ই ভি এম পদ্ধতি বাতিল এবং তত্ববধায়ক সরকারের দাবীতে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন সরগরম। বি এন পি ভাবছে তারা সরকারকে আটকে ফেলেছে। দাবী না মানলে বিদেশীরা নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি বলে অভিযোগ করবে। বিদেশীদের মূখে এই অভিযোগ শুনলেই দেশের বিরোধী দল আনন্দে আঁটখানা হয়ে উঠে। খুশী হয়ে নিত্য বৈঠক করে বিদেশীদের সাথে। কারন বি এন পি জানে জনগন তাদেরকে সমর্থন করেনা। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়াও বি এন পি’র লক্ষ্য নয়। দলটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখা। এমনটি হলে নেতারা মাঠে গলা বাজি করে আরও কিছুদিন রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারবে।
বি এন পি এখন মুলত দুই ভাগে বিভক্ত। একটি তারেক পন্থি অন্যটি খালেদা পন্থি। তরুনরা তারেককেই নেতা মানে, স্বপ্ন দেখে ক্ষমতায় যাওয়ার। কিন্তু সিনিয়র নেতারা খালেদা নীতির অনুসারী। এই দ্বন্দে ঢাকা ছাড়া আর কোথাও দলের সংগঠন দাঁড় করাতে পারছেনা। নির্বাচনের ঘোষনা দিলেই শুরু হয়ে যাবে নমিনেশন বানিজ্য। এবং তারেক ৩০০ কোটি টাকা আদায়ের টার্গেট নিয়ে বসে আছে নমিনেশন বানিজ্যে। বেগম জিয়া রাজনীতিতে স্বক্রিয় হতে পারছেননা তারেকের নির্দেশই মানতে হবে নেতাদের। লন্ডনে বসে তারেক যেভাবে দল পরিচালনা করছে তাতে দল শুধু ক্ষতিগ্রস্থই হবেনা বিখন্ডিত হওয়ার সম্ভাবনাটিও উড়িয়ে দেওয়া যাবেনা। যে কারনে নেতারা বুঝে শুনেই আগাম ঘোষনা দিয়ে রেখেছে নির্বাচন বর্জনের। না হয় বি এন পি’ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে অফিস কেন্দ্রিক হয়ে পরবে।
বি এন পি দাবী তুলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে ভাবছে। কিন্তু আওয়ামীলীগও তো পাকা খেলোয়ার। রাজনীতির কি কৌশল কখন খেলতে হয় তা আওয়ামী লীগের নেতারা জানে। তারা বি এন পি’কে খেলতে দিয়ে সময় ক্ষেপন করছে। নির্বাচনের বাকি এখনো দেড় বছর। এখনোই শেষ খেলাটি খেলবেনা আওয়ামী লীগ। রাজনীতিতে সময়টি খুব গুরত্বপুর্ন বিষয়। শেষ গুটিটি ছেড়ে দিলে বি এন পি সংগঠিত হয়ে যাবে। দাবী যখন উঠেছে একটা ফয়সালাত হতেই হবে। বি এন পি মুলত দুটি দাবী করেছে (এক) নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার (দুই) ই ভি এম পদ্ধতি বাতিল। এছাড়াও জাতীয় সরকারের দাবী করেছে কিন্তু এখন দলটি দুই দাবীতেই অনঢ় রয়েছে। তত্ববধায়ক সরকারের দাবী গৃহিত হবে মনে হয়না, সংবিধান বদল করতে হবে। সংবিধান বদল করতে জাতীয় সংসদেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাশ করাতে হবে। প্রাস্তাবটি সংসদে উত্থাপিত হলেও বি এন পি হেরে যাবে। কিন্তু ই ভি এম পদ্ধতি বাতলের দাবীটি সরকার যদি মেনে নেয় তাহলেই রাজনীতি বদলে যাবে। অনেক দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষনা দিবে। এমনিতেই বহু মানুষ রয়েছে যারা একবার হলেও নির্বাচিত হতে চায়! দল ত্যগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও অনেকে নির্বাচন করবে। এদের মধ্যে বি এন পি দলীয় নেতা কর্মীরাও রয়েছে। বি এন পি তখন একা হয়ে পরবে। বি এন পি’কে সমর্থন করে এমন দলও নির্বাচনে আসবে। আওয়ামী লীগ সারা দেশেই সংগঠিত এখন। নেতা কর্মীরা দলের পক্ষে প্রচার প্রচারনায় নেমে পরবে নৌকার পক্ষে। কিন্তু বি এন পি বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতেই হিমশিম খাবে। আওয়ামী লীগ এমন এক সময় এই ঘোষনা দিবে যখন দল গোছানোর সময়টিও পাবে না বি এন পি। যারা দলের পক্ষে গলা ছেড়ে বক্তৃতা করছে তারাও নির্বাচনে নেমে পরবে অনেকে। জোটভুক্ত দলগুলি তখন বি এন পি’র সঙ্গে থাকবেনা। বি এন পি’র আসনে নির্বাচন করে জামাত বি এন পি’র ভোটে নির্বাচিত হতে চাইবে। দু’এক জন বিজয়ীও হয়ে যাবে ক্ষতিটি হবে শুধু বি এন পি’র।
রাজনীতিতে যেমন শেষ কথা বলে কিছু নেই, রাজনীতিতে স্থায়ী বন্ধুও নেই। সবাই ক্ষমতা লিপ্সু। অন্যের কপাল পুড়লেও মিত্রশক্তি নিজের স্বার্থকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবে। তাই খেলা আরও আছে! নির্বাচন ঘনিয়ে এলে কে কোন জোটে যোগ দিবে বলা যায়না। ক্ষুদ্র দলের ব্যক্তি ছাড়া ভোটও নেই কারও। এমন বাস্তবতায় যারা সরকার পতনের কথা ভাবছে তারা দাম্ভিক কৌশলি নয়।