লিভার রোগের সাধারণ লক্ষণ
সাধারণত লিভার রোগের লক্ষণ গুলো যা বেশিরভাগ মানুষের হয়, সেগুলো হলো: ভাইরাল হেপাটাইটিস বা জন্ডিস, লিভার সিরোসিস, লিভারের ফোঁড়া, পিত্তথলির বা পিত্তনালির রোগ, ফ্যাটি লিভার, লিভার ক্যানসার ইত্যাদি। প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় এক লাখ এর মত মানুষ লিভার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
লিভার রোগের পেছনে প্রধান যে কারণগুলোকে চিহ্নিত করা হয় তা হলঃ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, মদ্যপান, ধূমপান ইত্যাদি লিভারের ক্ষতি করে। এছাড়াও এমন কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখলে বোঝা যাবে আপনার লিভারে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা।
লিভার রোগের এর একটি সাধারণ উপসর্গ হল হলদে চোখ যা থেকে বুঝা যায় যে, আপনার লিভার ভালোমতো কাজ করছে কি করছে না। ধারণা করা হয় যে এটিই সম্ভবত লিভার ডিজিজ বা যকৃত রোগের সবচেয়ে নির্দিষ্ট উপসর্গ। মূলত বিলিরুবিন নামক হলুদ রঙয়ের একটি পদার্থ সাধারণত লিভার দ্বারা বিকল হয়ে শরীর থেকে অপসারিত হয়ে যায়। কিন্তু যখন লিভারে সমস্যা হয় তখন শরীরে এই বিলিরুবিন অপসারিত না হয়ে পুঞ্জিভূত হতে থাকে যার দরুন আপনার চোখের সাদা অংশ ক্রমান্বয়ে হলদে হতে থাকবে।
সাধারণ কিছু লিভার রোগের লক্ষণ নিচে দেয়া হলঃ
লিভার রোগের সাধারণ লক্ষণঃ পেট ফুলে থাকা
আপনার যদি হঠাৎ পেট ফুলে যায় এবং তা যদি না কমে, তাহলে এটি সাধারণ ব্লোটিং বা পেট ফোলার সমস্যা হয়েছে ভেবে মোটেও ভুল করবেন না। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, লিভারের আশেপাশের রক্তনালীসমূহের মধ্যে সৃষ্ট চাপ থেকে পেটের ভেতর এক রকম তরল জমা হতে থাকে। তাই গ্যাস, খাবার কিংবা তরল কোনটির কারণে আপনার পেট ফুলে গেছে তা জানতে ডাক্তার দেখানো গুরুত্বপূর্ণ।
লিভার রোগের সাধারণ লক্ষণঃ হেপাটাইটিস এ, বি অথবা সি
ভাইরাস অথবা প্যারাসাইট বা পরজীবী বা জীবাণু দ্বারা লিভার সংক্রমিত হলে লিভারে প্রদাহ হয় এবং লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যায়। লিভার ইনফেকশন বা যকৃত সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ধরন হল, হেপাটাইটিস ভাইরাস। আক্রান্ত ব্যক্তির মলের সংস্পর্শে আসলে অথবা দূষিত খাবার ও পানি শরীরে গ্রহণ করলে হেপাটাইটিস এ ছড়ায়। অন্যদিকে হেপাটাইটিস বি এবং সি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রক্ত, যৌন মেলামেশা এবং অন্যান্য শারীরিক তরলের মাধ্যমে দেহে প্রেরিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞ এরা বলেন, হেপাটাইটিস সি এর জন্য ভালো চিকিৎসা আবিষ্কার হয়েছে, তাই লোকজনের হেপাটাইটিস সি আছে কিনা পরীক্ষা করা উচিত। লিভার সুস্থ রাখার বিষয় সম্পর্কে জানতে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
লিভার রোগের সাধারণ লক্ষণঃ চুলকানি থামাতে পারেন না
