বৃহত্তর দিনাজপুর তথা দিনাজপুর, পঞ্চগড়ের মতো ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহে হাড় কাঁপানো কনকনে বাতাস ও ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে উপজেলার সকল শ্রণি পেশার মানুষ। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ছিন্নমূল হতদরিদ্র খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় শীতের তীব্রতায় ঘরের বাইরে যাতে পারছেনা নিম্ন আয়ের পেশাজীবি মানুষ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে গত শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাণীশংকৈল উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা মানুষের সহ্য সীমার বাইরে। কনকনে শীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া ও অসহায় মানুষের দূর্ভোগের সীমা চরমে ঠেকেছে।
পৌর শহরসহ বিভন্ন গ্রাম অঞ্চলের ছোট ছোট হাট বাজার, রাস্তায় রাস্তায় শীত নিবারণে মানুষকে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি বেড়েছে সোয়েটার, জ্যাকেট, শাল-চাদর, মাফলার-কানটুপিসহ গরম জামা-কাপড়ের কদর। ফলে বাজারে গরম পোশাকের চাহিদাও বেড়েছে অনেক।
নিম্ম ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের ফুটপাতের গরম কাপড়ের সেকেন্ডহ্যান্ড দোকান গুলোতে কাপড় কিনতে ভীড় করতে দেখা গেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন দুস্থ ও হতদরিদ্র মানুষ। সন্ধ্যা থেকে সারারাত এবং দিনভর পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে থাকে চারদিক। শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বেড়েছে বৃদ্ধ ও শিশুদের জ্বর, সর্দি ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ।
রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আর এমও ডাঃ ফিরোজ আলম জানান গত এক সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু রোগীদের সংখ্যা অনেক গুণে বেড়ে গেছে। আমরা নিবিড়ভাবে এসব রোগীরদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এবং অনেকে সুস্থ হয়ে ইতোমধ্যে বাড়ি ফিরছেন।
মীরডাঙ্গী এলাকার ভ্যানচাল নুর ইসলাম জানান, গত ৫ দিন ধরে একদম আয় ইনকাম নাই, আগে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ শত টাক আয় করতাম কিন্ত এই শীতে পেসেন্জান পাইনা। দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকার বেশি আয় হয় না। উপজেলার রানী দিঘি গুচ্ছ গ্রামের ষাটোর্ধ সামসুল নামে এক ভিক্ষুক বলেন, শীতে ভিক্ষা করতে বের হতে পারিনা ৬ জনের সংসার প্রচন্ড কষ্টে আছি। আল্লাহই ভালো জানে কি ভাবে চলবো। রাস্তায় চলাচল করতে গেলে গাড়ির আলো থাকা সত্বেও ১০ হাত সামনে কিছুই দেখা যায় না। পাড়ায়-মহল্লায় ও রাস্তা ঘাটে ছিন্নমূল অসহায় মানুষদের আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এই শীত ও ঘন কুয়াশার কবল থেকে রেহাই পাইনি ধানের বীজতলা, বিভিন্ন জাতের রবি শস্য ও সবজির ক্ষেত।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান শীতকালীন ফসল সরিষা, গম, আলু, বেগুন, পেঁয়াজ, মরিচ ও বোরো ধানের বীজতলা শীত বা কুয়াশায় থেকে রক্ষা পেতে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৮:৪৩ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি