ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে গত টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার প্রকোপে এবং খরা ও বৃষ্টির বৈরী আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় সবজির বাজারে চরম উর্ধগতি। উপজেলায় হঠাৎ ২০০ টাকা কেজি থেকে কাঁচা মরিচের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায়। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ।
বিশেষ করে কাঁচা মরিচের ঊর্ধ্বমুখী দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার সাধারণ মানুষ। নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের কাছে কাঁচা মরিচ কেনাটা অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো। ক্রয় করতে না পেরে এ মরিচের স্বাদ তাদের কাছে এখন স্বপ্নের মতো এমনটিই জানালেন কলেজ হাটে বাজার করতে আসা ক্রেতা, আসমা বেগম, বেলি আকতার, হানিফ আলী, ও রহিসুল ইসলাম। ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়া বিভিন্ন বাজারে প্রকার ভেদে খুচরা বিক্রি দোকানদারেরা কাঁচা মরিচ ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে।
ক্রেতারা বলছেন, বাজারে এখন সবচেয়ে দামি পণ্য কাঁচা মরিচ। গতকাল বুধবার (০৯) অক্টোবর উপজেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ক্রেতারা জানান,সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছি আমরা সাধারণ ক্রেতারা। বিক্রেতারা জানান, বছরের শুরুতে প্রচণ্ড খরা, আবার গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে ফলন বিপর্যয়ে উৎপাদন কম হওয়ায় কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে গেছে।
এছাড়াও উত্তরবঙ্গে এবছর মরিচের আবাদ কম হয়েছে। পৌরশহরের শিবদিঘি কাঁচা বাজারে গিয়ে কথা হয় ক্রেতা আলতাফুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, ‘বাজারে কাঁচা মরিচের দাম শুনলে কেনার স্বাদ মিটে যায়। আগে যেখানে ২০ টাকার মরিচ কিনলে আড়াইশ গ্রাম পেতাম, সেখানে এখন ১০০ টাকা দিয়ে আড়াইশ গ্রাম নিতে হচ্ছে। বাজারে সব থেকে এখন দামি পণ্য কাঁচা মরিচ।
ক্রেতা মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘কাঁচা মরিচের দাম অনেক বেশি। কাঁচা মরিচ ছাড়াই রান্না করা ছাড়া উপায় নেই। এত দাম দিয়ে কেনা আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।’ উপজেলার বন্দর সাপ্তাহিক কলেজ হাটে কয়েকজন কাঁচা মরিচ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা সপ্তাহের বৃষ্টি, স্থানীয়ভাবে মরিচের আবাদ কম এবং চাহিদা অনুযায়ী বাইরে থেকে আমদানি কম হওয়ায় দাম এতটা বেড়ে গেছে।
উপজেলা কাঁচা বাজারের সামনে কথা হয় বাজার করতে আসা ভ্যানচালক আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মরিচের কেজি ৪০০ টাকা। ডিমের হালি ৬০ টাকা, সবজি প্রতিটির দাম প্রায় দিগুণের কাছাকাছি। সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এভাবে পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে আমরা যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, আমাদের বাজার করে খেয়ে বেঁচে থাকার মতো অবস্থা আর থাকবে না।’
শিবদিঘি পৌর বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা মাসুদ রানা জানান, তার দোকানে পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে দেশি ১১০ টাকা ও ভারতীয় ১০০ টাকা, পটল ৭০ টাকা,আলু ৬০ টাকা,কচু ৭০ টাকা, রসুন ২৬০ টাকা, আদা ২৮০ টাকা,করলা ৮০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, ফুলকপি ৮০ টাকা, ঢেড়স ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০-৬০ টাকা, সোলা কচু একটার দাম ৩০ টাকা,(ছোট কচু) পেঁপে ৪০ টাকা, পুঁই শাক, পাট শাক, কচুশাক, কলমিশাক বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা কেজি দরে। এছাড়াও দাম বেড়েছে চিচিঙ্গা, বরবটি, হলুদসহ আরো বেশ কয়েকটি পণ্যের। সবমিলিয়ে কাঁচা বাজারসহ মাছ মাংসের দাম অস্থির, চরম বিপাকে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সহীদুল ইসলাম জানন,অতি বৃষ্টি ও খড়ার কারণে আবহাওয়া তারতম্যের ফলে সবজি ফসলের বেশ ক্ষতি হয়েছে তাই বর্তমানে দাম বেশি। শীতকালীন সবজির দ্রুত বাজারে চলে আসবে। ফলে বাজারে সবজিব দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৯:৩১ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজ বাপ্পি