দেশে নতুন করে রাজাকার প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে রাজাকার কারা! টক শো’তেও জিজ্ঞেস করা হয়েছে রাজাকার শব্দের অর্থ কি? স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এই মিমাংসীত বিষয়টিকে আলোচনায় আনার নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে। অনেকেই এখন ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে চান রাজাকাররা ভুল করেনি। কেউ কেউ বলেও ফেলেছেন রাজাকাররা জীবন বাঁচাতে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছে। যারা এই রাজাকার শব্দটির অর্থ খোঁজেন তাদের চিনতে ভুল হয়না।
এবার বিএনপি’ও ৭ই মার্চ নিয়ে আলোচনা সভা করেছে। টেলিভিশনেই দেখলাম বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস এক সভাতে বক্তৃতা করতে গিয়ে বলেছেন ” ৭ই মার্চের বক্তৃতায় কি আছে? আমরা এই বক্তৃতায় কিছু পাইনি। আমারা চেয়েছিলাম শেখ মুজিবুর রহমানে কাছে সেদিন স্বাধীনতার ঘোষনা। তিনি তা দেননি”। ৭ই মার্চের বক্তৃতা শুনতে তার উপস্থিতির কথাটিও বলেছেন দর্পে। এমন বক্তব্য বিএনপি’র অন্যান্য নেতাদের মুখেও শুনেছি। এই প্রসঙ্গে লেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না।
প্রশ্ন হল এত বছর পর বিএনপি নামক দলটি হঠাৎ ৭ই মার্চের আলোচনায় এলো কেন? বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপি একটার পর একটা অভিযোগ উত্থাপন করে চলেছে। গলা ফাটিয়ে বক্তৃতা করেও জনগনের সমর্থন পায়নি। তাদের আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি ধমকিও কাজে লাগেনি। প্রচার মাধ্যমে ৭১ এর বর্ননা শুনে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও এখন জেনে গেছে স্বাধীনতার মূল ইতিহাস। দেশের শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা আনতে বিএনপি বা জেনারেল জিয়ার সংশ্লিষ্ঠতাটিও পরিস্কার হয়ে গেছে। দেশের ইতিহাস পালটে জিয়াকে হিরো বানানোর চেষ্টা করেছিল তা এখন জনগন জেনেগেছে। ৭ই মার্চের মত কোন ঐতিহাসিক চিত্র তাদের কোষাগারে নেই। তাই এখন এই বক্তৃতার বিষয় নিয়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় নেমেছে নতুন করে। রাজাকার, আলবদর, আল শামস ছিল স্বাধীনতার বিপক্ষে অস্রহাতে দেশীয় শত্রু। তারা নারী ধর্ষন, অগ্নি সংযোগ আর হত্যা সহ লুটপাট করেছে। দেশের মেধা ধ্বংস করতে বুদ্ধিজীবিদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানীদের হাতে তুলে দিয়েছে।
স্বাধীনতার পর জামাত এবং এই রাজাকাররা নিষিদ্ধ ছিল। জেনারেল জিয়া এবং তার দল বিএনপি এই নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাত এবং রাজাকারদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাদেরকে এম পি, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি বানিয়েছে। রাজাকারদের সত্যটি প্রকাশ পেলে বিএনপি’র চেহারাটি উম্মোচিত হয়ে যাবে। এখন তারা বাঙ্গবন্ধুর যেই বক্তৃতা বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম বক্তৃতার তলিকায় যুক্ত হয়েছে সেই বক্তৃতাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপকৌশলে নেমেছে।
বিএনপি’র মধ্যে যারা মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন তদের কাছে একটি প্রশ্ন করতে চাই। আপনারা ৭১ সালে যূদ্ধে গিয়ে কি শ্লোগান দিয়েছিলেন? সেদিনত শ্লোগান ছিল একটাই” জয় বাংলা”। আপনারা কি অন্য কোন শ্লোগান দিয়েছিলেন? প্রতিটি মূক্তিযোদ্ধা ক্যম্পে একটি ক্যসেট বাজানো হত। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের বক্তৃতা। আপনি সেদিন কি বলেছেন? এখন তাহলে এই বক্তৃকে নিয়ে ইতিহাস বানানোর চেষ্টা করছেন কেন। ইতিহাস বানানো যায়না ইতিহাস হয়ে যায়। ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা ইতিহাস হয়ে আছে। এর বিরুদ্ধে কথা বলা সত্যকে অস্বীকার করার সামিল।
[বি.দ্রঃ মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত,বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না ও এর জন্য সম্পাদক কোনভাবে দায়ী নন। ]