মোঃ জহির হোসেন, লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভাসহ উপজেলার ১০টি ইউপিতে বসবাসরত প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র সরকারি ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র অপারেশন থিয়েটার গত ২৪দিনের বেশি সময় ধরে বন্ধ। এই হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব না হলে প্রসূতিদের লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তবে প্রত্যন্ত গ্রামের প্রসূতিদের রাতে প্রসবব্যথা শুরু হলে তাঁদের জন্য লক্ষ্মীপুর যাওয়া খুবই কষ্টকর। বাধ্য হয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে যেতে হয়। ক্লিনিকের খরচ জোগাতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে নিরিহ পরিবারগুলো।
অপরদিকে, এসুযোগে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো তিনগুন হারে টাকা আদায় এবং দালালদের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন অসহায় প্রসূতি রোগীরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৭ মে অপারেশন থিয়েটার চালুর পর প্রায় ৪ বছর আগে ডাক্তার না থাকায় এক মাস তা বন্ধ ছিলো। পরে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আবার চালু হলে চলতি বছরের গত ১৬ জানুয়ারী গাইনি ডাক্তার শামিমা নাসরিন ঢাকার সরোয়ার্দি হাসপাতালে বদলির কারনে ১৮ জানুয়ারী তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে আর চালু করাই সম্ভব হয়নি। বন্ধ হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত গত চার মাসে প্রায় ৩’শ প্রসূতি নরমাল ডেলিভারি সেবা দেয়া হয়। এতে ডাক্তার, রোগী ও তাদের স্বজনরা মহাখুশি ছিলেন।।
এছাড়াও অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম চালু করার জন্য অনুমোদিত পদের বেশির ভাগই শূন্য। গাইনি কনসালট্যান্ট, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারী), মেডিটেক রেডিওলোজীর মত গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য। নতুন আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কর্মচারি না থাকায় তার সুফল মিলছে না। ফলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা ব্যহত হচ্ছে বলে জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাক্তার মোবারক হোসেন জানান।
গত মঙ্গলবার উত্তর চর বংশী ইউনিয়নের মো. মফিজ উল্লা (৪৩) তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। কিন্তু গাইনি চিকিৎসক না থাকায় তাঁকে যেতে হয় স্থানীয় একটি ক্লিনিকে। তিনি বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে হয়রানি হলেও খরচ কিন্তু কম। এদিকে ক্লিনিকে খরচ বেশি। বাধ্য হয়ে স্ত্রীর কথা বিবেচনা করে তাঁকে ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন বলেন, গাইনি ডাক্তার (ওটি) শামিমা নাসরিন ঢাকার সরোয়ার্দি হাসপাতালে বদলি হওয়ার কারনে এবং সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে বর্তমানে সকল প্রকার অপারেশন বন্ধ রয়েছে।
সিভিল সার্জন আহাম্মদ হোসেন বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। এটাতো অবশ্যই দেখতে হবে। আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।