মোঃলোকমান হোসেন,যশোর জেলা প্রতিনিধি:-যশোর চৌগাছার হাকিমপুর ইউনিয়নের এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান কবীর কর্তৃক ৮ম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। (বুধবার ২০শে মার্চ)বেলা সাড়ে ১২টায় শহরের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য মোড়ে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানবন্ধনের আগে বেলা ১১টার দিকে সংশ্লিষ্ট স্কুলের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী,অভিভাবক ও এলাকাবাসী উপজেলা পরিষদের মধ্যে বিক্ষোভ সহকারে উপস্থিত হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দেন।এসময় স্কুলটির কয়েকজন শিক্ষকও উপস্থিত ছিলেন।স্কুলের শিক্ষার্থী পরশমনি,বিপ্লব,সীমা,তৃষা,মিম তন্নিসহ ১৫ জন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এই অভিযোগে স্বাক্ষর করেন।
জানা গেছে,উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাজান কবীর তারই স্কুলের ৮ম ও ৭ম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ান।সেখানে তিনি প্রায়ই ছাত্রীদের কু-প্রস্তাব দেওয়াসহ উত্যক্ত করেন।মঙ্গলবার প্রাইভেট পড়ানোর সময় ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রী এবং ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রী একসাথে প্রাইভেট পড়তে আসলে ৭ম শ্রেণির ছাত্রীকে বলেন তুমি একটু বাইরে যাও।এরপর রুমের মধ্যে ওই ছাত্রীকে তিনি শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেন।ওই ছাত্রী চিৎকার দিয়ে প্রধান শিক্ষককে ধাক্কা মেরে বাইরে এসে সবাইকে বলে দিলে ঘটনা জানাজানি হয়। এসময় ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ওই প্রধান শিক্ষককে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
পরে ওই ছাত্রীর অভিভাবক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম রফিকুজ্জামানকে ঘটনাস্থলে পাঠান।এরআগেই সেখানে চৌগাছা থানা পুলিশের দুই জন(এসআই)ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই শিক্ষা কর্মকর্তা ছাত্রীদের নিকট জানতে চাইলে তারা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ করেন।বিষয়টি তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেন বলে জানান শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান। দুই বছর আগেও একবার একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ উঠেছিল এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তারও আগে এক ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ানোর নাম করে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন।পরে ওই শিক্ষার্থী সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়ভাবে বিচারে টাকা দিয়ে মিমাংশা হয়। এরপর গত বছর এক মহিলা বীমা কর্মীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় জনতার হাতে ধরা পড়েন।বেশ টাকা খুইয়ে তিনি সে যাত্রাও রক্ষা পান।মানবন্ধনকালে শিক্ষার্থীরা এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।
এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রী ও অভিভাবক জানান প্রধান শিক্ষকের এটি পুরনো রোগ।তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই এ ধরনের অভিযোগ হয়ে আসছে।কিন্তু স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি বারবার রক্ষা পাচ্ছেন।শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তার কঠোর শাস্তি দাবী করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারুফুল আলম বলেন,মঙ্গলবার মোবাইল ফোনে অভিযোগ পেয়ে প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি।তার বিরুদ্ধে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেয়া হবে।তারা তদন্ত করে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন। রিপোর্টের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এ বিষয়ে জানার জন্য প্রধান শিক্ষক শাহাজান কবীরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।