ইসরায়েলি হামলার মুখে গাজার সর্বদক্ষিণের রাফা শহর থেকে কমপক্ষে তিন লাখ ফিলিস্তিনি পালিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ জানিয়েছে- ইসরায়েল গাজার দক্ষিণে তার আক্রমণ আরও তীব্র করেছে। সেখানে হামাস যোদ্ধাদের সাথে তুমুল লড়াই চলছে তাদের। এরই মধ্যে রাফা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে কমপক্ষে তিন লাখ ফিলিস্তিনি।
জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় এ নগরীতে ব্যাপক অভিযান চালানো হলে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) অনুমান করে প্রায় ৩ লাখ ফিলিস্তিনি রাফা থেকে পালিয়েছে। কারণ ইসরায়েল সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক এবং অমানবিক বাস্তুচ্যুতি অব্যাহত রেখেছে।
গাজা উপত্যকার বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ সংস্থা প্যালটেল রোববার বলেছে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের কারণে দক্ষিণ গাজার কিছু অংশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে এবং ক্রুরা ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ পরিষেবাগুলো পুনরুদ্ধার করার জন্য কাজ করছেন।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের কর্মীরা যুদ্ধের সময় গাজায় কাজ করছে। এই সংস্থাটিও সোশ্যাল মিডিয়াতে বলেছে, রাফা ইন্দোনেশিয়ান ফিল্ড হাসপাতালের শেষ ২২ রোগীকে অন্যান্য চিকিৎসাকেন্দ্রে রেফার করা শুরু করেছে তারা। কারণ তারা ‘আর তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।’
গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রায় পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে এবং রাফা শহরের তিনটি বড় হাসপাতালের মধ্যে যে একটি হাসপাতাল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিযানের আগে আংশিকভাবে কাজ করছিল সেটিও ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে গত সোমবার থেকে রাফা ঘিরে তীব্র বোমাবর্ষণ এবং লড়াই চলছে। মূলত গত সপ্তাহের প্রথম দিকে ইসরায়েলি সৈন্যরা তাদের অভিযানের শুরুতে মিসরের সাথে রাফা ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং পরে তা বন্ধ করে দেয়। এতে করে সাহায্য প্রবাহও বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, তখন থেকে রাফা শহরে ইসরায়েলি হামলায় কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো গত শনিবার রাফা এবং উত্তর গাজার একটি অংশে লিফলেট ফেলে মানুষকে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রাফাতে অবস্থানরত গাজাবাসীকে অস্থায়ীভাবে ‘আল-মাওয়াসিতে সম্প্রসারিত মানবিক এলাকায়’ সরে যেতে বলেছে। রাফা শহরের উত্তরের এই উপকূলীয় এলাকাটি মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য নিরাপদ বা সুসজ্জিত নয় বলে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল শনিবার গভীর রাতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে লিখেছেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের রাফার অনিরাপদ অঞ্চলে সরিয়ে নিতে বাধ্য করা অসহনীয়। এটি ভয়াবহ মানবিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।’
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম