জমিতে নতুন ধানের মৌ-মৌ গন্ধে যেন মূখরিত মৌলভীবাজারের চারিপাশ ভড়ে। কেউ ধান কাটার কাজ করছেন। আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলতি আমন মৌসুমে আনুষ্ঠানিক ভাবে খামার যান্ত্রিকী করণের মাধ্যমে একই জমিতে রোপা আমন ধান রোপনের পর কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটার শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে যান্ত্রিক নির্ভর হলে শ্রমিক সংকট থাকবে না। যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে দেখা দেয় শ্রমিক সংকট। অনেকেই সময়তো সোনালী ফসল ধান ঘরে তুলতে পারেনা। এতে অনেক জমিতে ধান ঝরে গিয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থের পাশাপাশি হতাশায় ভূগতে থাকেন। রোপন ও কাটার কাজ যান্ত্রিক হওয়ায় কম খরচে কৃষকরা ফলন ভালো পাচ্ছেন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমেরু এলাকায় জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে ও পাতাকুঁড়ি এগ্রোর সহযোগীতায় খামার যান্ত্রিকী করণের আওতায় রোপা আমন ধানের চারা রোপন ও কর্তনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এ লক্ষে মাঠে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে এক আলোচনা করেন জেলা প্রশাসক।
✪ আরও পড়ুন: ফুলবাড়ীতে কীটনাশক পানে যুবকের মৃত্যু
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান, বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সুব্রত কুমার দত্ত, স্থানীয় কৃষি যান্ত্রিকী করণ খামার মালিক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীনসহ অন্যন্যরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপ-সহকারী কৃষি অফিসার নিরোজ কান্তি রায়, স্থানীয় কৃষক বাচ্চু মিয়া, রাজু আহমদ।
পরে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান পুষ্পমাল্যের সাজানো ফিতা কেটে আমন ধান কাটার উদ্বোধন করেন। শেষে তিনি যান্ত্রিক ভাবে উৎপাদিত মাঠের ফসল কম্বাইন হারভেস্টার চালিয়ে কর্তন করেন। খামার যান্ত্রিকী করণের উদ্যেক্তা সৈয়দ উমেদ আলী বলেন, এ বছর ১২৩ বিগা জমিতে হাইব্রিড ও ব্রি ৭৫ জাতের ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৮৩ বিগা জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা রোপন করেন এবং ওই জমিতে ধান কর্তন করছেন কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার যন্ত্র দিয়ে। ধান কাটা,মাড়াই ও ঝাড়াই এক সাথে হয়ে যায়।
যে কারনে শ্রমিক কম লাগে। এতে খরছ কমে যায়। শ্রমিক সঙ্কট প্রতি বছরই লেগে থাকে যেকারণে আমরা যন্ত্রের উপর পরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পরেছি। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার,পাওয়ার টিলার, শেলো পাম্পসহ সবকিছুই ডিজেলের উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সময়ে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা মনে করি ধানের মূল্য যদি আরেকটু বৃদ্ধি করা হয় তাহলে কৃষক উপকৃত হবে এবং কৃষকের আগ্রহ বাড়বে।
তিনি আরও জানান, হাইব্রিড ধান বিজে ফলন ভালো হয়, তবে প্রতি কেজি বিজ ক্রয়করতে হয় ৩‘শ টাকা থেকে ৪৩০ টাকা দিয়ে। বিএডিসি থেকে বিজ ক্রয় করলে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা প্রতি কেজি বিজের মূল্য। তিনি সরকারি ভাবে হাইব্রিড বিজ উৎপাদন ও কৃষক পর্যায়ে কমমূল্যে বিতরণ করলে উৎপাদন কয়েকগুন বেড়ে যাবে।
✪ আরও পড়ুন: বগুড়ায় ১৬ টাকার ওষুধ ৫২০ টাকায় বিক্রি!
স্থানীয় কৃষি যান্ত্রিকী করণ খামার মালিক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীন জানান, যান্ত্রিকী করণের কারণে খরচ কমে গেছে, জমিতে ফলন ভালো হচ্ছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনে কমবয়সী চারা রোপন করা যায়। এতে করে ফলনও ভালো হয়। আগে যে জমিতে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৬মন ধান পাওয়া যেত, ওই সব জমিতে ২২ থেকে ২৪ মন ধান এখন পাওয়া যাচ্ছে। আমরা যে জমিতে ধান কাটছি, সে জমিতেই মেশিন দিয়ে চারা রোপণ করেছি। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার যন্ত্র দিয়ে ধান কর্তন করছি, সেটি ব্যবহারে উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ জানান, এবছর বিভিন্ন জাতের ব্রি-ধান ও হাইব্রিড ধান কৃষকরা চাষাবাদ করেছেন। আমন ধান চাষে এ বছর অনুকুল পরিবেশ ও পোকা মাকড়ের আক্রমন কম থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে প্রতি বছর অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ বৃদ্ধি ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষীরা খুশি।
এ বছর জেলায় আমন ধানের চাষাবাদের জমির পরিমানের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১ লক্ষ ১ হাজার ৪ শত হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১ লক্ষ ১ হাজার ৬ শত হেক্টর পরিমাণ জমি। যার সম্বাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগ আশা করছে এবছর ৩ লক্ষ মেট্রিক টনের উপরে উৎপাদন হবে।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এক ইঞ্চি জমি যাতে খালি পরে না থাকে সে জন্য, কৃষি খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি ও প্রনোদণা দিচ্ছে সরকার। এতে করে কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ জাগছে। নবান্নের এই উৎসবে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে রোপা আমণ রোপণ এবং কর্তন অনুষ্ঠানে আমরা এসেছি। এই জমিতে একেবারে অমন রোপণ থেকে শুরু করে কর্তন পর্যন্ত কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের মাধ্যমে কর্তন হচ্ছে।
✪ আরও পড়ুন: নতুন প্রজাতির সাপের উদ্ভাবন
পুরো প্রক্রিয়াটির মাধ্যমেই কৃষি যান্ত্রিকীকরণের একটি উদাহরণ আমরা দেখেছি। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেমন শ্রম কমেছে, অর্থ ব্যয় যেমন কমেছে, উৎপাদন বেড়েছে। সব কিছু মিলিয়ে কৃষকরা লাভমান হচ্ছেন। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এখান থেকে মৌলভীবাজারের সকল কৃষকদেরকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি।
কৃষি বিভাগ জানায় আমন ধান চাষে এ বছর অনুকুল পরিবেশ ও পোকা মাকড়ের আক্রমন কম থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে প্রতি বছর অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।