রাজনীতির মত বাংলাদেশে এখন জট বেধেছে যান চলাচলেও। নিদৃষ্ট সময় কোথায়ও পৌঁছানোর উপায় নেই। যানজটের অযুহাতে কর্মেরও ক্ষতি হচ্ছে ব্যপক। সময়ত গুনাই যাবেনা। রাস্তার এই অচল অবস্থার জন্য প্রিতিনিয়ত সরকারকে দায়ী করলেও পথচারি আর চালকদের দায়টিও কমনা। আইন না মানাই যেন আইন দেশে। প্রতিযোগীতা নয় ” আমি আগে যাবো” ভাবটি সকলেরই। এই মানুষিকতায় রাস্তায় শুধু হর্ন বাজে “বেটা সরছনা কেন” এমন গোষ্মাতে। পুলিশের বেহাল অবস্থা, সারাদিন রোদে দাঁড়িয়ে হাত তুলে একবার এদিক, একবার ওদিক ইশারা দেখায়। গাড়ীগুলি অপেক্ষা করে এগুতে এগুতে পুলিশের নাগালের মধ্যেই চলে আসে। গ্রীন সিগিন্যালে আসা গাড়ীগুলি পার হতে পিছু নেয় এক হাত দুরত্বে। ইশারা বদল হলেই দুই দিকের গাড়ীসব ফাঁক খূঁজে বেড় হতে। আটকে যায় রাস্তাটি। শুধু মূল সড়ক নয়, অলিগলীর চিত্রটিও অভিন্ন। পথচারিও পারাপার হয় চলন্ত গাড়ীর ফাঁকে ফাঁকে। সিগন্যাল পরলেই রাস্তায় নেমে পরে হকার। গামছা, বড়ই, চিনাবাদাম আর মুরগী সহ পন্যের বাহার নিয়ে। হাট বাজার করে গাড়ীতে বসেই। ইদানিং হিজরারাও হাত তালি দিয়ে টাকা চায়, না দিলে …. ছুড়ে দেওয়ার ভয় দেখায়।
রিক্সার সংখ্যা কত কেউ জানেনা। অবৈধ গাড়ীর সংখ্যাটিও অজানা সবার- ইচ্ছাও নেই কারো কারন, এখানেই বানিজ্য। ধরলেই উপার্জন হয় পুলিশের। সন্ধা নামলেই শুরু হয় চেকিংয়ের নামে টোল আদায়। প্রকাশ্যে পকেট ভারি করে পুলিশ। কেউ কিছু বলেনা। ধরা খেলে বৈধ গাড়ীও ছাড়া পেতে খেসারত গুনতে হয় ভালোই। সব কিছুর জন্যই দায়ী হয় সরকার। দৈবক্রমে যদিবা দু এক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ পায়, রাজনৈতিক নেতারা দেশ গেলো বলে সরকার উৎখাতের হুমকি দেয়, কেউ অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেনা। জি হুজুর পুলিশ সর্বকালেই নিরাপদে ধনী হয়। জনগনও রা’ টি করেনা অনিয়মের বিরুদ্ধে। ” তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার ঘুষ খাওয়া চাই” নীতিতেই চলছে দেশ।
কিন্তু, দেশকে উন্নত করতে হলে এই অবস্থাটির পরিবর্তন জরুরী। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে স্বচল রাখাই উন্নত দেশের অন্যতম শর্ত। বর্তমান সরকার এখন দুরপাল্লার সড়ক সংস্কার করলেও, শহরের অবস্থাটি বদলায়নি। নিয়মনীতিও ক্রমেই অবনতি হচ্ছে সর্বত্র। গ্রামীন অর্থনীতি অনুসরন করেও শহরে হকার বৃদ্ধি ঠেকাতে পারেনি। শহরের রাস্তা পুরুটাই হকারদের দখলে। আধুনিক যূগে অমানবিক রিক্সার বিকল্প যান আবিস্কার করা যায়নি এখনো। রাস্তার দখলদারিতে রাজনীতি সহায়ক হলেও শহর হয়েগেছে অনিয়মের হাট। বিষয়টিতে নজর না দিলে শীঘ্রই শহরগুলি “ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাটিয়া চলিল” অবস্থায় পৌঁছে যাব। বিংশ শতাব্দির এই আধুনিক এবং ডিজিট্যাল যূগে বিষয়টি বেমানান। কাজটি কঠিন তবে অসাধ্য নয়। যে সরকারই করুক, জনগনের সমর্থন পাবে আশাকরি। তাহলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি টাস্কফোর্স করে বিষয়টি ভাবা হচ্ছেনা কেন! পদ্মা সেতু হবে কেউ ভাবেনি, মেট্রো রেলও ছিল অকল্পনিয়। এমন কঠিন বাস্তবতা যদি দৃশ্যমান হতে পারে তবে, শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন করা যাবেনা কেন? কেন মানূষ আইনের প্রতি আস্থা হারাবে? আধুনিক বিশ্বে এখন চালকবিহীন গাড়ী যাত্রী পৌঁছে দিচ্ছে গন্ত্যব্যে, অথচ আমাদের দশে চালকরা আইন অমান্য করে নির্দিধায়। জাতীয় সমস্যাটির সমাধান বের করার বিদগ্ধ মানূষ নেই ভাবা সঠিক হবেনা শুধু,উদ্যোগটি প্রয়োজন।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
টরেন্টো, কানাডা
২৫ আগষ্ট ২০২০।