বুধবার (১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টা, করোনাভাইরাসের কারণে চারদিকে সুনসান নীরবতা। সড়কের আশপাশে কেউ নেই। হঠাৎ একটি ট্রাক ব্যাক গিয়ার দিয়ে এসে থামল বিল্লাহ ফার্মার সামনে। সবার মাথায় গামছা বাঁধা, মুখে পরা মাস্ক।
মুহূর্তেই দু’জন চাপাতি ও একজন রড নিয়ে ওষুধের দোকানে প্রবেশ করে। তখন ওষুধ কিনতে এসেছিলেন মো. আরমান নামের এক ক্রেতা। কিছু বোঝার আগেই আরমানকে চাপাতির উল্টাপাশ দিয়ে মারতে শুরু করে। ফার্মেসির ভেতরে ছিলেন মালিক নাহিদ বিল্লাহ ও ইউসিবিএল ব্যাংকের এটিএম বুথের সিকিউরিটি মো. সোহাগ। হঠাৎ এসেই কাস্টমারকে চাপাতি দিয়ে মারতে শুরু করলে কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি নাহিদ বিল্লাহ ও সোহাগ। একসময় আরমান, সোহাগ ও নাহিদকে মারতে মারতে দোকানের পেছনে নিয়ে যায়। এ সময় আরমানের পকেটের মানিব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। ফার্মেসিতে থাকা ল্যাপটপ নগদ টাকা নিয়ে দ্রুত চলে যায়। মাত্র ২ মিনিটের মধ্যেই ডাকাতি করে চলে যায় তারা।
এমন ঘটনা ঘটেছে রাজধানী মোহাম্মদপুরের কলেজগেট এলাকার বিল্লাহ ফার্মায়। এমনটিই দেখা যায় দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্রেতা মো. আরমান লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন সংবাদমাধ্যমের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি ওষুধ কেনার জন্য ফার্মেসিতে আসি। আসার মিনিট খানেকের মধ্যে তিন জন ফার্মেসিতে ঢুকে আমাকে চাপাতির উল্টাপাশ দিয়ে মারতে মারতে দোকানের পেছনে নিয়ে যায়। আমার পকেটে থাকা মানিব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এখনও আমার ভয়ে গা কাঁপছে।’
ইউসিবিএল এটিএম বুথের সিকিউরিটি মো. সোহাগ বলেন, ‘দোকান বন্ধ করবে নাহিদ স্যার। আমি খালি একটি পানির বোতল নিয়ে বের হব। এমন সময় তিনজন ফার্মেসিতে ঢোকে, দু’জনের হাতে চাপাতি একজনের হাতে রড ছিল। সবার মুখে মাস্ক পরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চাপাতি দিয়ে ক্রেতাকে মারতে থাকে। আমি বললাম কী হয়েছে ভাই থামেন। এ কথা বলতে বলতে আমাদের চাপাতির ভয় দেখিয়ে দোকানের পেছনে নিয়ে যায়। অন্য দু’জন ল্যাপটপ ও ক্যাশের টাকা নিয়ে নেয়। গ্লাসের নিচে দৃশ্যমান ১০০ টাকার নোট ছিল সেটা ও গ্লাস ভেঙে নিয়ে যায়।’
ফার্মেসির মালিক নাহিদ বিল্লাহ বলেন, ‘আমি বাসায় চলে যাব। দোকান ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করছি। এর মধ্যে একজন ওষুধ নিতে আসল। আমি ওষুধ দিব, এমন সময় তিনজন ফার্মেসিতে ঢুকে কাস্টমারকে চাপাতি দিয়ে মারতে শুরু করে। আর একজন আমার ল্যাপটপ নিয়ে নিল। কাস্টমারকে যখন মারছে, তখন আমি হাত উঁচু করে বললাম, কী হইছে মারছেন কেন। এ কথা বলতে বলতে আমাদের বলল, কথা বলবি না আর চাপাতি দিয়ে মারতে যাচ্ছে। এমন করতে করতে আমাদের দোকানের পেছনে নিয়ে গেল। ক্যাশে থাকা টাকা ও ল্যাপটপ নিয়ে গেল। আমরা দৌড়ে বের হলাম কিন্তু ততক্ষণে ট্রাক চলে গেছে। হোন্ডা নিয়ে শ্যামলী পুলিশ বক্স পর্যন্ত গেলাম পেলাম না। আমি মনে করেছিলাম, আমার মোবাইলও নিয়ে গেছে কিন্তু এসে দেখি মোবাইল টেবিলের নিচে পড়ে আছে। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ও র্যাব-২ এর একটি টহল দল আসে।’
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করবেন বলে জানায় নাহিদ।
জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমার জানা নেই। আমি জেনে আপনাকে জানাব।’
র্যাব-২ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা ঘটনাটি জানতে পেরেছি। ইতিমধ্যে সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করে কাজ শুরু করেছি।
এ বিষয়ে কথা হয় তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি জানতে পেরেছি। ফার্মেসির মালিককে মামলা করতে বলা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছুটি ৯ এপ্রিল তথা শুক্র ও শনিবার মিলিয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। লম্বা এ ছুটি করোনাভাইরাসের আতঙ্কে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে পাড়ি জমিয়েছেন। এতে এখন অনেকটাই ফাঁকা ঢাকা। সন্ধ্যার পরপরই ঢাকার রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়ে না। সুত্রঃ শীর্ষ।