বর্তমান সরকারের মেয়াদ পুর্ন হবে ২০২৩ সালের ডিসম্বরে। অর্থাৎ দেড় বছর বাকি রয়েছে নির্বাচনের। সঙ্গতভাবেই নির্বাচনী আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। সকলেই বলছে আগামী নির্বাচন কঠিন হবে। যারা প্রতিদিন সরকার পতনের হুঙ্কার দেয় তাদের কারোই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হবার সক্ষমতা নেই। তাদের দাবীর পক্ষে জনগনকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি।
অপরদিকে টানা ৩ মেয়াদে সরকার দেশে ব্যপক উন্নয়নের সাফল্য দেখিয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মান করে বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে। অর্থনৈতিকভাবেও বাংলাদেশ এখন অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল অবস্থানে। তার পরেও অনেকের ক্ষোভের কারনটি দলীয় বিশৃংখলা। এম পি মন্ত্রীদের উদাসীনতা। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় দলের নেতাকর্মীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। সরকারী দলের কর্মী হয়েও দলের পরীক্ষিত কর্মীরা হামলা মামলার ভয়ে এলাকায় নেই। দেশের সব পর্যায়ে সম্মেলন হলেও অনেক ত্যগী কর্মী জায়গা পায়নি দলে। এম পি মন্ত্রীদের পকেট কমিটিতে স্থান পেয়েছে বহু বহিরাগতরা। এদের মধ্যে জামাত বি এন পি’র সদস্যরাও রয়েছে। এলাকায় এখন তারাই ক্ষমতাবান এবং দল পরিচালিত হয় নব্য আওয়ামী লীগারদের দারা।
অনেক নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে দলের ত্যগী কর্মীবাহিনী নিস্কৃয় থাকলে ফলাফল ভিন্ন রকম হবে। সুযোগটি নিবে জামাত বি এন পি সহ আওয়ামী লীগের শত্রুরা। দলের অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছে। জামাতের নিবব্ধন নেই আর বি এন পি সংগঠিত নয়। কিন্তু তাদের ভোট ব্যংক বিদ্রোহীদের দখলে। নির্বাচনে জোট হবে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে। অবস্থা অনুমান করে জাতীয় পার্টিও এখন এককভাবে নির্বাচন করার শ্লোগান দিচ্ছে। জাতীয় পার্টির এককভাবে সরকার গঠনে সমর্থ নয় কিন্তু বিদ্রোহীদের সাথে ঐক্য হলে ভোটের চিত্র বদলে দিতে পারবে।
জি এম কাদের ক্যরেশম্যটিক নেতা নয় তবে চালাক এবং বুদ্ধিমান। ১৪ বছর আওয়ামী লীগের সংগে থেকে সুবিধা ভোগ করেছে। প্রস্তাব পেলে ভিন্ন জোটে যাবেনা তা গ্রান্টি দিয়ে বলা যাবেনা। জামাতেরও একটি ভোট ব্যংক রয়েছে। সেই ভোট কখনোই আওয়ামী লীগের পক্ষে যাবেনা। জামাতের সদস্যরাও কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে নিশ্চিত। ড: কামাল হোসেন, ডা: জাফরুল্লাহ, ডা: বদিরুদ্দোজা এবং ড: ইউনুসরা বিদেশীদের সাথে আতাত অব্যহত রেখেছে। আ স ম আব্দুর রব আর মাহামুদুর রহমান মান্নারা সরকার বিরোধী প্রচারনায় লিপ্ত। সরকারী দলের নেতারা কেউ এদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেনা। বরং আবার নির্বাচিত হতে শত্রু পক্ষের সাথে গোপন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ দলের বিশাল কর্মী বাহিনী ঐক্যবদ্ধ থাকলে সবাই মিলেও আওয়ামী লীগের বিজয় ঠেকাতে পারবেনা।
কুমিল্লার মেয়র নির্বাচনে এম পি বাহারের ভুমিকা নিয়ে গনমাধ্যমেই আলোচনা হয়েছে এবং শাক্কু নিজেই দাবী করেছে সে বাহারের প্রার্থী। বহু নাটকীয়তার পর বাহার নীরব হলেও আরফানুল হক রিফাত মাত্র ১৩৬ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে। বি এন পি’র দুই বিদ্রোহী প্রার্থী মিলে যে ভোট পেয়েছে আরফানুল হক তার অর্ধেক ভোট পেয়েছে।
একই চিত্র নারায়নগঞ্জেও ছিল। আইভি প্রকাশেই দাবী করেছে তৈমুরকে দাড় কিরিয়েছে শামিম ওসমান। তৈমুর নিজেও নিজেকে শামীমের লোক বলেছে। কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়নগঞ্জে গিয়ে প্রকাশ্য জনসভায় শামিম ওসমানকে হুমকি ধমকি দিয়েছে। তার পরেও তৈমুর যত ভোট পেয়েছে শামীম আইভির সঙ্গে নির্বাচন করে তত ভোট পায়নি। ১ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে হেরেছিল। এমন চিত্র জাতীয় নির্বাচনে হলে নির্বাচনের ফলাফল ভীতির কারন বটে।
বি এন পি শ্লোগান দিয়ে গোপনে বিদ্রোহীদের সাথে আতাত করছে না বলা যাবেনা। জামাতও অর্থ লগ্নি করবে নির্বাচনে। তাদের উদ্দেশ্য ক্ষমতা দখল নয়, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা। সেই লক্ষ্য পুরনে যে কোন দলকেই তারা অর্থ দিবে। বিশাল অর্থ নিয়ে জামাত মাঠে নেমেছে। এখন দেশে নয় বিদেশে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে জামাত। তাদের লক্ষ্য দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ কে তালেবানি রাষ্ট্রে পরিনত করা। বিদেশে তারেক এখন জামাতের টাকায় বন্দী। বি এন পি নেতাদের অনেকেরই সংসার চলে জামাতের টাকায়। শুধু বি এন পি নয় জামাত টাকা নিয়ে হানা দিয়েছে আওয়ামী লীগেও। অনেক নেতার সঙ্গেই জামাতের সখ্যতা বেড়াছে। মুক্তি যুদ্ধের পক্ষে যারা কথা বলেন তারাও অনেকে অর্থলোভে ভিন্ন সুরে কথা বলেন। জামাতের অর্থ আর কুটকৌশলে ধরাশায়ী শিক্ষিত সুশিল সমাজের অধিপতিরাও। ভয়টি এখানেই।
দেশের জনগন শেখ হাসিনাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। এই নেতারা নমিনেশন পেলে ফলাফল হবে দু:খজনক। আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃত্বকে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এখনোই প্রার্থী নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া উচিৎ হবে। ত্যগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা জরুরী। আগামী নির্বাচন জাতির জন্য গুরত্বপুর্ন। জাতীয় নেতৃত্ব বিষয়টি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হলে দল এবং দেশ দুটোই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
আজিজুর রহমান প্রিন্স, কলামিস্ট ও আওয়ামীলীগ নেতা, টরন্টো, কানাডা।