তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের দুর্গাবাড়ি মন্দিরে দীর্ঘ ছয় দশক পর এবার প্রথমবারের মতো নারীদের নেতৃত্বে হবে ব্যতিক্রমি দুর্গাপূজার উৎসব। দেবী দূর্গার ন্যায় নারীর অসীম ক্ষমতা ও নারীর প্রতি সম্মান দেখানোর জন্যেই এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন বলে জানান আয়োজকরা।
মৌলভীবাজার শহরের এম সাইফুর রহমান সড়কে দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে বিরাজমান ঐতিহ্যবাহী ‘দূর্গাবাড়ি মন্দির’। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দুর্গাপুজো উপলক্ষে পুরুষদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হলেও ৬০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম ব্যতিক্রম উদ্যেগ। পুরুষদের পরিবর্তে ১২৪ জন নারী ও সহযোগী হিসেবে তিন জন পুরুষসহ মোট ১২৭ সদস্যবিশিষ্ট পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির সদস্যদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক দেবী দূর্গা। বাস্তবে নারীরা, মায়েরা স্বীয় মেধা,দক্ষতা ও প্রচেষ্টায় নিজের শীর্ষস্থানীয় অবস্থান তুলে ধরতে পারেন। তার বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে এই পৃথিবীর বুকে তার প্রতিফলন এই কমিটি।
নারীদের নিয়ে এ কমিটিতে রয়েছেন শিক্ষক, চিকিৎসক,আইনজীবি, প্রবাসী, গৃহিণী এবং শিক্ষার্থী। এর আগে বিভিন্ন সময় এক দু’জন নারীকে কমিটিতে রাখা হলেও এ বছর শুধু নারীদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ায় আনন্দিত ও উচ্ছসিত সবাই। তাদের এ কাজে পুরুষরাও সার্বিক সহযোগিতা করছেন বলে তারা জানান।
জেলা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রের বরাতে জানা যায়, সার্বজনীন ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে সারা মৌলভীবাজার জেলায় এবছর এক হাজার সাতটি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
শ্রী শ্রী দূর্গা বাড়ি পূজা উদযাপন পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা রায় জানান, ‘দেবী দূর্গা আমাদের ধরিত্রী মাতা অথবা নিসর্গ নারীর ‘অবয়ব’। মা আমাদের বাস্তবিক জীবনে দেবী দূর্গার মতো আবির্ভূত হন সংকট মোচনে। দেবীদূর্গা অনেক হাতের মাধ্যমে অশুর বিনাশ করেন। মায়েরা-নারীরা যে পরিশ্রম করেন, সবকিছু সামাল দেন পুরুষরা তা পারেন না। আমাদের এ কমিটি গঠন নারী জাগরণের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
সভাপতি নন্দিতা দেব বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন, নারী জাগরণ ও নারীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমাদের পুরো কমিটির সার্বিক কার্যক্রমে পুরুষরা সহযোগিতা করছেন।’
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা রহমান বাঁধন জানান, ‘নারীদের নিয়ে পুজোর কমিটি গঠন, এটা নারী জাগরণের জন্য সহায়ক। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের এভাবে এগিয়ে আসা উচিত। আমি নারীদের এই কমিটিকে সাধারণ বরাদ্দের পাশাপাশি বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’
সনাতনী পঞ্জিকা অনুযায়ী, ১লা অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আচার অনুষ্ঠান। ২রা অক্টোবর সপ্তমী, ৩রা অক্টোবর মহাষ্টমী, ৪ঠা অক্টোবর মহানবমী ও ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে এদিন প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।