প্রাণঘাতী করোনা মহামারির মধ্যে অভিবাসীদের নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দিয়ে মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি নাগরিক রায়হান কবিরকে অগাস্টের শেষে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে দেশটির সরকার।বুধবার মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল দিজাইমি দাউদ দেশটির গণমাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল দিজাইমি দাউদের বক্তব্যের বরাত দিয়ে স্থানীয় গেজেট ও দ্য স্টার জানিয়েছে, মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশের পরবর্তী ফ্লাইট যাবে ৩১ অগাস্ট। সেই ফ্লাইটে তাকে পাঠানো হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাউদ বলেন, রায়হান কবিরের বিষয়ে তদন্ত শেষ করে করেছে পুলিশ এবং তদন্ত প্রতিবেদন পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, তার ভ্রমণের পাস বাতিল করা হয়েছে। তদন্ত চূড়ান্ত হলে আমরা তাকে বাংলাদেশে পাঠাব।
ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি রায়হানকে মালয়েশিয়ায় ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করা হবে বলেও জানিয়েছেন দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রধান। এর ফলে রায়হান পরে আর কখনও মালয়েশিয়ায় ঢুকতে পারবেন না বলে জানান দাউদ।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জুলাই আল জাজিরা অভিবাসীদের নিয়ে ‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়া’স লকডাউন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, মহামারি করোনা মোকাবিলায় মালয়েশিয়া সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে সেখানের অভিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ওই প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন রায়হান কবির। সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর দেশটির সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর ২৪ জুলাই রায়হানকে গ্রেফতার করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশটির সরকারের কর্মকর্তারা আল জাজিরার ওই খবর ‘ভুল, বিভ্রান্তিকর এবং অন্যায্য’ বলে দাবি করেন। এ ঘটনায় আল জাজিরার বেশ কয়েকজন কর্মীকেও ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ তুলেছে, দেশটির সরকার গণমাধ্যমের প্রতি দমনমূলক আচরণ করছে।
এদিকে, মালয়েশিয়ার মানবাধিকার কর্মীরা তার গ্রেফতারের পর দেশটির সরকারের সমালোচনা করেছে। রায়হান কবিরকে ‘স্পষ্টভাষী’ উল্লেখ করে তাকে মুক্তি দেয়ার আহবান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
অন্যদিকে, রায়হানকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবির মধ্যে বুধবার তাকে ফেরত আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছে রায়হান কবিরের পরিবার।