মৌলভীবাজার সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অ্যাসিসটিভ ডিভাইস কেনার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত কর্মকর্তার নাম মোহাম্মদ মোতাহার বিল্লাহ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও তাদের স্বজনরা।
অফিস সূত্রের বরাতে জানা যায়, সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়তা হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে প্রত্যেক প্রতিবন্ধী (বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন) শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। ২০২১-২২ অর্থবছরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৫৬ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অ্যাসিসটিভ ডিভাইস কেনার জন্য সরকারি বরাদ্দ আসে ৯০ হাজার টাকা। এই টাকা থেকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের একটি হুইল চেয়ার, ১টি চশমা, কানের যন্ত্র ও ওষুধ দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে গত অর্থবছরের শিক্ষা উপকরণের বরাদ্দকৃত টাকা উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়নি।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে জানা গেছে, সদর উপজেলায় চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত শুধু মাত্র তিনটি হুইল চেয়ার ব্যতীত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের আর কিছুই দেওয়া হয়নি। যার ফলে ভেস্তে গেছে সরকারের মহৎ এই উদ্যোগ। ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা।
বিষয়টি নিয়ে তদন্তে সদর শিক্ষা অধিদপ্তরে গেলে পাওয়া যায় হেড ক্লার্ক মোহাম্মদ আলীকে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সুবিধাভোগী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের তালিকা চাইলে সদর শিক্ষা অধিদপ্তরের হেড ক্লার্ক মোহাম্মদ আলী এসব তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জানান, সদর উপজেলায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভেতরে কিছু উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই বিতরণ করা হবে। এক অর্থবছরের উপকরণ অন্য অর্থবছরে বিতরণ করা হবে কেন এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিষয়টি নিয়ে সদর উপজেলায় কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, এ পর্যন্ত মৌলভীবাজারে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে কোনো সরঞ্জামাদি দেওয়া হয়নি। তবে বুধবার উপজেলা অফিস থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে সরঞ্জামাদি নেওয়ার জন্য। এতদিন পরে কী কারণে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো সেটা বুঝতে পারছেন না তারা।
বুরুতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমানের মা মনোয়ারা বেগম জানান, স্কুল থেকে বলা হয়েছিল ২০২২ সালে আমার ছেলেকে একটি চশমা দেওয়া হবে কিন্তু সেটি পাইনি, দেওয়া ও হয়নি।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
শাহবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মাহিমের বাবা শেফুল মিয়া বলেন, বিগত বছর প্রতিবন্ধীদের বরাদ্দ থেকে আমার ছেলেকে কিছুই দেওয়া হয়নি।
আগনসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তানজুমা আক্তারের মা আরিফা বেগম জানান, এ পর্যন্ত আমরা কিছু পাইনি। এ ছাড়াও উপজেলার একাধিক বিদ্যালয়ের একাধিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হলে তারাও একই তথ্য জানান।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয় গনমাধ্যম কর্মীর । বুরুতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিউল ইসলাম জানান, উপজেলা অফিস থেকে ফোন দিয়ে আজকে (বুধবার) প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সরঞ্জামাদি কেনার টাকা দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌর শহরের আরেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, প্রতিবন্ধীরা টাকা পেয়েছে। তবে কবে টাকা পেয়েছেন এ বিষয়ে তিনি মুখ খুলতে নারাজ।
কাজীর বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবায়দুল হক জানান, আমার বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা গতকাল (বুধবার) টাকা পেয়েছে। তবে গত অর্থবছরে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা সহায়তা বণ্টন করা হয়নি কেন এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান মৌলভীবাজার সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোতাহার বিল্লাহ। তিনি বলেন, আমি বাইরে আছি। দু’দিন পর অফিসে আসেন। সরাসরি বসে বিস্তারিত কথা হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামসুর রহমানের বরাতে জানা যায়, গতকাল বুধবার বলেন আজকে (শিক্ষা উপকরণ) দেওয়া তো কোনোভাবেই নিয়মের মধ্যে পড়ে না। এ সরঞ্জামাদি ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যে দেওয়ার কথা। নগদ টাকা দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। এ কাজের নির্ধারিত কর্মকর্তা সরঞ্জামাদি কিনে স্কুলে পৌঁছে দেবে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত জানিয়ে দেয়া হবে।
ডিবিএন/ডিআর/মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান