করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যস্ত থাকার সুযোগ নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবিরসংলগ্ন পাহাড়গুলোতে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিছু ডাকাতদল। দস্যুতা, স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ,হত্যাসহ নানা অপরাধের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল তারা তুলে নিয়ে গেছে স্থানীয় চার বাংলাদেশি কৃষককে। মুক্তিপণ না পেয়ে এদের একজনকে হত্যা ও অপর দুজনের বাড়িতে মুক্তিপণ চেয়ে না দিলে হত্যার হুমকি পাঠিয়েছে ডাকাত দলের সদস্যরা।
পুলিশ এদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলেও কিছু রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের সহযোগিতা পাওয়ায় তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয়রাসহ রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেছে, পাহাড়ে আশ্রয়স্থল বানিয়ে খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও মানবপাচার করছে এসব ডাকাত দল। তবে তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ তারা মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করছে। আর তাদের সহযোগিতা করছে প্রকাশ্যে থাকা রোহিঙ্গাদের একটা চক্র।
এছাড়াও এসব ডাকাতদলের মাধ্যমে কোনও কোনও পাহাড়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে অপহৃতদের গুলি করে হত্যার নজিরও রয়েছে।
জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় লোকজন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড় ঘিরে ৪-৫টি সংঘবদ্ধ ডাকাত বাহিনী সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে ডাকাত জকির আহমদ ওরফে জকির ও আবদুল হাকিম বাহিনীর দাপটে কাঁপছে রোহিঙ্গা শিবির ও সংলগ্ন এলাকার লাখো মানুষ এমন তথ্য দিয়েছেন রোহিঙ্গারা। তবে কেউ প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না।
এদিকে স্থানীয় আক্তার উল্লাহ (২৪) নামে এক কৃষককে গত ৩০ এপ্রিল অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করেছে রোহিঙ্গা ডাকাতরা এমন অভিযোগ করেছে তার পরিবার। একই এলাকার শাহ মোহাম্মদ শাহেদ (২৫), মোহাম্মদ ইদ্রিস (২৭) নামে আরও দুই কৃষককে তুলে নিয়ে গেছে তারা।
এদিকে ডাকাতদলের দ্বারা অপহরণের ঘটনার খবর স্থোনীয় পুলিশ অবগত। তাদের উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। রবিবার (৩ মে) দিনভর এ অভিযান চলে।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘অপহৃতদের উদ্ধারে পুলিশের অভিযান চলছে। ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড়ি অঞ্চলে কোনও অপরাধীর ঠাঁই হবে না। বিশেষ করে পাহাড়ি ডাকাতদের ধরার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।’
এদিকে একাধিক রোহিঙ্গা নেতা জানিয়েছেন, ‘করোনাভাইরাসে যখন সারাদেশ লকডাউনে সেসময়ে ক্যাম্পগুলোতে বেড়ে গেছে ডাকাত বাহিনীর আনাগোনা। ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড়ি ডাকাতদের অপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে ক্যাম্পে আগের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের নজরদারি কমেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গভীর রাতে অস্ত্র-শস্ত্রসহ ক্যাম্পে চলাচল করছে তারা। তাদের ভয়ে বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবার ছেড়ে অন্য ক্যাম্পে চলে যেতে আশ্রয়স্থল খুঁজছে।
এ বিষয়ে র্যাব-১৫ সিপিসি-১, টেকনাফ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অ্যাডিশনাল এসপি বিমান চন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড় ঘিরে ডাকাত গ্রুপসহ অন্যান্য যেসব অপরাধ চক্র সক্রিয় রয়েছে, তাদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে। যে কোনওভাবে ডাকাতদের নির্মূল করা হবে।’