আপনি বিশ্বাস করুন কিংবা না করুন, একটি অসুস্থ লিভার শরীরের সর্বত্র চুলকানির উদ্রেক করতে পারে। বিশেষজ্ঞ এর ধারণা মতে তারা জানান যে, আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না, কিন্তু এটি বাইল সল্ট বা পিত্ত লবণের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়। পিত্ত হচ্ছে লিভার দ্বারা উৎপাদিত পাচন পদার্থ, কিন্তু প্রাইমারি বিলিয়ারি সিরোসিস (একটি অটোইমিউন যকৃত রোগ যা বাইল ডাক্ট বা পিত্তনালীকে বন্ধ করে দেয়) রোগে আক্রান্তদের মধ্যে পিত্ত জমা হতে থাকে এবং শরীরে উল্লেখযোগ্য উপসর্গ (যেমন- চুলকানি) দেখা দেয়।
লিভার রোগের সাধারণ লক্ষণঃ খুব ক্লান্ত লাগা
পরিশ্রম না করেও ক্লান্ত অনুভব হওয়া এটি এমন একটি উপসর্গ যা প্রায় সবসময় শরীর যে ভালো নেই তারই নির্দেশ দিবে আপনাকে। এছাড়াও লিভার ডিজিজ বা যকৃত রোগ হলেও আপনি প্রতিনিয়ত ক্লান্তি অনুভব করবেন।
লিভার রোগের সাধারণ লক্ষণঃ অতিমাত্রায় মদ পান ঝুঁকিপূর্ণ
অতি মাত্রায় ও দীর্ঘদিন যাবত অ্যালকোহল বা মদ সেবনে লিভারের অনেক ক্ষতি হতে পারে, এমনকি শেষপর্যন্ত যকৃত রোগও হতে পারে। লিভার শরীরের কেমিক্যাল ও টক্সিন দূরীকরণে সাহায্য করে, তাই প্রতিনিয়ত আপনি যদি মদ পান করে আপনার লিভারকে পাম্পিং করতে থাকেন তখন আপনি নিজেই আপনার লিভারকে ওভারটাইম কর্মে ব্যস্ত রাখছেন। যা কখনোই করা ঠিক নয়।
লিভার রোগের সাধারণ লক্ষণঃ প্রয়োজনতিরিক্ত ওজনের অধিকারী
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা আপনাকে আয়নায় যেমনভাবে দেখায় তার চেয়েও বেশি শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, চল্লিশোর্ধ্ব এবং পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বা অ্যালকোহলমুক্ত মেদবহুল যকৃত রোগ বেড়ে যায়, যা মূলত লিভারে চর্বি জমার কারণে হয়ে থাকে। মাঝেমাঝে এ কারণে সিরোসিস বা লিভারে ক্ষত হতে পারে।
লিভার রোগের সাধারণ লক্ষণঃ যকৃত রোগের পারিবারিক ইতিহাস আছে
এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ছোট শ্রেণীর যকৃত রোগ বংশগতভাবে হয়ে থাকে, তাই আপনার পরিবারের কোনো সদস্য বা একাধিক সদস্য যকৃত রোগ বা লিভার ক্যানসারে মারা গিয়ে থাকলে ডাক্তারের সামনে প্রকাশ করুন, যাতে তিনি আরো ভালোভাবে আপনার যকৃত রোগ পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
লিভার রোগের সাধারণ লক্ষণঃ বুদ্ধিভ্রষ্ট বা বিস্মরণপ্রবণ
সামান্য বিস্মরণ বা ভুলে যাওয়া ভালো বিষয় বলে বিবেচিত, কিন্তু হঠাৎ করে সবকিছু ভুলে যাওয়া কিংবা সহজেই বুদ্ধিভ্রষ্টতাকে অনপকারী ব্রেইন ফার্ট (সাময়িক বিস্মরণ) ভাববেন না। হেপাটিক এঞ্চেফ্যালোপ্যাথি (রক্ত থেকে টক্সিন অপসারণে লিভারের ব্যর্থতার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া) হচ্ছে, এমন এক অবস্থা যা লিভার শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে অসমর্থ হলে হয়ে থাকে এবং তা সাধারণত সেসব রোগীদের হয়ে থাকে যাদের দীর্ঘস্থায়ী যকৃত রোগ, সিরোসিস অথবা হেপাটাইটিস আছে।