দেশে মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে। মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ মানে কী আমরা সবাই কী জানি? হয়তো অনেকেই জানেন হয়তো অনেকেই জানেন না। মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ মানে হলো একজন ভোক্তা গত বছরের মার্চে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেত, এ বছরের মার্চে একই পণ্য কিনতে তাঁর খরচ হবে ১০৯ টাকা ৩৩ পয়সা।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে তা ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মার্চে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে খাদ্যপণ্যের ওপর। এ সময় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ হয়েছে। আগের মাসে যা ছিল ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর মার্চে তা কমে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে এসেছে।
✪ আরও পড়ুন: জাতিসংঘের সিএসডব্লিউ’র সদস্য হলো বাংলাদেশ
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর করা জরিপ থেকে জানা গেছে, মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের ৭৪ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার ধার করে চলছে। দেশের গ্রাম ও শহরের নিম্ন আয়ের পরিবারের ওপর করা এই জরিপে যেসব পরিবার অংশ নিয়েছে, তাদের ৯০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, অর্থনৈতিক চাপে তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে, মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮ শতাংশ পরিবার, ৭৭ শতাংশ পরিবার ডিম ও ৮১ শতাংশ পরিবার ভোজ্যতেল খাওয়া কমিয়েছে।
মূলত এই পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, দেশে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বাজার অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
এছাড়া বিবিএসের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছর আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল রেকর্ড ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে চলতি বছর মার্চ মাসে যা ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। রমজানের আগে যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি সেখানে আসন্ন ঈদুল ফিতরের কারণে এপ্রিলে এই হার আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিবিএসের প্রতিবেদন থেকে আরো জানা গেছে, মার্চে খাদ্য খাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। এ সময় মাছ, মাংস, সবজি, মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে এ সময়ে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মধ্যে বাড়িভাড়া, আসবাব, গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন ও শিক্ষাতে মূল্যস্ফীতির হার না বেড়ে উল্টো কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। মার্চে তা কমে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ হয়েছে।
✪ আরও পড়ুন: কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গরীবের এসি বাড়ি
সম্প্রতি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড.শামসুল আলম জানিয়েছেন, জ্বালানি তেলের দামের বৃদ্ধির ফলে আবারও মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। কারন হিসেবে সৌদি আরব ও রাশিয়া তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থাকবে। যদিও সরকার মনে করছে এবার প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশ হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৭ শতাংশের মধ্যে সীমিত থাকবে। তবে বিশ্বব্যাংক মনে করছে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।
✪ আরও পড়ুন: ঈদের আগে বোনাস দেওয়ার আহ্বান শ্রম প্রতিমন্ত্রীর
ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জ্বালানি তেল, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। এ চাপ চলতি বছরজুড়ে অব্যাহত থাকবে। তবে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য এডিবি আশাবাদের কথা জানিয়েছে। ওই অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে। আগামী অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে সাড়ে ৬ শতাংশ।
অন্যদিকে, গড় মূল্যস্ফীতি কমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে এ পরিস্থিতি নির্ভর করবে রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধের ওপর। যুদ্ধ বন্ধ হলে অর্থনীতি আরও বেশি গতিশীল হবে।
ডিবিএন/এসডিআর/ মোস্তাফিজ বাপ্পি