তফশিল ঘোষনা হয়নি এখনো নির্বাচনী প্রচারনা শুরু হয়ে গেছে। প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় গনসংযোগ শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচিত হলে কি করে দিবে তার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। হাটে বাজারে চায়ের দোকানে এখন একটাই আলোচনা, নির্বাচন। প্রার্থী হিসাবে এম পি মন্ত্রী ছাড়াও অনেকেরই নাম শোনা যাচ্ছে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নামও এই তালিকায় রয়েছে।
পিছিয়ে নেই বিরোধী দল বি এন পি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও। তারাও আন্দোলনের পাশাপাশি কর্মীবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছে। তবে একটি কথা সবার মুখেই শোনা যাচ্ছে নির্বাচনটি এবার সহজ হবে না। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থাটিও তেমনই ইঙ্গিত দেয়। দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ এবং বি এন পি কোন বিষয়েই এক হতে পারেনা। বি এন পি চায় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ সংবিধানের নিয়মের বাইরে যাবেনা। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এই অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসতে সুশীল সমাজের কেউ কেউ প্রস্তাব করেছেন দুই দলের মধ্যে একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হউক। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ আগেও হয়েছে। কিন্তু বি এন পি কোন প্রকার আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সরকারের পদত্যগ ছাড়া। যে কারনে সরকারও এখন হার্ড লাইনে চলে গেছে।
রাজনৈতিক মতপার্থক্য গনতন্ত্রেরই শিষ্ঠাচার। কিন্তু বি এন পি’র সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য মতবাদের নয় নৈতিকতার।দেশের অস্তিত্ব রক্ষার বৈপরীত্ব। এই বিরোধ কখনোই সমাধানযোগ্য নয়। তাই অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম নয় বিরোধ চলছে দুই প্রধান দলের মধ্যে আদর্শের। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে। বি এন পি মনে করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা একটি এক্সিডেন্ট। অথচ এই স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছে ৩০ লক্ষ তাজা প্রান। দুই লক্ষ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের আঙ্গীকার ছিল একটি গণতান্ত্রিক ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের। ৭২ এর সংবিধান তারই ফসল। এবং বাংলাদেশের এই ধর্ম নিরপেক্ষ নীতিটি প্রসংশিত হয়েছিল উন্নত দেশেও। ৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যা করে যে সামরিক সরকার ক্ষমতা দখল করে দু:শাসন চালিয়েছে তারা প্রথমেই এই নীতিটাকে বাতিল করে দেয়। তারা পাকিস্তান কে অবুসরন করে বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র ঘোষনা করে। সেই সামরিক সরকারই পরবর্তিতে বি এন পি নামে আত্নপ্রকাশ করে। দলটি ক্ষমতা দখল করে দেশের সকাধীনতা মুক্তিযুদ্ধকে এবং মুক্তি সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাসকে বদল করে ফেলে। জাতির পিতাকে অসম্মান করে তার দীর্ঘ নির্যাতনের ত্যাগকেও মুছে ফেলে। সেই জায়গায় একজন মেজর জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বানিয়ে নিরন্তর প্রচারনা এখনো চালাচ্ছে।
✪ আরও পড়ুন: বিএনপি দলের এক দফা
✪ আরও পড়ুন: রাজনীতি
✪ আরও পড়ুন: মির্জা ফখরুল
বি এন পি দেশের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত বদল করার চেষ্টা চালিয়েছে। এখন তারা প্রকাশ্যে সংবিধান বদলে দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছে। জাতির সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে এমন দলের অমিল এইখানেই। বি এন পি তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য পুরনের জন্য স্বাধীনতা বিরোধী নিষিদ্ধ জামাতকে রাজনীতিতে এনে প্রথম থেকেই সঙ্গে রেখেছে। বঙ্গবন্ধু কন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বার বার হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। ২১ আগষ্ট প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। তারপর জাতীয় সংসদে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা বিবৃতি দিয়েছে ” শেখ হাসিনা নিজেই ভেনিটি বেগে করে বোমা এনে ফাটিয়েছে”। এমন দলের সঙ্গে সুমধুর সম্পর্ক রাখা কি সত্যই খুব জরুরী? যারা দেশের সংবিধান মানেনা, যারা স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে, হত্যা করে তাদের কি সত্যই দেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিৎ? বিষয়টিকে এ দেশের জনগনকেই নিশ্চিত করতে হবে। আর সত্যই যদি জনগন বি এন পি’র রাজনীতি সমর্থন করে তাহলে দেশ সঙ্কটে। এই সঙ্কট নিরসনে আওয়ামী লীগকে স্বাধীনতা যুদ্ধের মতই স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। এবং অবশ্যই তা আপোষ করে নয় যুদ্ধ করেই দেশকে রক্ষা করতে হবে। কারন ৫০ বছরেও জামাত ৭১ এর দায় স্বীকার করেনি। এখনো তারা পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য বঙ্গবন্ধুকে দায়ী করে। আর বি এন পি বাংলাদেশকে একটি উগ্র মৌলবাদী রাষ্ট্র বানাতে চায় পাকিস্তানের মত। এমন দেশের জন্য তো ৩০ লক্ষ মানূষ জীবন দেয়নি! দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগন বি এন পি’র এই নীতির সঙ্গে একমত নয়। সেই কারনেই এবারের নির্বাচনটি গুরত্বপুর্ন। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় নেতারাও চিন্তিত।
অপরদিকে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারবেনা সেকথা বি এন পি নেতারাও জানে। এবার যদি বি এন পি নির্বাচন বর্জন করে তাহলেও অস্তিত্ব সঙ্কটে পরবে দলটি। যে কারনে সরকার পতনের এক দফা দাবী নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। বি এন পি’র এই আন্দোলনেও ব্যর্থ হবে নিশ্চিত। কিন্তু দল আন্দোলনটিকে প্রলম্বিত করতে চায়। দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে সরকারকে উদ্বিগ্ন দেখতে চায়। কোন প্রানহানীর ঘটনা ঘটলে সেটাকে ইস্যু করে রজনীতিতে টিকে থাকতে চায়। কারন বাংলাদেশের জনগন দেশে আর কোন রাজনৈতিক সংঘাত চায়না। এই অপরাজনীতির বিরুদ্ধেই এবার সত্যিকার নির্বাচনী লড়াই হবে। এ লড়াইয়ে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। সকল অপশক্তির পতন ঘটিয়ে স্বাধীনতার পতাকাকে সম্মুন্নত রাখতে হবে। তাই যুদ্ধটি সহজ হবেনা।
✪ আরও পড়ুন: রাজকাহন
✪ আরও পড়ুন:গণতন্ত্র
✪ আরও পড়ুন:বিদেশী প্রেস্ক্রিপশনে শেখ হাসিনা চলেননা
✪ আরও পড়ুন: বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন এক চরম দু:সময় চলছে
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি