সাকিব আল হাসান রুবেল, রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ মানুষের কল্যাণে কাজ করাই হচ্ছে প্রকৃত অর্থে আদর্শ মানুষের কাজ। যে মানুষ অন্য কোনো মানুষের কল্যাণে এলো না, সে মানুষ দ্বারা সমাজ উপকৃত হলো না তার জীবন অর্থহীন। যারা মানুষের জন্যে কাজ করেন, বিপদে আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ান তাদেরকে আমরা ভালো মানুষ বলি। কেবল বলিই না, মন-প্রাণ থেকে তাঁদেরকে শ্রদ্ধা করি। অন্তরের অন্তর্স্থল থেকে দোয়াও করি। তাঁদের প্রতি শুভকামনা জানাই। ভালো মানুষের সংখ্যা আমাদের সমাজে কোনো কালেই বেশি ছিলো না। খুব অল্পসংখ্যক মানুষই নিজে আলোকিত হয়ে সমাজকে আলোকিত করতে পারেন। কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের এমনি একজন মানুষ আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম মেম্বার।
আব্দুল হাকিম মেম্বার মানুষের সেবায় দীর্ঘদিন কাজ করলেও মানুষ তাঁকে ঐভাবে চিনতে পারেনি। কেননা, এই প্রচারের যুগে তিনি একজন প্রচারবিমুখ মানুষ। যেখানে অনেক প্রচারমুখী মানুষ অল্প কাজ করে বেশি প্রচারে মত্ত, সেখানে আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম মেম্বার নিজেকে আড়ালে থেকে মানুষের পাশে থাকতে দৃঢ় প্রতীজ্ঞ।
আব্দুল হাকিম মেম্বার উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর গ্রামের টাংরাপাড়ায় জন্ম গ্রহন করেন। বাবা মরহুম বারু শেখ ও মা মরহুমা বাহাতুন নেছা। আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম মেম্বার ধনাট্য ব্যাক্তি হওয়ায় অনেকে আসেন তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বলতে। আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম মেম্বার হাসিমুখে তাদের কথা শোনেন। তাঁকে সবসময় এলাকার অস্বচ্ছল মানুষদের সহযোগিতা করতে দেখা যায়। নীরবে নিভৃতে থেকেই তিনি এসব কাজ নিরলসভাবে করে যাচ্ছেন।
শিক্ষার প্রতি তাঁর গভীর মনোযোগ রয়েছে। যাদুরচর ইউনিয়নের শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদান অনবদ্য। তিনি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, মসজিদ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন এবং আছেন। তিনি ইতিমধ্যে পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি হাজী এম এ হাকিম আইডিয়াল মহিলা কলেজের নির্বাহী কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।
একবার তাঁর সাথে কথা বলতে গেলে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষের পাশে থাকতে পারছি এটাই বড় বিষয়। মানবিক বোধ থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছি। সুশিক্ষা অর্জন করা ছাড়া কোনো মানুষই ভালো কিছু করতে পারে না। তাই ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্যে সুশিক্ষা অর্জনের বিকল্প নেই। আমাদের নবী কারিম (সঃ) বলেছেন, জ্ঞান অর্জনের জন্যে সুদূর চীন দেশে যাও। সামাজিক উন্নতির জন্যেও শিক্ষার প্রয়োজন অনেক। এলাকার সন্তানদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত থেকেছি। যদি শিক্ষার্থীরা এখান থেকে পড়াশোনা করে ভালো কিছু করে, মানুষের সেবায় নিজেকে নিবেদিত করে তবেই এসব প্রতিষ্ঠান গড়া সার্থক হবে। আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম মেম্বারের কথা শুনে ভালো লাগে। অনেক মানুষেরই বিত্ত থাকলেও চিত্ত থাকে না। ফলে তাদের অর্থ কেবল অর্থই থাকে, কখনো কখনো অনর্থের মূল হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ভালো কাজে লাগে না।সম্প্রতি অনেকক্ষণ কথা হয় তাঁর সাথে।
এছাড়া কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন তাঁর কয়েকটি ইচ্ছের কথাও। তিনি বললেন, ‘অন্য সবার মতো আমিও সুন্দর একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। আমি চাই সমাজ থেকে বাল্যবিবাহ দূর হোক। আমাদের শিক্ষার্থীরা ইভটিজিং, জঙ্গীবাদ, মাদক থেকে অনেক দূরে থাকুক। তারা আলোকিত মানুষ হোক। প্রত্যেকেই তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করে মা-বাবা পরিজনকে সুখি রাখুক। পড়াশোনায় কেউ মনোযোগী হলে সে বিপথগামী হবে না। যার মধ্যে শিক্ষার প্রকৃত আলো আছে, সংস্কৃতির প্রতি গভীর টান আছে সে দেশ ও সমাজের জন্যে ভালো কিছু করবেই। তাঁর কথাগুলো শুনতে শুনতে ঘোর লাগে। কত সহজ করে বলে গেলেন। তাঁর মতো মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে নিঃসন্দেহে সমাজটা আরো সুন্দর হতো। ধনী-গরিব বৈষম্যও থাকতো না। সমাজ থেকে অপরাধও কমতো।
কথা শেষে আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম মেম্বারের কাছ থেকে বিদায় নিই। ফিরতে ফিরতে খানিক ভাবি। এমন ভালো মানুষ সত্যিই আমাদের খুব প্রয়োজন, যে মানুষের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হবে, অস্বচ্ছলরা উপকৃত হবে, অসহায়দের মুখে হাসি ফুটবে। আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম মেম্বার অনেকেরই চোখ খুলে দিতে পারেন। তাঁর সুন্দর কাজগুলি আগামী দিনেও অব্যাহত থাকুক এই কামনা করছি।