এখন বের হচ্ছে কি কি ঘটেছে দুদিনের হরতালে। উদ্দেশ্যটিও আর লুকিয়ে থাকেনি। বায়তুল মোকাররম মসজিদ সংলগ্ন কোরআন শরিফ, তজবীহ এবং ইসলামি বই পুড়েছে বহু। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং ভাষ্কার্য ভেঙ্গেছে টুপি মাথায় হেফাজতের সদস্যরা। ব্রাহ্মনবাড়িয়া রেল ষ্টেশনে তান্ডব চালিয়েছে, ভাঙ্গচুর করেছে। এবং বি এন পি নেত্রী নিপুন চৌধুরী টেলিফোনে আরমানকে নির্দেশ দিয়েছে বাসে আগুন লাগাতে। এখন সবই পরিস্কার কারা কারা জড়িত ছিল হেফাজতের আন্দোলনে। ভিডিও ফুটেজ ছাড়াও টেলিফোন সংলাপ এখন পুলিশের হাতে।
প্রশ্ন উঠেছে কেন এই তান্ডবতা! এই করে কি সরকার হটানো যাবে? সরকার হটিয়ে নির্বাচন হলে তারা কি জয়ী হতে পারবে? জয়ী যদি হয়েই যায় তাহলে কে হবেন সরকার প্রধান (মানে প্রধানমন্ত্রী)। এমন প্রশ্নের সমাধান না করে সরকার হটাও আন্দোলন করা নেতৃত্বের অযোগ্যতা। জনগন কোন কারনে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবে তার কোন যৌক্তিক কারন নেতারা ব্যখ্যা দিতে পারেননি।ইসলামের নামে জিহাদ করায় অনান্য ইসলামী দলের যেমন আপত্তি আছে তাদের মধ্যে মতভেদও আছে। খন্ডিত দলকে ভর করে বি এন পি যে রাজনীতিতে নেমেছে তা আসলে আত্ত্বঘাতী। দলটি জন্মলগ্ন থেকেই এই ভুলটি করে আসছে। রাজাকার আলবদর আর আল শামসের সঙ্গে বি এন পি’র সখ্যতা শুরু থেকেই। রাষ্ট্রদ্রোহীদের মিত্র বানিয়ে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেছে সব জেনেও। দুই দিনের হরতাল কর্মসূচিতে হেফাজতের সদস্যরা থাকলেও মূল পরিকল্পনায় ছিল বি এন পি। কারন তারা জানে জনগন তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে আগেই। ধর্মের নামে হরতাল করে হেফাজতকে সামনে দিয়ে বি এন পি সুবিধা নিতে চেয়েছে। দেশে বিশৃংখলা হলে দলটি ক্ষমতায় যাওয়ার গোপন পথ বেছে নিবে। সুস্থ্য ও গণতান্ত্রিক পন্থায় তাদের আরেকবার ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আন্দোলন কারার সক্ষমতাও হারিয়েছে আগেই। তাই অন্যকে উষ্কে দিয়ে কল কাঠি নাড়া তাদের রাজনৈতিক কৌশল। হেফাজত ছাড়াও বি এন পি সামরিক বাহিনীকে উষ্কানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। দলের নেতারা অনেকেই নিষ্কৃয় এখন। কর্মীবাহিনীও নিষ্প্রাভ। নেতৃত্বের কোন্দল লেগেই আছে। কেউ জানেনা বি এন পি কে চালায়! রাজনীতিতে টিকে থাকাই এখন বি এন পি’র রাজনীতি। শুধু বি এন পি’ই না সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু দলছুট নেতা আর একসময়ের অভিলাষি বিপ্লবি নেতারাও। কিছু বিজ্ঞ জ্ঞানীও আছেন যারা কখনোই জনগনের পাশে থাকেননি। রাজপথে হাটেননি। শেখ হাসিনার দুরদর্শী পরিকল্পনায় তাদের অস্তিত্ব এখন বিলুপ্ত প্রায় তাই, যে কোন মূল্যে শেখ হাসিনাকে সরানোই তাদের লক্ষ্য। যারাই শেখ হাসিনার বিরোধীতা করবে তারাই এই বিজ্ঞ জ্ঞানীদের মিত্র হবে। নুরুর মত নব্য নেতারাও। এসব করে দেশ নয় রাজনীতিকেই কুলশীত করে ফেলেছে। একটি দলের দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা সঠিক নয় কিন্তু, বিগত ১২ বছরে বর্তমান সরকার যা করেছে বিগত সবগুলি সরকার মিলে তা করে দেখাতে পারেনি।
এখন রাজনীতির ধারাটি হল উন্নয়ন আর প্রবৃদ্ধির। অন্য যে কোন সরকার এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবে মনে হয়না। যদি কোন দল বা ব্যক্তি তা করে দেখাতে পারে তাহলে জনগণও সমর্থন দিবে। বর্তমানে কোন দলের সঠিক কোন কর্ম্পরিকল্পনাও নেই। কোন ভরসায় তারা আন্দোলনের ডাক দেয় তা বোধগম্য নয়। ভাংচুর করাই যদি আন্দোলনের লক্ষ্য হয় তাহলে সেই আন্দোলন জনগন গ্রহন করবেনা। অতএব এই দুই দিনের হরতালে জনগন সমর্থনের বদলে ক্ষিপ্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে হরতালের কর্মসুচি দিলে জনগন রাস্তায় নেমে প্রতিহত করবে। বিষয়টি হরতালের নেতারা বুঝেছেন কিনা জানিনা।