ভয়ানক তথ্য বেড়িয়ে এসেছে রিজেন্টের করোনা রিপোর্ট নিয়ে। এজন্য নেয়া হতো অভিনব সব পদ্ধতি। নানা ছলচাতুরী তো ছিলই। এক করোনা রিপোর্ট করাতে গিয়ে আরো করাতে হতো একাধিক ভিন্ন রিপোর্ট। উত্তরা অফিসার্স কোয়ার্টার এলাকার আশরাফ আলীও রিজেন্টের এ ফাঁদে পড়েছিলেন। তার পরিবারের ছয় সদস্যের করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহ করতে বাসায় যান রিজেন্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম শিবলী। নমুনাও নিয়ে যান। প্রতিজনের করোনা রিপোর্টের জন্য চার হাজার টাকা। সঙ্গে আসা কয়েকজনকে একশ’ টাকা করে দিতে হয়েছে বকশিস। কিন্তু করোনা পরীক্ষা করাতে নমুনা নিলেও তাদের নিয়ে আরো নয়টি টেস্ট করান প্রতিষ্ঠানটি। একদিনে বিল করেন ৫২ হাজার টাকা। বাকি আটটি টেস্ট করানোর কথা ছিলো না তাদের।
আশরাফ আলী বলেন, মোট ৫২ হাজার টাকা বিল দেয়া হয়। তখন আমরা কোনো রকম ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে সেখান থেকে ফিরে আসি। কিন্তু পরে ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন- এই রিপোর্টগুলো ভুয়া দিয়েছিলো রিজেন্ট হাসপাতাল। আরেক ভোক্তভোগী সাইফুল আলম। তিনি জানান করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে তিনি পরীক্ষা করাতে চান। তার পরিবারেরও কয়েকজনের একই ধরনের উপসর্গ ছিল। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে গত ২৭শে জুন হাসপাতাল থেকে তার বাসায় যান নমুনা সংগ্রহ করতে। ৬ জনের নমুনা নিয়ে ফি হিসেবে সাড়ে চার হাজার টাকা করে ২৭ হাজার টাকা নেয়া হয়। এজন্য কোনো রশিদ না দিয়ে নিজের মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে আসেন ওই কর্মকর্তা। ২৯শে জুন নমুনা পরীক্ষার ফল পান সাইফুল। ই-মেইল করা রিপোর্টটি ছিলো রাজধানীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইপিএইচ) প্যাডে। ই-মেইলে নমুনা সংগ্রহের সাইট হিসেবে রিজেন্ট হাসপাতাল ও রেফার্ড বাই রিজেন্ট হাসপাতাল লেখা ছিল। নমুনা পরীক্ষায় ৬ জনের মধ্যে দু’জন পজিটিভ ও ৪ জনের নেগেটিভ আসে। রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ জানালে ৩রা জুলাই ফের তাদের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল দেয়া হয়। এবার তাদের নমুনা পরীক্ষার ফল আসে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোস্যাল মেডিসিনের (নিপসম) ওয়েবসাইটে। তবে এবার আলমের পরিবারে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৪ জন পজিটিভ ও ২ জন নেগেটিভ। আগের বারের ৪ জনেরই রিপোর্টে নেগেটিভ ছিলো। শুধু তাই নয়, নিপসমে এই ৬ জনের নমুনা সংগ্রহের তারিখ ২রা জুলাই দেখানো হলেও ওই দিন আলম বা তার পরিবারের কারো কোনো নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি।
শুধু আশরাফ বা সাইফুল আলম নয় এরকম হাজারো রোগীর সঙ্গে প্রতারণা ও ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে আসছিলো রিজেন্ট হাসপাতাল। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিউটের কর্মকর্তা ও টেকনোলজিস্টদের স্বাক্ষর নকল করে ওই প্রতিষ্ঠানের প্যাডে করোনার রিপোর্ট দিতো রিজেন্ট হাসপাতাল। বিষয়টি নিয়ে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারাও কয়েকবার জানিয়েছে তাদের প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ভাইরোলজিস্ট ডা. খন্দকার মাহবুবা জামাল বলেন, মানুষ আমার কাছে অনেকে ফোন করে অভিযোগ জানাতো। আমার স্বাক্ষর নকল করে রিজেন্ট জনস্বাস্থ্যের প্যাডে রিপোর্ট দিতো। আমি যতটুকু জানি আমাদের এখান থেকে রিজেন্ট কমপক্ষে চারশ’ টেস্ট করিয়েছে। এছাড়া আমার নাম ও স্বাক্ষর নকল করে তারা ভুয়া রিপোর্ট দিতো। আমি আমার প্রতিষ্ঠানকে বলেছিলাম রিজেন্টের নমুনা যেন আমাদের না দেয়া হয়। তারা টেকনোলজিস্টের স্বাক্ষর নকল করেছে। এটা আমাদের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির রেপুটেশন খারাপ হয়। এদের শাস্তি হওয়া উচিৎ।
গণমাধ্যমের সংবাদে উঠে আসে আরো এক ভুক্তভোগীর কথা। করোনা আক্রান্ত হয়ে রিজেন্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, অক্সিজেন না নিলেও ২১ হাজার টাকা অক্সিজেন বিল ধরেছিলো প্রতিষ্ঠানটি। দুই লাখ টাকা গুনতে হয়েছে তাকে।
তিনি বলেন, যখন আমার কাছ থেকে বিল পেয়ে গেছে তখন ভুয়া নেগেটিভ সনদ দিয়ে আমাকে তারা হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে।