বাংলাদেশে রাজনীতিকে সহজিকরণ করা হয়েছে। যে কেউ রাজনীতিবিদ বনে যেতে পারে। আসলে রাজনীতি সহজ বিষয় নয়। নির্বাচিত হওয়া যতটা সহজ, নেতা হওয়া ততটা সহজ নয়। জননেতা হওয়া আরো কঠিন। দলকে সমর্থন করি বলে দলের পক্ষে অনেক কথাই বলি- লিখি। কিন্তু দলের নেতাদের প্রতিও আমাদের মত মাঠ কর্মীদের ক্ষোভটি কম নয়।আওয়ামী লীগ জনগণের দল। সর্ব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে আওয়ামী লীগ গঠিত হয়েছে ১৯৪৯ সালে। সেই ধারাবাহিকতাটি এখনো ধরে রেখেছে। এটাই আওয়ামী লীগের মূল শক্তি। ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ বিজয় না পেলে স্বাধীনতার ঘোষনা বৈধতা পেতনা বিশ্ববাসীর কাছে। ‘৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে। ‘৭১-এর ১০ই এপ্রিল প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছিল আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে। ৯ মাসের যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল আওয়ামীলীগেরই নেতৃত্বে।
আওয়ামীলীগ এখন টানা তৃতীয়বার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। জাতীয় সংসদেও শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ। আজকের নেতারা কতটা জনপ্রিয় জনতার কাছে? এই জরিপটি করা দরকার। ৭০, ৭৩-এ যারা এম পি নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের আর্থিক অবস্থান; আর, আজকের এম পি মন্ত্রীদের আর্থিক অবস্থানের একটা পার্থক্য নির্ণয় করলেই রাজনীতির হিসাবটি সহজ হয়ে যাবে। আগে মানুষ স্বতস্ফূর্ত হয়ে ভোট দিত। এখন ভোট দেয় ভয়ে। ৭০-এর নির্বাচনে যারা মনোনীত হয়েছিলেন, তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকার গণমানূষের নেতা ছিলেন। আজকে যারা নেতা হয়েছেন, তারা কারা? জীবনের সব ক্ষেত্রেই মানুষ তার কর্মের মূল্যায়ন চায়। আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মীরা অবহেলিত কেন? যারা দলকে শত বাধার মধ্যেও ধরে রেখেছেন তারা মূল্যায়ীত না হলে দল ক্ষমতায় থাকলেও জনসমর্থন হারাবে। বিগত তিনটি সম্মেলনেই বার বার ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করার দাবী উঠেছে। অবশেষে অপরিবর্তিত থেকেছে সবই।
এখন মনে হয় বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় হয়েছে। প্রতিপক্ষের দুর্বলতা দলের সক্ষমতা নয়। দলকে সংগঠিত করাই রাজনীতি। সরকারী দল আওয়ামী লীগ সেই রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়ছে। বিষয়টি দলের নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় নেওয়া জরুরী।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
টরন্টো, কানাডা
৩রা নভেম্বর, ২০২০।