অলিউর রহমান নয়ন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : রাষ্ট্রীয় মার্যাদায় চির নিদ্রায় শায়িত হলেন কুড়িগ্রামের কৃতিসন্তান পুলিশ কর্মকর্তা পিয়ারুল ইসলাম।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১ টায় হারাগাছ উপজেলার সিগারেট কোম্পানির বাজারে এক ব্যক্তি মাদকদ্রব্য ইয়াবা টাবলেট বিক্রি করছেন এমম সংবাদ পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্সসহ অভিযানে যান রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হারাগাছ থানার এএসআই পিয়ারুল ইসলাম। ঘটনাস্থল থেকে মাদক বিক্রেতা পারভেজ রহমান পলাশকে আটক করেন। আটক অবস্থায় মাদক ব্যবসায়ী পলাশ তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এএসআই পিয়ারুল ইসলামের বুকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে শনিবার সকাল সোয়া ১১টায় তার মৃত্যু হয়।
পিয়ারুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামে। বাবা আব্দুর রহমান মিন্টু একজন স্কুল শিক্ষক মা গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে নিহত পেয়ারুল ইসলাম সবার বড়। বৈবাহিক জীবনে দুই পুত্র সন্তানের জনক নিহত এএসআই পেয়ারুল ইসলাম। বড় ছেলে হাম্মামের বয়স ৬ ছোট ছেলে আব্রাহামের বয়স ২ বছর।
রংপুর মেডিকেল থেকে বিকেল চারটায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে তার মরদেহ নিয়ে আসে। সেখানে তার প্রথম জানাযা নামাজের পূর্বে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ তাকে গার্ড অফ অনার প্রদান করেন। গার্ড অফ অনার শেষে তার কফিনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আব্দুল আলীম মাহমুদ, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, পুলিশ ট্রেনিং কমান্ডেন্ট বাসুদেব বণিক, রংপুর জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার, পিবিআই পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ আরএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগ, রংপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট শাফিয়ার রহমান শফি ও সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি সহ পুলিশ সদস্যবৃন্দ ও সর্ব স্তরের সাধারণ মানুষ।
পরে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। এএসআই পেয়ারুলের মরদেহবাহী এম্বুলেন্স টি তার গ্রামের বাড়িতে আসলে মহুর্তেই শোকের মাতম পড়ে যায় মা-বাবা আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের মাঝে। তার অবুঝ শিশু বাবার নিথর দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে। অবুঝ শিশু কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না তার বাবা তার সাথে কথা বলছেন না কেন। তার মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। সন্তানের অকাল মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মা। স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ শুনেই স্ত্রী হাবিবা সুলতানা হয়েছেন শয্যাশায়ী।
চারিদিকে শুধু শোকের মাতম। মরদেহবাহী গাড়িটি বাড়িতে পৌছালে তার বাড়ির পাশে চন্দ্রপাড়া স্কল মাঠে রাত সাড়ে নয়টায় দ্বিতীয় জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ গ্রহণ করেন রাজারহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ সোহরাওয়ার্দী বাপ্পী,রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার আলতাফ হোসেন, হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী ও রাজারহাট থানার ওসি রাজু সরকার সহ কয়েক হাজার মুসল্লি।
জানাযা নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের উদ্দেশ্য হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী নিহত এএসআই পিয়ারুলের বীরত্বের কথা বণর্ণা করেন এবং তার পরিবারের প্রতি গভীর দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। দ্বিতীয় জানাযা নামাজ শেষে গ্রামের মসজিদের পাশেই তাকে সমাধিত করা হয়।