প্রাণঘাতী কোভিড-19 করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বে মারা গেছেন ৩৭ হাজার ৮১৫ জন মানুষ। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৮৫ হাজার ৭৭৪ জন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ যারা দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত তাদের করোনায় মৃত্যুঝুঁকি বেশি।
করোনা সংক্রমণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন ডায়াবেটিস, হার্ট ফেইলিউর, কিডনি ফেইলিউর, উচ্চ রক্তচাপসহ যারা দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত, হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রংকাইটিসের রোগীরা। এছাড়া আছেন যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম। যেমন কেমোথেরাপি নেয়া রোগীরা।ডায়াবেটিস রোগীরা কেন ঝুঁকিতেআমাদের দেশে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা অনেক। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের অনেকেরই ডায়াবেটিস আছে। তার ওপর আমাদের ডায়াবেটিসের রোগীদের একটি বিরাট অংশের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ডায়াবেটিসের কারণে রোগীদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। যেকোনো জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার সক্ষমতা হ্রাস পায়। আবার ডায়াবেটিসের রোগীদের একই সঙ্গে কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ ইত্যাদি থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের বড় ধরনের ঝুঁকি আছে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ক্ষেত্রে।ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাত্রা (এইচবিএওয়ানসি) এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যার ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ যতো খারাপ (এইচবিএওয়ানসি যত বেশি), তার ঝুঁকি ততো বেশি। বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তের শর্করা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। রক্তে এইচবিএওয়ানসির মাত্রা ৭ শতাংশের বেশি হওয়া মানে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে ডায়াবেটিসের রোগীদের একটু বেশি সচেতন হওয়া জরুরি।করোনামুক্ত থাকতে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়১. করোনাভাইরাস সংক্রমণের সামান্যতম লক্ষণ দেখা দিলেও (যেমন, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) সরকার নির্দেশিত কেন্দ্রগুলোতে রোগ শনাক্তকরণ ও পরবর্তী সেবার জন্য দ্রুত সাহায্য নিতে হবে। ব্যক্তিগত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব।২. বর্তমান পরিস্থিতিতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না করে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ইনসুলিন শুরু করতে হবে। ইনসুলিন দ্রুততম সময়ের মধ্যে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। খালি পেটে শর্করা ৬ মিলিমোলের কম আর খাবার দুই ঘণ্টা পরে ৮ মিলিমোলের কম মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে।৩. যদি উপসর্গ দেখা দেয়, করোনা নিশ্চিত না হলেও, নিজেকে আলাদা করতে হবে। অর্থাৎ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। শরীর বেশি খারাপ না হলে হাসপাতালে না যাওয়াই ভালো। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে বা সেবাকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে প্রয়োজনে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় দ্রুত।৪. এই সময়, যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা নিজেরা কোয়ারেন্টিনে থাকুন। বাজার, শপিং মল, জনবহুল জায়গা, সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়িতে থেকে করোনা প্রতিরোধের নির্দেশগুলো মেনে চলতে হবে। বাইরের কারো সঙ্গে হাত মেলানো যাবে না, কোলাকুলি করা যাবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে যে কারও থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্বে থাকতে হবে।৫. এ সময় পার্কে বা বাইরে হাঁটতে যাওয়ার দরকার নেই। শর্করা নিয়ন্ত্রণে বাড়িতে, বারান্দায় হাঁটতে হবে এবং হালকা ব্যায়াম করতে হবে।৬. কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়াসহ ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। টাকাপয়সা, খবরের কাগজ, পার্সেল ইত্যাদি জিনিস স্পর্শ করলে হাত ধুয়ে নিতে হবে। কাপড় লন্ড্রিতে ইস্ত্রি করতে না দিয়ে বাড়িতেই ধুয়ে পরতে হবে।৭. বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে প্রথমেই বয়স্ক আর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে ফেলতে হবে।৮. বাইরে থেকে আনা কোনও খাবার না খাওয়া ভালো হবে।