লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে বাবুর আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও আ. লীগ নেতা নজরুল ইসলাম মোল্লার বিরুদ্ধে দূর্নীতি- নিয়োগ-বাণিজ্য, সরকারী খাস জমি দখল, রাস্তার গাছ কর্তনসহ আরো অসংখ্য অনিয়মের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর ১লা সেপ্টেম্বর রবিবার প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নিজামউদ্দিন সহ আরো অভিভাবকবৃন্দ।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী জানা গেছে, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ এর কাছের লোক পরিচয়ে নিয়োগ বানিজ্যর মাধ্যমে বিগত সময়ে প্রায় দেড়কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নজরুল মোল্লার বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্যর বিষয়ে অভিবাবকবৃন্দ ও এলাকাবাসী ইতিপূর্বে মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অঞ্চলের উপ পরিচালক বরাবর অভিযোগ করেন, উপ পরিচালক স্বাক্ষরিত স্বারক নং ৩৭.০২.৮৫০০.০০০.০৮.০০৪.২১.৪৯৫।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হওয়ার পর তার এম পি ও বেতন-ভাতা বন্ধ করা হবে না মর্মে শোকজ করা হয়েছিল। তার জবাব সন্তুষ্ট জনক না হওয়ায় উক্ত প্রধান শিক্ষক এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রয়োজনী ব্যবস্তা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট উদ্ধতন কতৃপক্ষের নিকট চিঠি পাঠানো হয়েছিলো বলে জানান, তৎকালীন লালমনিরহাট উচ্চ মাধ্যমিক জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আবুল কালাম আজাদ। দূর্নীতি প্রমানিত হওয়ার পরও নজরুল ইসলাম মোল্লা আ. লীগের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষে সমাজকল্যানমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের পরিচয় দিয়ে ম্যানেজ করেন। চাকরীতে বহাল তবিয়তে থেকে বন্ধ হয়নি তার দূর্নীতি।
অভিযোগ সুত্রে আরো জানা যায়, বাবুর আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম মোল্লা ও তার আপন ভাইয়ের ছেলে মেজবাহ উদ্দিন বিপ্লব দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যালয়কে ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে রেখেছেন। প্রতিষ্ঠানটির পুরাতন প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্য বাদ দিয়ে তার পরিবারের লোকজন কে রাতারাতি দাতা সদস্য বানিয়েছেন। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০১৯ সালে ৪ তলা আইসিটি ভবনের বরাদ্দ পায় বিদ্যালয়টি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিদ্যালয় পুরাতন ভবন নিলাম বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে সেটি নিজেই আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম মোল্লা। তিনি বিদ্যালয়ের পুরনো অফিস কক্ষের দুই রুম ও ক্লাসরুমের ৬টি কক্ষ ভেঙ্গে পুরাতন কিছু মালামাল ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন এবং বাকীটা বিক্রি করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা আত্নসাৎ করেন।
এখানেই শেষ নয়, দূর্নীতিবাজ নজরুল ইসলাম মোল্লা সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের মাধ্যমে অসহায় ও ক্যান্সার আক্রান্ত রোগির ভুয়া কাগজপাতি তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন যা ইতিপূর্বে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ হয়েছিলো, প্রধান শিক্ষক নিজ সিদ্ধান্তে রাতারাতি বিদ্যালয়ে মনগড়া কমিটি গঠন করে প্রায় দেড়- কোটি টাকা নিয়োগ বানিজ্য করেছেন। আর সেইটাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের সাথে বিআরএস ৫১২৮ দাগে ৫৩ শতাংশ খাস জমি দখল করে দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করেন ওই প্রধান শিক্ষক।
সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সময় থানার কার্যক্রম বন্ধ থাকার সুযোগে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার রাস্তার সরকারী গাছ কর্তন করেন তিনি।দূর্নীতিবাজ, ভূমিদস্যু, নিয়োগ বাণিজ্যকারী প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম মোল্লাকে অবিলম্বে পদত্যাগসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান অভিযোগকারীসহ স্থানীয়রা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কে তদন্তভার দেয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয় প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম মোল্লার সাথে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।