এখন পৃথিবীর সবচাইতে পরিচিত দুটি শব্দ হলো লক ডাউন। বাংলাদেশেও প্রতিদিন গনমাধ্যমে লক ডাউন প্রচারিত হচ্ছে। মনে হয় যেন ” ভালোবাসি” র মত লক ডাউন’ও এখন খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু শব্দদূটির মর্মার্থ মূল্যায়িত হচ্ছেনা কোথায়ও। মূখে মাস্ক লাগানোটা এখন নতুন ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে। মূখে মাস্ক আর হাতে গ্লোভস পরলেই যে লক ডাউন মানা হয়না, সেকথা কেউ বুঝতে চায়না। ঈদে বাড়ী ফেরার দৃশ্য দেখে তেমনটাই মনে হয়েছে আমার। একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। মার্চ মাসের ১৬ তারিখ থেকে আমি গৃহে বন্দি। শুধু আমি নই আমার পুরু পরিবার গৃহে বন্দি। রমজান মাসে বাসার নীচে দোকানে যেতে হয়েছে এটাসেটা কিনতে। দোকানে ঢুকতে দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে লম্বা লাইনে। নিদৃষ্ট সংখ্যক ক্রেতার বেশী প্রবেশের অনুমুতি নেই। ব্যংক বা এ টি এম মেশিনে যাওয়ারও একই ব্যবস্থা। মাস্ক, হ্যন্ডগ্লোভস পরেও এই নিয়ম মানতে হয়েছে বাধ্যতামূলক ভাবে। আজ যেতে হয়েছে আমার মেয়ের বাসায় অন্য আরেকটি শহরে প্রায় ৩০০ কিঃমিঃ দুরে। পথেমধ্যে পানাহারের জন্য সার্ভিস ষ্টেশনে গিয়েছি। যেখানে ২৪ ঘন্টা ভির লেগে থাকে সেখানে বসার কোন ব্যবস্থা নেই। ড্রাইভথ্রো থেকে খাবার অর্ডার করে কিনতে হয়েছে কিন্তু, তারা ক্যশ নেয়নি। ক্রেডিড কার্ড অথবা ডেভিড কার্ডে পে করতে হবে। টাকায় হাত লাগে বলে এই ব্যবস্থা। গন্তব্যে পৌছেও বহুতল ভবনে ঢোকার প্রক্রিয়া সেরে যখন লিফটের কাছে গেলাম, বাধা পেলাম আবারও। দুইজনের বেশী একসাথে লিফটের উঠতে পারবেনা এবং নিদৃষ্ট দুরত্বে দাড়াতে হবে। একইভাবে ঘরে ঢুকেও মেয়ের কড়া নজরদারি ছিল সেনিটাইজিং করতে। এত কড়াকড়ির পরেও কানাডার মত দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। জীবন রক্ষায় মানূষের ভীতিটি কমছেনা। কানাডার মত উন্নত দেশেও স্বদেশী বন্ধু হারিয়েছি কারোনায়।
বাংলাদেশের চিত্রটি দেখছি ভিন্নরকম। অদৃশ্য ভাইরাসটির ভয়াবহতাটি নিয়ে কারো যেন কোনই মাথাব্যথা নেই। প্রতিদিনই সংক্রমনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ঈদের আনন্দে মানূষের কেনাকাটা আর বাড়ী ফেরার দৃশ্যটি রিতিমত আতংকের। গতকালই দেখলাম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য এবং প্রাক্তন সংসদ মকবুল হোসেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মরহুমের স্ত্রীও এখন আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। গনস্বাস্থ্যের কর্নধার স্বনামধন্য চিকিৎসক ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত। নোয়াখালীর নিজাম হাজারী, এস আলম গ্রুপের মালীকসহ আরও অনেক নাজানা মানূষের জীবনহানি হয়েছে করোনায়। সংবাদ মাধ্যমে শুধু সংখ্যাটি বলা হয়। সরকারের নিষেধ, নির্দেশ উপেক্ষা করে মানূষের চলাচল ভীতি ছড়াচ্ছে সংকা জনকভাবে। মানূষকে করোনার ভয়াবহতা বোঝানোর দায়িত্বটি ছিল শিক্ষিত মানূষের। তা না করে তারা সরকারের সমালোচন করছেন রাজনৈতিক সুযোগ নিতে। আজও দেখলাম বি এন পি দাবী করেছে সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরেছে। সরকারের ব্যর্থতার কারনেই নাকি করোনার সংক্রমন বেড়ে চলেছে। এমন বিবৃতি আর সমালোচনা কতটা সঠিক জানিনা তবে, এই সমালোচকদের জনস্বার্থে কোন ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি জাতীয় দুর্যোগে। বহু বিত্ত্বশালীরাও জনস্বার্থে এগিয়ে আসেননি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যখন প্রয়োজন তখন শিক্ষিত আর সুশীল সমাজের কর্তাব্যক্তিরা নিরব। জনস্বার্থে এগিয়ে আসেননি কেউ।
ঈদ উপলক্ষে জাতীর উদ্দেশ্যে ভাষন দিতে গিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আবেদন জানিয়েছেন মানূষের সাহায্যে এগিয়ে আসার। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা সরকার বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন অসন্তোষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। এমনটি কোনভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টি দেশের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করবে বৈ কমবেনা। অবাধ চলাচল করোনার সংক্রমন বৃদ্ধি করবে বলাই বাহুল্য। তাই আবারও নিবেদন করি, আসুন নিজেরা সচেতন হই অন্যকেও সচেতন করি।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
২৬ মে ২০২০।