সরকার পতনের জন্য আন্দোলনে নেমেছে বি এন পি। আওয়ামী লীগও স্বরব উপস্থিতি প্রমান করছে রাজপথে। জাতীয় নির্বাচনের আগের রাজনীতি এমনটাই প্রত্যাশীত ছিল। ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে নি:স্ব বি এন পি ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড় দিবেনা। দুটি দলের আদর্শগত অমিল দেশে রাজনীতি কে বিভক্ত করে রেখেছে। এই বিভক্তির শেকড় অনেক গভীরে। কোনভাবেই তা স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ নেই। একদল দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে আর অন্য দল সেই স্বাধীনতাকেই বিতর্কে পরিনত করেছে। এখন দেশের পবিত্র সংবিধানকেও বদলে দিতে চায়। দেশের এই মৌলিক বিষয়ে আপোষ করার সুযোগও নেই।
বহুদিন পর ক্ষমতার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ এখন আর্থিকভাবেও স্বচ্ছল। কর্মসূচীর ডাক পেলে কর্মীরা ছুটে যায় তা পালন করতে। কিন্তু বি এন পি’র মিছিল মিটিং এ লোক সমাগম করতে অর্থ খরচ করতে হয়। অর্থের যোগান দিতে হয় নেতা কর্মীদেরই। এমন অবস্থায় দলটির সরকার পতনের আন্দোলনে যাওয়া কতটা যৌক্তিক তা দলের নেতারাই ভাল বুঝবেন। এর আগেও দলটি সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হয়েছে। এবং তখন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে বেগম খালেদা জিয়া। সেই আন্দোলনে ১৪০ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে বি এন পি’র কর্মীরা। ব্যাপক আগুন সন্ত্রাস করেও মানূষের সমর্থন আদায় করতে পারেনি। আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে কোন ঘোষনা ছাড়াই ঘরে বসে গেছেন দলের নেতারা। এবার বেগম জিয়া জেলে, তারেক জিয়াও লন্ডনে। মির্জা ফখরুল নেতৃত্ব দিচ্ছেন আন্দোলনের। তিনি দলের মধ্যেও জনপ্রিয় নন। তার নেতৃত্বে এই আন্দোলন কতটা সফল হবে তা দলের নেতারাই ভাল জানেন। তবে কোন কারনে যদি এই আন্দোলন ব্যর্থ হয় তাহলে দলটির অবস্থা হবে ভয়াবহ।
✪ আরও পড়ুন: রাজকাহন
দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকাও গনতন্ত্রের জন্য সঠিক নয়। ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। হয়েছেও তাই! এত উন্নয়ন করেও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মী এবং এম পি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে কেউ কথা না বললেও সরকারের অনেক এম পি মন্ত্রী এখন অজনপ্রিয়। নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় অনেক নেতা কোনঠাসা হয়ে পরেছেন। বি এন পি দল হিসাবে এই সুযোগটি নিতে পারত! আন্দোলনে না গিয়ে জনগনের কাছে যেতে পারত! সে ক্ষেত্রে ভাল ফল পেত বি এন পি। দলকে ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনে যাওয়াই দলটির জন্য বেশী লাভজনক হত। তা না করে হঠাৎ সরকার পতনের এক দফা দাবী নিয়ে রাস্তায় নেমেছে বি এন পি। শান্তিপূর্ন মিছিলের অনুমুতি নিয়ে রাস্তায় আগ্নিসংযোগ করে গাড়ী ভাংচুর করেছে। বি এন পি’র এই সহিংসতা দেশের মানুষ ভালভাবে নেয়নি।
মির্জা ফখরুল একজন শিক্ষিত ভদ্রলোক। তার মুখ ভেঙ্গচিয়া কথা বলা বেমানান। রুমিন ফারহানা, পার্থ আর আমানউল্লাহ আমান কি বললো তাতে কিছু যায় আসেনা। দেশের মানুষ উন্নয়ন দেখেই ভোট দিবে। যেসব এম পি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের কে দল থেকে বাদ দিলে আওয়ামী লীগই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। নির্বাচনেও আওয়ামী লীগই বিজয়ী হবে। যে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে বি এন পি আন্দোলনে নেমেছে, সেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও বি এন পি ৬০ টির বেশী আসন পাবেনা। বিশেষ করে দক্ষিন বঙ্গের কোন আসনই সুনিশ্চিত করতে পারেনি। জাতীয় পার্টি যতই লম্ফ ঝম্ফ করুক তাদের মূল শক্তি রংপুর। এদিক সেদিক থেকে আরও দু’চারটি আসন তারা পাবে। তবে বি এন পি নির্বাচনে এলে তারাই হবে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিপক্ষ। বিভিন্ন দলের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করলে বি এন পি এখনো ভাল করবে। তবে সরকার গঠনের মত আসন বি এন পি পাবেনা।
✪ আরও পড়ুন:গণতন্ত্র
এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা হবে অনেক (৩ দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থী)। এদের মধ্যে অনেকে বিজয়ীও হবে। স্বতন্ত্র এবং ছোট দলের এম পি’দের জোটে টানতে পারলে বি এন পি শক্তিশালী বিরোধী দলের আসন নিশ্চিত করতে পারবে। আর যদি জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে রাখা যায় তাহলে আওয়ামী লীগের সরকার গঠন কষ্টকরও হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বি এন পি নেতারা না ভেবে দ্রুত ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে আন্দোলনে নেমে পরেছে। সম্ভবত এটাই বি এন পি’র জন্য বড় বিপদ হতে পারে।
আর মাত্র ৫ মাস বাকি রয়েছে নির্বাচনের। সরকার যদি ডিসম্বরের আগেই নির্বাচনের ঘোষনা দিয়ে ফেলে তাহলে বি এন পি’র আন্দোলন আর নির্বাচন দুটোই যাবে। অনেক প্রার্থী দল ছেড়ে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে লড়বে। তাদের জোটও ভেঙ্গে যেতে পারে। তখন বি এন পি’র জন্য একটাই পথ খোলা থাকবে ‘নির্বাচন’। কিন্তু দলকে সংঘঠিত না করে নির্বাচনে গেলে আবারও মাঝপথে প্রত্যাহার করার ঘটনা ঘটতে পারে।
✪ আরও পড়ুন:বিদেশী প্রেস্ক্রিপশনে শেখ হাসিনা চলেননা
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি