বিনোদন ডেস্কঃ প্রাচীন গ্রিক সাহিত্যে সাইরেন নামক এক বহুরূপী কাল্পনিক সামুদ্রিক প্রাণীর কথা শোনা যায়। সাইরেন ছিল নদীদেবতা একিলাসের কন্যা। সে মাঝ সমুদ্রে দারুণ মিষ্টি গলায় গান গাইত, আর সেই গানের আকর্ষণে নাবিকরা দিক ভুল করে পৌঁছে যেত সাইরেনের দ্বীপ ‘সাইরেনিয়া’তে। পরবর্তীতে সাইরেন সেই জাহাজ ধ্বংস করে নাবিকসহ বাকি সব মানুষকে মেরে ফেলত। ঠিক এমনই এক কাহিনী অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘লাভ, ডেথ এন্ড রোবটস’ এর তৃতীয় সিজনের আলোচিত নবম পর্ব ‘জিবারো’।
সিজনটির এ গল্পে দেখানো হয়েছে, জলাধারে বাস করতো সাইরেন নামক এক জলদেবী। মানুষকে সে তার সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে সম্মোহন করত। সাইরেন দেবীর শক্তি মূলত তার ‘কণ্ঠস্বর’। একদিন কিছু জলদস্যু সেই জলাধারের পাশে এলে সাইরেন তার কণ্ঠস্বরের জাদুতে তাদের জলাধারে টেনে নিয়ে যায়, ফলাফলে সবারই হয় মৃত্যু। শুধু বেঁচে যায় এ গল্পের মূল চরিত্র এক বধির জলদস্যু। বধির বলে সাইরেনের কণ্ঠস্বর কোনোভাবেই তাকে কুপোকাত করতে পারেনি।
তবে মূলত গল্পটির সমাপ্তি হয় উদ্দেশ্যহীন ভালোবাসার পর প্রতিশোধের মধ্য দিয়ে। বিষাক্ত সম্পর্ক সবসময় নিকৃষ্টভাবে নিশ্চিহ্ন হয়, এমনই গল্প চিত্রায়িত হয়েছে ‘জিবারো’তে।
এই পর্বের পরিচালক হলেন আলবার্টো মিয়েলগো । এর আগে অ্যানিমেশনের চমৎকার কাজের জন্যে ‘একাডেমি অ্যাওয়ার্ড’ সহ চারবার ‘এমি অ্যাওয়ার্ড’ এবং দুইবার ‘এনি অ্যাওয়ার্ড ‘ অর্জন করেছেন তিনি। সম্প্রতি সব অ্যানিমেশনের কাজগুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে তার ‘জিবারো’।
তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, এর পুরো পর্বটি সিজিআই অ্যানিমেশনে তৈরি। তাছাড়া জিবারোতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যানিমেশনের অনেক কৌশল। এতে মানুষের শরীরের সত্যিকারের চলাফেরাকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ৭২ জন সদস্যের নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে ১৫ মিনিটের এই পর্বটি নির্মিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, এ পর্বটি অ্যানিমেশনকে নিশ্চিহ্ন না করে আরও এগিয়ে নেয়া যেতে পারে, কারণ অ্যানিমেশন এখন শুধু শিশু কিশোরদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এ ছাড়া জিবারোতে পানির ঝাপটা, শরীরের নাড়াচাড়ার সাথে পরিহিত গহনার ঝলকানি, চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো দেখলে যে কেউ দ্বিধায় পড়ে যেতে পারে। কারণ এর অ্যানিমেশন এতটাই বাস্তবিক। এ ছাড়া সাইরেন পরিহিত অলংকারের কারুকার্যগুলো নেয়া হয়েছে ওয়েস্টার্ন ইউরোপ, রাশিয়া, ভারত এবং নর্থ আফ্রিকা থেকে।