আজ ৮ই ডিসেম্বর মৌলভীবাজার হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই দিনে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনীর সেনারা মৌলভীবাজার থেকে পালাতে বাধ্য হয়।
দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পন, বিজয় র্যালী ও মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিচারণ ও আলোচনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মৌলভীবাজার -৩ (রাজনগর সদর) আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিছবাহুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) হাসান মোহাম্মদ নাছের রিকাবদার, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলায়মান আলী, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান আবুল খয়ের চৌধুরী, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জামাল উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান।
৫ ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়তে শুরু করে। ফলে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর যৌথ হামলা প্রতিরোধ করতে তারা ব্যর্থ হতে থাকে। এ অঞ্চলের পরাজিত পাকিস্তানি সৈন্যরা তখন সিলেট অভিমুখে পালাতে শুরু করে। এসময় তাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে অনেক সাধারণ মানুষ নিহত ও জখম হন।
✪ আরও পড়ুন: শ্রীমঙ্গল হানাদার ‘মুক্ত দিবস’ পালিত
২ ডিসেম্বর রাতে মৌলভীবাজারের পূর্ব সীমান্তের কাছাকাছি শমসেরনগর বিমানবন্দর ও চাতলাপুর বিওপিতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অবস্থানের উপর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণ শুরু হয়। আক্রমণের মুখে পাক সেনারা শমশেরনগরে টিকতে না পেরে মৌলভীবাজার শহরে ফিরে আসে।
মৌলভীবাজারে ছিল পাক সেনাদের ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী মৌলভীবাজার দখলের উদ্দেশ্যে ৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে কালেঙ্গা পাহাড়ে অবস্থান নেয়। সেখানে বড়টিলা নামক জায়গায় পাক বাহিনীর সঙ্গে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মিত্র বাহিনীর ১২৭ জন সেনা নিহত হন।
১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের বহুমূখী মরন পণ লড়াই ও ভারত থেকে মুক্তি বাহিনী ক্রমশ ক্যাম্প অভিমুখে এগিয়ে আসার খবরে পাক বাহিনী ভীত হয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে ৮ ডিসেন্বর ভোরে মনুব্রীজ সহ বিভিন্ন স্থাপনায় পাক বাহিনী ধংশ করে তারা শেরপুর হয়ে সিলেটের দিকে পালিয়ে যায়। এর পর মুক্ত হয় মৌলভীবাজার শহর। উড়ানো হয় লাল-সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।
এর আগে হানাদার বাহিনীর সাথে লড়াই করে নিহত হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধাসহ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু। ৭১ সালের ৩০ এপ্রিলের পর থেকে পাকিস্থান হানাদার বাহিনী ৭ ডিসেন্বর পর্যন্ত রাজাকারদের সহায়তায় মৌলভীবাজারে হত্যা করেছিল অর্ধশতাধিক মুক্তি যোদ্ধাসহ নীর অপরাধ মানুষকে।
মৌলভীবাজার মুক্ত করতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা মিয়া, জমির মিয়া, নীরোধ চন্দ্র রায়, সিরাজুল ইসলাম,আব্দুল মন্নান, উস্তার উল্লাহ সহ কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষ শহীদ হন।
দিবসটি পালন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন গুলো পৃথক পৃথক ভাবে আলোচনা সভা ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অয়োজন করেছে।