ভিস চালু করা হয় ১৭৭৪ সালে। সর্বভারতীয়ভাবে ডাক টিকেট চালু হয় ১৮৫৪ সালে। বাংলাদেশের ডাক বিভাগের ইতিহাসে পুরাতন ১০০ বছরের ঐতিহ্য ধারণ করছে শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট পোস্ট অফিস।
চা শ্রমিক লিটন গুঞ্জ বলেন, ‘আমাদের বাবা দাদার সময়ে এ পোস্ট অফিসটি যেভাবে ছিল, সেভাবেই শতবর্ষের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখনও। চাকরির আবেদন করলে মাঝেমধ্যে এখানে চিঠি আসে। পিয়ন আমাদের চিঠি দিয়ে যায়।’
পোস্ট মাস্টার আবদুল মতিন বলেন, ‘পূর্বের যে কাজগুলো ছিল, এখনও তাই আছে। সাধারন চিঠি, রেজিস্ট্রারি চিঠি, পারসেল, বিদেশি চিঠি, বাহিরে থেকেও চিঠি আসে। মানি ওয়ার্ডার ইলেকট্রনিক মানি ওয়ার্ডার।
‘নতুন কিছু নিয়ম আপডেট হয়েছে। যেমন ডমেস্টিক মেইল চালু হয়েছে। চিঠির গায়ে বারকোর্ড সিস্টেম আছে, সেখানে চিঠি পাওয়ার পর প্রাপক ও প্রেরক সহজে নিশ্চিত হতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি আমাদের সঙ্গে সমপৃক্ত আছে। সঞ্চয় ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, তিনমাস অন্তর সঞ্চয়পত্র, বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র এখনও বিদ্যমান আছে। না হলে আমার শহরে গিয়ে কাজ করতে হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘কালীঘাট পোস্ট অফিসের চা শিল্পাঞ্চলের প্রথম পোস্ট অফিস হিসেবে আলাদা মর্যাদা রয়েছে। এখানে একজন পোস্টম্যান (ইডিএ) আছেন।’
আগের মতো এখন আর চিঠি আসে না বলে জানান পোস্ট মাস্টার আবদুল মতিন।
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি