একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটের দিন এবং তার আগে ও পরে বেশ কিছু যানবাহন ও নৌযান চলাচলের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে কিছু যানবাহন একেবারেই চলাচল করতে পারবে না আর কিছু যানবাহনের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একাধিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যানবাহন চলাচল সম্পর্কিত এসব তথ্য জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলই অংশ নিচ্ছে। এক দশক পর ভোটের মাঠে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এবারের নির্বাচনে সারা দেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক হাজার আটশর বেশি প্রার্থী। এর মধ্যে অর্ধ শতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন, বাকিরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। এবার ৩০০ আসনে ভোটার ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার। নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্র ও দুই লাখ ছয় হাজার ৪৭৭টি ভোটকক্ষ রয়েছে। একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট স্থগিত করে পুনঃতফসিল দেওয়া হয়েছে। এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হচ্ছে। ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এদিন আগামী পাঁচ বছরের জন্য ভোটররা তাদের পছন্দের দল/জোটকে ক্ষমতায় আনবে। সেই ভোটকে কেন্দ্র করেই যানবাহন চলাচলে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যেসব ক্ষেত্রে যানবাহন ও নৌযান চলবে ১. জরুরি সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন, ওষুধ, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা বা অনুরূপ কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি এবং সংবাদপত্র বহনকারী সব ধরনের যানবাহন চলাচল করবে। ২. আত্মীয়স্বজনের জন্য বিমানবন্দরে যাওয়া, বিমানবন্দর থেকে যাত্রী বা আত্মীয়স্বজনসহ নিজ বাসস্থান যাওয়া-আসা অথবা আত্মীয়স্বজনের বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত যানবাহন (টিকিট বা অনুরূপ প্রমাণ সাপেক্ষে) এবং দূরপাল্লার যাত্রী বহনকারী অথবা দূরপাল্লার যাত্রী হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে যাতায়াতের জন্য যেকোনো পরিবহন চলবে। ৩. নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জন্য একটি, প্রার্থীর নির্বাচনি এজেন্টের (যথাযথ নিয়োগপত্র/ পরিচয়পত্র থাকা সাপেক্ষে) জন্য একটি গাড়ি চলতে পারবে (রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমোদন ও স্টিকার প্রদর্শন সাপেক্ষে)। ৪. সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক অথবা জরুরি কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল চলবে (রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমোদন সাপেক্ষে)। ৫. নির্বাচন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা/কর্মচারীর মোটরসাইকেল চলবে (রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমোদন সাপেক্ষে)। ৬. উল্লিখিত যানবাহনের অনুরূপ জরুরি কাজে ব্যবহৃত নৌযান চলাচলের ক্ষেত্রেও অনুমতি বা নিষেধাজ্ঞা বহির্ভূত থাকবে। ৭. নির্বাচনকালে বিমান ও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। এ ছাড়া কূটনৈতিক/দূতাবাস/হাইকমিশনে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের যাতায়াতের জন্য এবং দূতাবাস বা হাইকমিশনে কর্মরত স্থানীয় স্টাফদের কূটনৈতিক জোনের বাইরে যাতায়াতের জন্য সীমিতসংখ্যক গাড়ি চলবে। তবে কূটনৈতিক এলাকায় কোনো বহিরাগত যানবাহন প্রবেশের ক্ষেত্রে পুলিশ কমিশনার বা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। যেসব যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা থেকেই সারা দেশে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে আগামী ১ জানুয়ারি মাঝরাত পর্যন্ত। তবে ইসির দেওয়া স্টিকার নিয়ে সাংবাদিকরা মোটরসাইকেল চালাতে পারবেন। অন্যদিকে, সব ধরনের যন্ত্রচালিত পরিবহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে আজ শনিবার রাত ১২টা থেকে। চলবে ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত। হেলিকপ্টার চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হেলিকপ্টার চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুক্রবার রাতে ইসির যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে দিয়ে এ কথা জানানো হয়। ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যান্ত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই চিঠিতে। তবে জরুরি রোগীর যাতায়াত বা হাসপাতালে প্রেরণ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা এবং ওষুধ ও জরুরি পণ্য পরিবহন এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। চিঠির অনুলিপি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস লিমিটেড, সিকদার এভিয়েশন হ্যাঙার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্কয়ার এয়ার লিমিটেড, সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস লিমিটেড চেয়ারম্যানসহ সব বেসরকারি হেলিকপ্টার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন নির্বাচন কমিশনের স্টিকার ব্যবহার করে গণমাধ্যমকর্মীরা ভোটের সময় মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক আসাদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সহকারী পরিচালক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে গণমাধ্যমকর্মী এবং সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্তদের যে স্টিকার দেওয়া হয়েছে, সেই স্টিকার ব্যবহার করেই মোটরসাইকেল ব্যবহার করা যাবে।’ এর আগে নির্বাচন কমিশন এক ঘোষণায় জানিয়েছিল, একাদশ নির্বাচনকে ঘিরে ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকছে। এমনকি সাংবাদিকরাও বিশেষ কোনো ছাড় পাবেন না। নির্বাচন কমিশনের এ ঘোষণার পর সাংবাদিক মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলও এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানায়। সূত্র : এন টি ভি