তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধিঃ প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা মৌলভীবাজারে আসছে কোরবানির ঈদের পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খামারি ব্যবসায়ীরা। গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, চিকিৎসা ব্যয় বাড়ার কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর বেড়েছে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ খরচও। তাছাড়া করোনা মহামারী ঠেকাতে চলমান লকডাউনে গবাদি পশুর বাজার বসানো নিয়েও তৈরী হয়েছে অনিশ্চয়তা। এ অবস্থায় পশু বিক্রি ও ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা।
খামারীদের আশঙ্কা- বাজার ব্যবস্থা ও কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে বড় লোকসান গুনতে হবে তাদের। জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ বলছে, অনলাইনে বিক্রি বাড়াতে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করা হয়েছে। আর জেলায় কোরবানি পশুর চাহিদা ও উৎপাদনে এবার ভারসাম্য অবস্থা রয়েছে। বাইরে থেকে গবাদি পশু আমদানির প্রয়োজন পড়বেনা। স্থানীয় খামারিদের পশু দিয়েই জেলার চাহিদা মিটানো সম্ভব হবে।
সম্প্রতি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কাউয়াদিঘি হাওরসংলগ্ন কয়েকটি খামারে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে শেষ সময়ে পালিত পশুর যত্নআত্তিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পশু খামারিরা। দানাদার খাবারের পাশাপাশি হাওরাঞ্চল থেকে ট্রাকে করে আনা হচ্ছে সবুজ ঘাস। কোরবানির পশুকে মুখে খাবার তুলে দেয়া, গোসল করানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারের মালিক ও কর্চারীরা।
এসময় কথা হয় স্থানীয় শরিফা ডেইরি খামারের মালিক সাইদুল ইসলাম বাচ্চুর সাথে। তিনি জানান, বছর দু’য়েক আগে গড়ে তুলেছেন এই পশু খামার। বর্তমানে খামারে ৭০টি ষাঁড় মোটাতাজা করা হচ্ছে। সবগুলোই দেশি প্রজাতির। রয়েছে কিছু ছাগলও। এগুলো লালনপালন ও মোটাতাজা করতে এখন পর্যন্ত তার প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখন বিক্রি নিয়ে আছেন দুশ্চিন্তায়। তারপরও তিনি আশাবাদী গতবছরের মতো এবার পশু বিক্রি ও দাম পাবেন ভালো।
খামারের ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম জানান, গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় আগের চেয়ে এবার উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। তবে তারা অনলাইনে পশু বিক্রিতে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। অনেক ক্রেতা খামারে এসেও পশু পছন্দ করে কিনে নেন। তাদের খামারের নিজস্ব গাড়িতে বিনামূল্যে পশু ক্রেতার কাছে পৌছে দেওয়া হয়।
খামারিরা জানান, কোভিড পরিস্থিতির কারণে মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দফায় দফায় লকডাউনে ব্যবসা বাণিজ্যের লোকসানের প্রভাব পড়তে পারে কোরবানির হাটে। এজন্য এবছর কোরবানির পশুর দরপতনের আশঙ্কা করছেন তারা। তাছাড়া বৈধ-অবৈধ উপায়ে ভারত থেকে যদি পশু আসে তাহলে নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়তে হবে স্থানীয় খামারিদের। দেশের বাইরে থেকে যাতে পশু না আসে সরকারের প্রতি সেই দাবি জানান তারা।
জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, এবছর ঈদুল আজহায় মৌলভীবাজারে ৭৩ হাজার ৩৫টি কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে। তারমধ্যে স্থানীয় ২ হাজার ৩৬৫টি খামারসহ ব্যাক্তি উদ্যোগে ৬৭ হাজার ৫২৯টি পশু কোরবানির জন্য মোটাতাজা করা হয়েছে। এরমধ্যে খামারীরা উৎপাদন করেছেন ৩২ হাজার ৫২৯টি আর খামারের বাইরে ব্যাক্তি উদ্যোগে করা হয়েছে ৩৫হাজার পশু। সংকট রয়েছে ৫হাজার ৫০৬টি পশুর। খামারী পর্যায়ে ৩২ হাজার ৫২৯টি কোরবানি পশুর মধ্যে গরুমহিষ ২২ হাজার ৫০১টি আর ভেড়া ছাগল ১০ হাজার ২৮টি।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, ডা. মো. আব্দুস ছামাদ জানান, স্থানীয় খামারীদের পশু দিয়ে জেলার শতভাগ চাহিদা মিটানো সম্ভব। যে ৫ হাজার ৫০৬টি পশুর ঘাটতি রয়েছে সেটিও স্থানীয়ভাবেই পূরণ সম্ভব। কারণ ব্যক্তি উদ্যোগে পশু উৎপাদনের যে হিসেব থাকে প্রকৃতভাবে তার চেয়ে সবসময়ই কিছুটা বেশি উৎপাদন হয়। তিনি আরো বলেন, সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে যাতে গবাদি পশু প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে। আর পশু বিক্রির জন্য অনলাইন বাজারকে আরো শক্তিশালী করা হবে এবং স্থায়ী ও মৌসুমী পশুর হাটের বিষয়ে সরকারি যে নির্দেশনা আসবে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে।